আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গণহত্যার মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন। তারা জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণহত্যার দায়ে মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন।
রায় প্রকাশের পর ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, “এই রায়ে জুলাই বিপ্লবের শহীদরা ন্যায়বিচার পেয়েছেন, রাষ্ট্র ন্যায়বিচার পেয়েছে। শহীদরা ন্যায়বিচার পেয়েছেন। দেশ ন্যায়বিচার পেয়েছে। প্রসিকিউশন পক্ষ ন্যায়বিচার পেয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “সেই ন্যায়বিচারেই মানদণ্ড হিসেবে এই মামলায় দুই আসামিকে সর্বোচ্চ শাস্তি — মৃত্যুদণ্ড — দেওয়া হয়েছে।”
সোমবার (১৭ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করেছে। একই সঙ্গে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের অপরাধও প্রমাণিত হয়েছে। শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যুদণ্ডের সাজা দিয়ে রায় ঘোষণা করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। অপরদিকে রাজসাক্ষী পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুনকে ৫ বছর কারাদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করা হয়।
এর আগে গত ১৩ নভেম্বর এই মামলার রায় ঘোষণার জন্য ১৭ নভেম্বর দিনটি নির্ধারণ করেন ট্রাইব্যুনাল।
এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম, গাজী এমএইচ তামিম, ফারুক আহাম্মদসহ আরও অনেকে।
গত ২৩ অক্টোবর সমাপনী বক্তব্যে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত প্রধানমন্ত্রীসহ হেভিওয়েট নেতাদের বিচার উদাহরণ হিসেবে উপস্থাপন করেন। তিনি শেখ হাসিনা ও কামালের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন।
পরে আসামিপক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবীর বক্তব্যের জবাব দেন চিফ প্রসিকিউটর। এরপর তাদের বক্তব্যের পাল্টা উত্তর উপস্থাপন করেন স্টেট ডিফেন্স আইনজীবী আমির হোসেন।
এ মামলায় সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনও আসামি ছিলেন। তবে তিনি রাজসাক্ষী হয়ে ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দি দেওয়ায় তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত ট্রাইব্যুনালের ওপর ছেড়ে দেয় প্রসিকিউশন। মামুনের আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ তার খালাস (অ্যাকুইটাল) দাবি করেছেন।
মামলায় মোট ৮৪ জন সাক্ষীর মধ্যে ৫৪ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। চলতি বছরের ৩ আগস্ট সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। প্রথম সাক্ষী হিসেবে খোকন চন্দ্র বর্মণ ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের বীভৎসতার চিত্র তুলে ধরেন।
৮ অক্টোবর তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীরের জেরা শেষে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। এরপর ২৩ অক্টোবর প্রসিকিউশন ও স্টেট ডিফেন্সের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন সম্পন্ন হয়।
প্রসিকিউশন তিন আসামির বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনে—
১) উসকানি
২) মারণাস্ত্র ব্যবহার
৩) আবু সাঈদ হত্যা
৪) চানখারপুলে হত্যা
৫) আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানো
মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগের মোট পৃষ্ঠা সংখ্যা ৮,৭৪৭। এর মধ্যে—
তথ্যসূত্র: ২,০১৮ পৃষ্ঠা, জব্দতালিকা ও দালিলিক প্রমাণাদি: ৪,০০৫ পৃষ্ঠা, শহীদদের তালিকার বিবরণ: ২,৭২৪ পৃষ্ঠা, ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা চলতি বছরের ১২ মে চিফ প্রসিকিউটরের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়।
সাননিউজ/আরপি