গাজা উপত্যকা, ২১ অক্টোবর —
ইসরায়েল থেকে ফেরত পাওয়া কমপক্ষে ১৩৫ জন ফিলিস্তিনির বিকৃত মরদেহ আবারও নাড়া দিয়েছে মানবতার বিবেককে। গাজা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এসব দেহ নেগেভ মরুভূমির কুখ্যাত ‘সদে তেইমান’ আটককেন্দ্র থেকে এসেছে—যে স্থানটি দীর্ঘদিন ধরেই ফিলিস্তিনি বন্দিদের ওপর অমানবিক নির্যাতনের প্রতীক হিসেবে পরিচিত।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক ডা. মুনির আল-বুর্শ জানান, ফেরত আসা প্রতিটি মরদেহের ব্যাগে হিব্রু ভাষায় লেখা ট্যাগে স্পষ্ট উল্লেখ ছিল—দেহগুলো সদে তেইমান কারাগারেই সংরক্ষিত ছিল। কিছু ক্ষেত্রে ডিএনএ পরীক্ষার উল্লেখও ছিল ওই ট্যাগে।
তিনি বলেন,
“এগুলো এমন দেহ, যেগুলো দেখে বোঝা যায়, বন্দিদের উপর অকথ্য নির্যাতন চালানো হয়েছে। কিছু দেহের অঙ্গ বিকৃত, কিছুতে পচন ধরা। স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে, তারা দীর্ঘদিন শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।”
দ্য গার্ডিয়ান-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সদে তেইমান আটককেন্দ্রে বন্দিদের চোখ বেঁধে, হাতকড়া পরিয়ে, হাসপাতালের খাটে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হতো। অনেককে ঘন্টার পর ঘন্টা বা দিনের পর দিন ডায়াপার পরিয়ে রাখা হতো। এসব নির্মমতার ছবি ও সাক্ষ্য প্রকাশিত হওয়ার পরেও কোনো আন্তর্জাতিক তদন্ত এখনো সম্পন্ন হয়নি।
গত বছর ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এই কেন্দ্রে আটক ৩৬ বন্দির মৃত্যুর ঘটনার তদন্ত শুরু করে, কিন্তু তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়নি।
ফিলিস্তিনি মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, সদে তেইমান “গুয়ানতানামোর চেয়েও ভয়ংকর এক কারাগার”, যেখানে বন্দিদের চিকিৎসা, খাদ্য কিংবা মৌলিক মানবাধিকারের কোনো নিশ্চয়তা নেই।
এদিকে গাজায় চলমান মার্কিন-মধ্যস্থ যুদ্ধবিরতির চুক্তির অংশ হিসেবে হামাস সম্প্রতি কিছু ইসরায়েলি জিম্মির দেহ হস্তান্তর করেছে। এর জবাবে ইসরায়েলও ফেরত দিচ্ছে ৭ অক্টোবর ২০২৩-এর পর নিহত ফিলিস্তিনিদের মরদেহ। এখন পর্যন্ত প্রায় ১৫০ জনের দেহ ফেরত এসেছে, যাদের অধিকাংশের পরিচয় এখনো নিশ্চিত করা যায়নি।
ডা. বুর্শের ভাষায়,
“এই দেহগুলো কেবল মৃত ফিলিস্তিনিদের নয়, এগুলো একেকটি প্রমাণ—মানবতার বিরুদ্ধে চলমান অপরাধের সাক্ষ্য।”
গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবি জানিয়েছে, যেন সদে তেইমানসহ সব আটককেন্দ্রে সংঘটিত নির্যাতনের প্রকৃত চিত্র বিশ্ববাসীর সামনে আসে।
সাননিউজ/এও