ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের মধ্যেই গাজায় ব্যাপক বোমাবর্ষণের কথা প্রকাশ্যে স্বীকার করেছেন। ইসরায়েলি পার্লামেন্ট নেসেটের শীতকালীন অধিবেশনে বক্তৃতা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, যুদ্ধবিরতির সময় গাজায় ১৫৩ টন বোমা ফেলেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
মঙ্গলবার এ তথ্য প্রকাশ করেছে তুরস্কের আনাদোলু এজেন্সি ও যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য মিডল ইস্ট আই। নেতানিয়াহুর এই বক্তব্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, তাঁর এই স্বীকারোক্তি মূলত গাজার যুদ্ধবিরতি চুক্তির সুস্পষ্ট লঙ্ঘনের প্রমাণ।
অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাস ও ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ২০ দফা যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সই করে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ওই চুক্তিকে তখন অনেকেই শান্তির নতুন সূচনা হিসেবে দেখেছিলেন। কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনাবলি ইঙ্গিত দিচ্ছে, আগের মতোই এই যুদ্ধবিরতিও ভঙ্গুর হয়ে পড়ছে।
নেসেট অধিবেশনে নেতানিয়াহু বলেন, “যুদ্ধবিরতির সময় আমাদের দুই সেনা নিহত হয়েছে। জবাবে আমরা ১৫৩ টন বোমা ফেলেছি এবং গাজার কয়েকটি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছি।” বক্তব্যের সময় বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যরা তাঁকে একাধিকবার বাধা দেন এবং গাজার যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করার জন্য সরকারের সমালোচনা করেন।
গাজার হামাস-নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যম জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি শুরুর পর এক সপ্তাহের মধ্যেই অন্তত ৮০ বার চুক্তি ভঙ্গ করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। এসব হামলায় ৯৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ৪৪ জনের মৃত্যু হয়েছে শুধু রবিবারের হামলায়, যেদিন ১৫৩ টন বোমা ফেলা হয়। আরও অন্তত ২৩০ জন আহত হয়েছেন।
অন্যদিকে, তেল আবিবের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, হামাস রাফায় ইসরায়েলি বাহিনীর ওপর হামলা চালিয়ে দুই সেনাকে হত্যা করেছে। তবে হামাস এসব অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়েছে, তারা যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবে এবং ইসরায়েলের আগ্রাসনই সংঘাত বাড়াচ্ছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক হামলার পর থেকে গাজায় টানা দুই বছর ধরে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে ইসরায়েল। জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর হিসাব অনুযায়ী, এ পর্যন্ত অন্তত ৬৮ হাজার ২০০ ফিলিস্তিনি নিহত এবং এক লাখ ৭০ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। গাজা উপত্যকার বেশিরভাগ এলাকা এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
সাননিউজ/এও