ঐতিহ্য ও কৃষ্টি

ফুরিয়ে যাচ্ছে দেশি মাছের ভান্ডার

সান নিউজ ডেস্ক : মাছে ভাতে বাঙালি প্রবাদটি শুধু কথায় নয় বাস্তবেও শতভাগ পরিলক্ষিত হয়। সোজা কথা একদিন খাবারের সঙ্গে মাছ না থাকলে আমাদের পেটই অপূর্ণ থাকে। তবে শুধু নামে মাছ হলেই ভোজনরসিক বাঙালি পরিতৃপ্ত নয়। চাই পছন্দসই মাছ। আর পছন্দের তালিকায় শীর্ষে আছে দেশীয় প্রজাতির ছোট মাছ।

নরসিংদীর বেলাব উপজেলা মানুষদের এক সময়ের ঐতিহ্যও মাছ নিয়ে শ্বশুরবাড়ি, মামারবাড়ি, মেয়েরবাড়ি বেড়ানো ও বাহারি ছোট মাছের তরকারি দিয়ে অতিথি আপ্যায়ণ। আজ সেই প্রথার বিলুপ্তি ঘটেছে, ঐতিহ্যে ভাটা পড়েছে। এখন আর সেই ছোট মাছ নেই, নেই আগের মতো খাল, বিল, ডোবা, নালা। তাই বিকেলে দল বেঁধে বড়শি দিয়ে, ঠেলা জাল দিয়ে মাছ ধরার সেই মনোমুগ্ধকর দৃশ্য এখন অদৃশ্য হয়ে পড়েছে। এক সময় সুস্বাদু মাছের নামমাত্রই আড়িয়াল খাঁ নদীর বিভিন্ন মাছের নাম আসতো সবার আগে, যা এখন অতীত।

নরসিংদীর বেলাব উপজেলার আটটি ইউপির অসংখ্য খাল-বিলে ব্যাপক মাছ পাওয়া যেতো। সময় পেলেই ছেলে-বুড়ো, তরুণ-যুবকদের নদী, বিল, খাল, দীঘি, জলাশয়, খাল, নালার তীরে বড়শি দিয়ে মাছ ধরার প্রতিযোগিতা শুরু হতো। খালি হাতে ফেরেনি কেউ। কই, শিং, মাগুর, ট্যাংরা, পুঁটি, লাটিতে পাত্র ভরে নিয়ে আসতো তারা। এখানে প্রতিটি জলাশয় ছিল সুস্বাদু ছোট্ট প্রজাতির মাছের অফুরন্ত ভান্ডার। সুস্বাদু এই দেশীয় মাছের ভান্ডার দিন দিন ফুরিয়ে যাচ্ছে।

অথচ খাল-বিলে ভরা বেলাব উপজেলায় এক সময় দেশীয় মাছের ভান্ডার ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে কারেন্ট জাল, ভেসাল (ভের) জালসহ অন্যান্য অবৈধ উপায়ে দেশীয় মাছ ব্যাপক নিধন, এদের বংশ বৃদ্ধি ব্যাহত করে এই প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেয়া প্রজাতির মাছগুলো ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন। আর এ কারণে বেলাব বাজারসহ আশেপাশের বাজার গুলোতে দেশীয় মাছের উপস্থিতি দিন দিন কমে যাচ্ছে।

দেশীয় মাছের স্থলে এখন পুকুরে বা ঘেরে চাষ করা স্বাদ ও গুণহীন বিভিন্ন মাছে বাজার সয়লাব। হারিয়ে যেতে বসেছে কই, শিং, সরপুটি, বোয়ালসহ নানা জাতীয় দেশীয় মাছ। এখনো উপজেলাতে রয়েছে অসংখ্য খাল, বিল ও পুকুর। যেখানে প্রাকৃতিক ভাবেই জন্ম হতো দেশীয় মাছের। সেখানে এখন কৃত্রিম উপায়ে বাণিজ্যিক মাছ চাষ করছে। জেলেরা বিগত কয়েক বছর থেকেই দেশীয় মাছ তেমন একটা পাচ্ছেন না।

জেলে সজল দাস জানান, দিন-রাত ১০ কেজি মাছও ধরতে পারিনি তিনজন মিলে। বিল, নদী, খাল সবগুলো থেকেই ধরেছি এ সামান্য পরিমাণ মাছ।

বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ুর পরিবর্তন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ফসলের ক্ষেতে দেশীয় অর্ধশত প্রজাতির ক্ষতিকর কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের যথেষ্ট ব্যবহারের ফলে দেশীয় মাছের অস্তিত্ব বিলীন হচ্ছে। সুস্বাদু দেশীয় মাছ এখন আর তেমন মিলছে না। বাজারে পাঙ্গাস আর তেলাপিয়া মাছ না থাকলে উপজেলাবাসীর আমিষের চাহিদা মিটানো অসম্ভব হতো। বর্তমানে দেশীয় মাছের চরম সংকট আর যা পাওয়া যায় তার অগ্নিমূল্যের কারণে গরিব ও মধ্যবিত্তদের স্বপ্নের মাছ হয়ে গেছে এগুলো। এসব এখন ৮০ শতাংশ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে।

মৎস্য বিজ্ঞানীদের মতে, কয়েক বছর আগেও অসংখ্য প্রজাতির দেশীয় মাছ ছিল। কিন্তু অধুনা মনুষ্যসৃষ্ট নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে এসব মাছের অনেক প্রজাতি এখন চোখে পড়ে না।

তাছাড়া বর্ষা মৌসুমের সময় নদী-খাল-বিল থেকে কারেন্ট জালের মাধ্যমে ব্যাপকহারে ডিমওয়ালা মাছ ধরার কারণে দেশীয় মিঠা পানির বিভিন্ন প্রজাতির মাছের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাচ্ছে। কালের গর্ভে মাছে-ভাতে বাঙালির যে ঐতিহ্য ছিল তা আজ হারিয়ে যেতে বসেছে।

সেই শোল, টাকি, কৈ, গজাল, টেংরা, চিতল, শিং, খয়রা, বাটা, পাইশ্যা, কালীবাউস, বাইল্যা, কাজলি, সরপুটি, পাবদা, খৈলশা, ডগরি, জাবা, ভোলা, বাগাড়, বাঁশপাতা, ভাঙ্গান, পুঁটি, সরপুঁটি, গলদা ও ছোট চিংড়িসহ অর্ধশত প্রজাতির মাছ এখন বিলুপ্তির পথে। এ সকল মাছ স্বাদে ও পুষ্টি গুণে ছিল ভরপুর। জেলেরা সারা বছর মাছ শিকার করে নিজ পরিবারের চাহিদাপূরণসহ জীবিকা নির্বাহ করতো।

শুষ্ক মৌসুমে খাল বিলের পানি কমে গেলে চলতো মাছ ধরার মহোৎসব। এখন এই মাছ ধরার উৎসবেও ভাটা পড়েছে। দলবেঁধে পল বা অন্যান্য মৎস্য শিকার যন্ত্র নিয়ে গান গেয়ে বা হৈ-হুল্লোড় করে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ধরার সেই প্রথাও বিলুপ্তির পথে।

৯০ দশকের আগের ঐতিহ্য ছিল বোনের বাড়িতে, মেয়ের জামাই বাড়িতে, শ্বশুরবাড়িতে কলসি ভরে নদী, খাল, বিলের কই, শিং, মাগুর মাছ পাঠানো কিন্তু আজ সেইদিন গুলো এখন আর চোখে পড়ে না। চিরচেনা রুপটিও আজ অচেনা মনে হচ্ছে।

সান নিউজ/এসএম

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

দুর্ব্যবহারের কারণে এনসিপির সংবাদ সম্মেলন বর্জন

রাজধানী ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের সঙ্গে দুর্ব্য...

ঘূর্ণিঝড় নিয়ে যা জানাল আবহাওয়া অধিদপ্তর

আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি...

ফিলিস্তিনের জলসীমায় ইসরায়েলের কোনো কর্তৃত্ব নেই

গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার ওপর ইসরায়েলের 'আক্রমণ ও আগ্রাসনের' নিন্দা জা...

বিশ্বের শীর্ষ ধনী এখন ইলন মাস্ক, মোট সম্পদ ৫০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়ালো

মার্কিন প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ও বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ক ইতিহাসে প্রথম ব্যক্...

লুটপাটের ভিডিও করায় সাংবাদিককে হেনস্তা 

লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য নুর উদ্দিন চৌধ...

শাপলা নয় এনসিপিকে বালতি-বেগুনসহ ৫০ প্রতীকের অপশন

শাপলা প্রতীক নয় বরং বেগুন, বালতিসহ ৫০টি প্রতীক থেকে জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এন...

২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আরও ২ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ৩৯৬

ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ২৪ ঘণ্টায় আরও দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর এইডস ম...

আ. লীগের ঘাপটি মেরে থাকা অনুচরেরা এখনো তৎপর

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাজ...

লুটপাটের ভিডিও করায় সাংবাদিককে হেনস্তা 

লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য নুর উদ্দিন চৌধ...

গাজাগামী ত্রাণবাহী জাহাজ আটক, নিরাপত্তার দাবি জামায়াতের

গাজামুখী ত্রাণবাহী জাহাজ আটক করার ঘটনায় ইসরায়েলের ন্যাক্কারজনক ভূমিকার তীব্র...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা