প্রখ্যাত চিত্রনায়ক সালমান শাহকে পূর্বপরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে— এমন অভিযোগে তার স্ত্রী সামীরা হকসহ ১১ জনের নামে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) রাজধানীর রমনা থানায় মামলাটি দায়ের করেন সালমান শাহের মামা মোহাম্মদ আলমগীর। মামলাটি দণ্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারায় দায়ের করা হয়েছে।
মামলার আসামিদের মধ্যে রয়েছেন সালমান শাহের স্ত্রী সামীরা হক, শিল্পপতি ও সাবেক চলচ্চিত্র প্রযোজক আজিজ মোহাম্মদ ভাই, লতিফা হক লুছি, খলনায়ক ডন, ডেবিট, জাভেদ, ফারুক, মে-ফেয়ার বিউটি সেন্টারের রুবি, আব্দুস ছাত্তার, সাজু এবং রেজভি আহমেদ ফরহাদ। এছাড়া মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনকেও আসামি করা হয়েছে।
১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সালমান শাহের মৃত্যুর পর রমনা থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছিল। তবে গত ২০ অক্টোবর ঢাকার ষষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. জান্নাতুল ফেরদৌস ইবনে হক বাদীপক্ষের করা রিভিশন মঞ্জুর করে মামলাটি হত্যা মামলা হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন। এর পরদিন, ২১ অক্টোবর, সালমান শাহের মামা মোহাম্মদ আলমগীর ওই নির্দেশের আলোকে নতুন করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সকালে সালমান শাহের মা-বাবা, মামা-মামী ও ছোট ভাই নিউ ইস্কাটনের বাসায় যান। তখন বলা হয়, সালমান ঘুমাচ্ছেন। কিছুক্ষণ পর প্রডাকশন ম্যানেজার সেলিম ফোনে জানান, সালমানের কিছু হয়েছে। তারা দ্রুত ফিরে গিয়ে দেখেন, সালমান শয়নকক্ষে নিথর পড়ে আছেন এবং কয়েকজন বহিরাগত নারী তার হাত-পায়ে তেল মালিশ করছেন। পাশের কক্ষে বসে ছিলেন সামীরার আত্মীয়া রুবি।
সালমানের মা চিৎকার করে তাকে হাসপাতালে নিতে বলেন। পথে পরিবারের সদস্যরা সালমানের গলায় দড়ির দাগ এবং শরীরে নীলচে দাগ দেখতে পান। পরে তাকে হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক জানান, সালমান অনেক আগেই মারা গেছেন।
মোহাম্মদ আলমগীর অভিযোগে আরও উল্লেখ করেন, সালমানের বাবা কমর উদ্দীন আহমদ চৌধুরী মৃত্যুর আগে ১৯৯৭ সালের ২৪ জুলাই চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি দরখাস্ত দাখিল করেছিলেন, যেখানে তিনি অপমৃত্যুর মামলাটি হত্যা মামলা হিসেবে গ্রহণ এবং সিআইডির মাধ্যমে তদন্তের আবেদন জানান। বাবার মৃত্যুর পর তিনিই তার বোনের পক্ষ থেকে মামলাটি পরিচালনা করছেন।
অভিযোগে বলা হয়, মামলার এজাহারনামীয় ও অজ্ঞাতনামা আসামিরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে পরস্পর যোগসাজশে সালমান শাহকে হত্যা করেছেন। যদি অভিযুক্তদের মধ্যে কেউ মৃত্যুবরণ করে থাকেন, তবে প্রমাণ সাপেক্ষে তারা মামলার দায় থেকে অব্যাহতি পাবেন।
ঘটনার পটভূমি: বাংলা চলচ্চিত্রের সুপারস্টার সালমান শাহ নব্বইয়ের দশকে অল্প সময়েই অসাধারণ জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। মাত্র চার বছরের চলচ্চিত্র জীবনে তিনি ২৭টির বেশি সিনেমায় অভিনয় করেন, যার বেশিরভাগই ব্যবসাসফল হয়। ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর তার মৃত্যুর খবরে পুরো দেশজুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে। প্রথমে ঘটনাটিকে আত্মহত্যা বলা হলেও, পরিবার ও ভক্তরা শুরু থেকেই এটি হত্যা বলে দাবি করে আসছিলেন। এরপর থেকে বিভিন্ন সময় মামলাটি পুনঃতদন্ত ও পুনর্বিচারের দাবি ওঠে। সর্বশেষ আদালতের নির্দেশে এখন হত্যার অভিযোগে নতুন করে মামলা দায়েরের মধ্য দিয়ে প্রায় তিন দশক পর ঘটনাটি নতুন মোড় নিয়েছে।
সাননিউজ/এও