২৩ অক্টোবর ট্রাইব্যুনালে যুক্তিতর্ক শেষ, চিফ প্রসিকিউটর ও অ্যাটর্নি জেনারেলের সমাপনী বক্তব্য উপস্থাপন
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক পুলিশপ্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার তারিখ আগামী ১৩ নভেম্বর নির্ধারণ করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) দুপুর সোয়া ১২টার দিকে ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদার এর নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ তারিখ ঘোষণা করেন।
প্রসিকিউশনের সমাপনী বক্তব্য
এদিন মামলায় প্রসিকিউশনের পক্ষে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ও অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান যুক্তি খণ্ডনের পর তাদের সমাপনী বক্তব্য উপস্থাপন করেন। প্রসিকিউশন যুক্তিতর্কে অভিযোগের সারমর্ম, সাক্ষীদের জবানবন্দি এবং প্রমাণনির্ভর তথ্য তুলে ধরে আসামিদের সর্বোচ্চ দণ্ড প্রার্থনা করেন।
প্রসিকিউশন পক্ষের আইনজীবী মিজানুল ইসলাম, গাজী এমএইচ তামিম, ফারুক আহাম্মদ, মঈনুল করিম ও সুলতান মাহমুদসহ আরও কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন।
আসামিপক্ষের যুক্তি ও দাবি; এর আগে বুধবার (২২ অক্টোবর) পর্যন্ত তিন দিন ধরে রাষ্ট্রনিযুক্ত (স্টেট ডিফেন্স) আইনজীবী মো. আমির হোসেন আসামিদের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। তিনি দাবি করেন, মামলার সাক্ষ্য ও প্রমাণ যথেষ্ট নয়, এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অভিযোগ আনা হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রসিকিউশনের অনেক সাক্ষ্যই “দ্ব্যর্থপূর্ণ ও পরস্পরবিরোধী”, বিশেষ করে রাজসাক্ষী চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, সাংবাদিক মাহমুদুর রহমান ও নাহিদ ইসলাম-এর সাক্ষ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি।
আসামিপক্ষের আইনজীবী যুক্তি দেন, ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে সংঘটিত বিভিন্ন ঘটনাকে “মানবতাবিরোধী অপরাধ” হিসেবে চিহ্নিত করা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী প্রশ্নবিদ্ধ।
সাক্ষ্যগ্রহণ ও তদন্ত প্রক্রিয়া; মামলাটিতে ৫৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা সম্পন্ন হয়েছে, যা মোট ২৮ কার্যদিবস ধরে চলে। এর মধ্যে তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীর-কে তিন দফায় জেরা করা হয়।
মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগের পৃষ্ঠাসংখ্যা প্রায় আট হাজার ৭৪৭, যেখানে দালিলিক প্রমাণ ও জব্দতালিকা অন্তর্ভুক্ত। সাক্ষী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয় ৮১ জনকে।
গত ১০ জুলাই শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করেন ট্রাইব্যুনাল।
পটভূমি ও অভিযোগের সারসংক্ষেপ; প্রসিকিউশনের অভিযোগ অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে দেশের বিভিন্ন স্থানে রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘন, বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম ও নির্যাতনের অভিযোগ উঠে। এই ঘটনাগুলোকেই মামলার মূল প্রেক্ষাপট হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
অভিযোগে বলা হয়, অভিযুক্তরা সরকারপ্রধান ও প্রশাসনিক দায়িত্বে থেকে এসব অপরাধ সংঘটনে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলেন।
রায়ের দিন ঘোষণার প্রেক্ষাপট; ২৩ অক্টোবরের শুনানিতে প্রসিকিউশন ও আসামিপক্ষ উভয়ের যুক্তিতর্ক শেষ হওয়ার পর ট্রাইব্যুনাল মামলাটি রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমাণ (CAV) রাখে। পরবর্তীতে ১৩ নভেম্বর রায় ঘোষণার দিন নির্ধারণ করা হয়।
মামলার রায় ঘোষণার মধ্য দিয়ে দীর্ঘ প্রায় ছয় মাসের শুনানি প্রক্রিয়ার সমাপ্তি ঘটবে বলে জানিয়েছেন ট্রাইব্যুনালের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
সাননিউজ/এও