অভিযোগ ওঠে ঝালকাঠির রাজাপুরে সোহাগ ক্লিনিকের ভুল চিকিৎসায় জমজ দুই নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় ক্লিনিক মালিকসহ দুইজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
বুধবার (১৫ অক্টোবর) সকালে জমজ নবজাতকের পিতা উপজেলার উত্তর বাঘরী গ্রামের মো. উজ্জ্বল খান বাদী হয়ে রাজাপুর থানায় এ মামলা করেন।
মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে সোহাগ ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা মো. সোহাগকে এবং দ্বিতীয় আসামি করা হয়েছে ক্লিনিকের চিকিৎসক ডা. ফরহানা আফরিন সারাহকে।
মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, বাদীর স্ত্রী নূপুর বেগম গর্ভাবস্থায় অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে রাজাপুরের সোহাগ ক্লিনিকে চিকিৎসা করানো হয়। প্রথমে ডা. এম.এইচ. নাঈম এবং পরে ডা. এম.ডি.এইচ. শরীফ ভূঁইয়া আল্ট্রাসনোগ্রাম করে ওষুধ দিয়ে বাড়ি পাঠান। রিপোর্টে গর্ভে একটি শিশুর কথা উল্লেখ করা হয়। তবে অবস্থার অবনতি হলে গত ৮ সেপ্টেম্বর দুপুরে স্ত্রীকে আবারও ওই ক্লিনিকে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. ফরহানা আফরিন সারাহ জানান, গর্ভে জমজ সন্তান রয়েছে এবং রোগীকে ভর্তি করে কয়েকটি ইনজেকশন দেন।
এর কিছুক্ষণ পর তীব্র ব্যথা শুরু হলে চিকিৎসক সঠিক চিকিৎসা না দিয়ে রোগীকে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন বলে অভিযোগ করেন উজ্জ্বল খান। সেখানে ভর্তি করার পর সিজার করে জমজ সন্তানের জন্ম হয়। কিন্তু নবজাতক দুইজনই গুরুতর অসুস্থ থাকায় আইসিইউতে ভর্তি করা হয়।
প্রথম সন্তান ৯ সেপ্টেম্বর সকালে এবং দ্বিতীয় সন্তান ১৪ সেপ্টেম্বর রাতে মারা যায়।
বাদীর অভিযোগ, সোহাগ ক্লিনিকের প্রতিষ্ঠাতা মো. সোহাগ অদক্ষ চিকিৎসক নিয়োগ ও পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি ছাড়াই ক্লিনিক পরিচালনা করছেন। ভুল চিকিৎসার কারণেই তার দুই সন্তান মারা গেছে। রাজাপুর উপজেলায় অনেক বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি ও দক্ষ চিকিৎসক ছাড়াই চিকিৎসা কার্যক্রম চালাচ্ছে। তিনি প্রশাসনের কঠোর নজরদারির দাবি জানান।
তিনি আরও বলেন, “বিষয়টি নিয়ে ক্লিনিক মালিক সোহাগের কাছে গেলে তিনি অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং হুমকি দেন যে, এ বিষয়ে বেশি ঘাঁটাঘাঁটি করলে খুন-জখম করা হবে।”এ ছাড়াও, তার কাছে টাকা চাওয়া হয়েছে বলে ওসিসহ বিভিন্ন মাধ্যমে মিথ্যা অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।
তিনি জানান, ঝালকাঠিতে দুদকের গণশুনানিতে অভিযোগ করার পর দুদক কমিশনার (তদন্ত) মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবর আজিজীর নির্দেশে ৩৬ দিন পর মামলা হয়েছে। তবে তিনি বলেন, “সঠিক বিচার পাব কি না, আল্লাহ ই ভালো জানেন।”
বুধবার বিকেলেও পুলিশ ক্লিনিকে গিয়ে তদন্ত ও সাক্ষ্যগ্রহণ করে। তবে মামলা হলেও পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তার না করায় ক্লিনিক মালিক সোহাগ বিভিন্ন লোকজন দিয়ে বাদীকে মামলা তুলে নিতে হুমকি দিচ্ছেন ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন বলে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেছেন উজ্জ্বল খান।
সোহাগ ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা আহসান হাবিব সোহাগ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “যারা মামলা করেছে তারা টাকা চেয়েছিল। আমি বলেছিলাম, কাল সকাল ১১টায় আসেন—দেখি ডাক্তার কী বলেন, কোনো ভুল হয়েছে কি না। চিকিৎসায় কোনো ভুল হয়নি। ডাক্তার রোগী দেখার আধা ঘণ্টার মধ্যে বরিশালে পাঠিয়ে দেন। সিজার হয়েছে সন্ধ্যা ৬টার পর বরিশালে। তাহলে মালিকের নামে মামলা হবে কেন?”
ঝালকাঠির সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (রাজাপুর সার্কেল) মো. শাহ্ আলম বলেন, “মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তদন্ত চলছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাগজপত্র সংগ্রহ করা হচ্ছে। আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সাননিউজ/আরপি