২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর—দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জীবনে এক বিভীষিকাময় রাত। ভয়াল ঘূর্ণিঝড় সিডর মাত্র কয়েক ঘণ্টায় মৃত্যুপুরীতে পরিণত করেছিল বাগেরহাট, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা ও ঝালকাঠিসহ উপকূলের বিস্তীর্ণ এলাকা।
এখনও সেই রাতের স্মৃতি মনে পড়লে আঁতকে ওঠেন বেঁচে থাকা মানুষগুলো। পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্র নির্মিত না হওয়ায় আতঙ্কে রয়েছে উপকূলীয় এলাকার কয়েক লাখ মানুষ।
সিডরের পর বহু পরিবার আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেনি। উপকূলবাসীর ইতিহাসে বিভীষিকাময় একটি দিন এটি। এই দিনটি দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের কাছে এখনও এক দুঃস্বপ্ন। ভয়াল ঘূর্ণিঝড় সিডরের আঘাতে সেদিন উপকূলীয় এলাকা দেখেছিল ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ। শতাব্দীর অন্যতম ভয়াবহ ওই ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণ হারিয়েছিল হাজারো মানুষ। নিখোঁজ হয়েছিল আরও সহস্রাধিক।
রাত তখন প্রায় দশটা। হঠাৎ ঝড়ের গর্জন, সাগর উত্তাল, আর মুহূর্তেই মৃত্যু নেমে আসে দক্ষিণ উপকূলজুড়ে। এদিন বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলাগুলোতে আঘাত হানে ভয়ানক ঘূর্ণিঝড় সিডর। আঘাতের সময় সিডরের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২৬০ কিলোমিটার। তবে এ সময় দমকা হাওয়ার বেগ উঠছিল ঘণ্টায় ৩০৫ কিলোমিটার পর্যন্ত। সিডরের প্রভাবে উপকূলে ১৫ থেকে ২০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয়।
প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ‘সিডর’ সে রাতে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছিল পুরো বাগেরহাট, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা ও ঝালকাঠির বিস্তীর্ণ এলাকা। ১৮ বছর পেরিয়ে গেলেও সেই ক্ষত আজও শুকোয়নি উপকূলের মানুষের মনে, জীবনে ও জমিনে।
স্মরণকালের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ‘সিডর’। দানবরূপী এ ঝড়–জলোচ্ছ্বাসে মোরেলগঞ্জ–শরণখোলাতেই মারা যায় ২ হাজারেরও বেশি মানুষ। বিধ্বস্ত হয় অসংখ্য গাছপালা, ঘরবাড়ি। টেকসই ভেড়িবাঁধ না থাকায় সেদিন জলোচ্ছ্বাসের তোড়ে মুহূর্তের মধ্যে মৃত্যুপুরী আর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় মোরেলগঞ্জ–শরণখোলা।
সিডরের পর স্বজন আর সহায়–সম্বলহারা মানুষের একটাই দাবি ছিল—‘আমরা ত্রাণ চাই না, টেকসই ভেড়িবাঁধ চাই।’ এই দাবিতে কয়েক বছর ধরে চলে আন্দোলন। পরবর্তীতে ২০১৬ সালে এসে বিশ্বব্যাংকের ঋণ সহায়তায় প্রায় ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে শুরু হয় টেকসই ভেড়িবাঁধের কাজ। বলেশ্বর নদের তীররক্ষায় প্রায় ২০ কিলোমিটারসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩৫/১ পোল্ডারের মোট ৬২ কিলোমিটার বাঁধের কাজ শেষ হয় ২০২৩ সালের ১৪ ডিসেম্বর। উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্পের (সিইআইপি–১) মাধ্যমে সিএইচডব্লিউই নামে চীনা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এই কাজ বাস্তবায়ন করে। কিন্তু নদী শাসনের ব্যবস্থা না করে বাঁধ নির্মাণ এবং কাজে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়ম হওয়ায় হস্তান্তরের পর বছর যেতে না যেতেই সেই বাঁধে ভয়াবহ ভাঙন শুরু হয়েছে।
ইতিমধ্যে বলেশ্বর নদের তীরে সাউথখালী ইউনিয়নের বগী থেকে মোরেলগঞ্জ সীমানার সন্ন্যাসীর ফাঁসিয়াতলা পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে ৯ কিলোমিটার মূল বাঁধসহ সিসি ব্লক ধসে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এমন ভয়াবহ ভাঙন দেখে মোরেলগঞ্জ–শরণখোলাবাসীর আক্ষেপ—সিডরের ১৮ বছর পর এসেও বাঁধ নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে হচ্ছে। আতঙ্কে দিন কাটছে বলেশ্বর নদের তীরের বাসিন্দাদের।
নদীতীরবর্তী গাবতলা গ্রামের বাসিন্দা মিজান হাওলাদার, দক্ষিণ সাউথখালী গ্রামের আলমগীর হোসেন, জাহাঙ্গীর খান, উত্তর সাউথখালী গ্রামের আনোয়ার হাওলাদার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, টেকসই ভেড়িবাঁধ ছিল না বলে সিডরে আমরা স্বজন হারিয়েছি। ঘরবাড়ি সব ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। আমাদের জীবন ও সম্পদের বিনিময়ে একটি টেকসই ও উঁচু ভেড়িবাঁধ চেয়েছিলাম। উঁচু বাঁধ হয়েছে ঠিকই, কিন্তু তা টেকসই হয়নি। নদী শাসন না করে বাঁধ নির্মাণ করায় বছর না যেতেই ভাঙন শুরু হয়েছে। দ্রুত নদী শাসনের ব্যবস্থা করা না হলে দুই–তিন বছরের মধ্যেই বাঁধ ভেঙে বিলীন হয়ে যাবে।
ভাঙনকবলিত সাউথখালী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির আনোয়ার হোসেন পঞ্চাত্তর বলেন, নদী শাসন ছাড়া টেকসই বাঁধ হওয়া সম্ভব নয়। তৎকালীন সরকার ও বিশ্বব্যাংক কর্তৃপক্ষ বাঁধ নির্মাণে নদী শাসনের ব্যবস্থা না রেখে অদূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছে। ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে এখানে। মাটির বদলে নদীর বালু ব্যবহার করা হয়েছে। এতে শুধু বাঁধ উঁচুই হয়েছে, কিন্তু টেকসই হয়নি। দ্রুত নদী শাসন না করলে এটি কোনোভাবে টিকবে না। বর্তমান সরকারের কাছে দুর্নীতি তদন্ত ও নদী শাসন করে বাঁধ রক্ষার দাবি জানান এই বিএনপি নেতা।
নদী শাসন এবং ধসে যাওয়া বাঁধ ও সিসি ব্লক মেরামতের ব্যাপারে জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হান মোহাম্মদ আল বিরুনী বলেন, বলেশ্বর নদের তীররক্ষায় বাঁধের ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ সম্পূর্ণ এলাকার নদী শাসন করতে হলে কমপক্ষে ২০০ কোটি টাকার প্রয়োজন। আপাতত জাইকার অর্থায়নে স্বল্প পরিসরে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পটি পাস হলে চলতি মাসের শেষের দিকে কাজ শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
১৮ বছর পেরিয়ে গেলেও সেই স্মৃতি আজও ভুলতে পারেনি দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ। সহায়–সম্বল ও স্বজন হারানো মানুষগুলো ফিরে যেতে পারেনি তাদের স্বাভাবিক জীবনে। একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই আর দুবেলা দুমুঠো খাবারের জন্য আজও নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।
সিডরের ছোবলে দক্ষিণের উপকূলীয় জেলাগুলো পরিণত হয়েছিল মৃত্যুপুরীতে। প্রিয়জনকে হারিয়ে এখনো এই দিন আসলে বুকফাটা কান্নায় ভেঙে পড়েন অনেকেই। সিডরের ক্ষতচিহ্ন বহন করে চলেছেন অনেকে।
তবে যারা সিডরের সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে আছেন, তাদের মধ্যে অনেকেই নিজেদের যোদ্ধা বলে দাবি করেন। কেননা সিডরের পর উপকূলীয় অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া আইলা ও নার্গিস নামের ঘূর্ণিঝড়কে মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছেন।
২০০৭ সালের ১৪ নভেম্বর সারা দেশের আকাশ ছিল মেঘলা। আবহাওয়াবিদরা প্রথমে ৫ নম্বর সংকেত দিতে থাকেন। রাতে তা ৮ নম্বর বিপদ সংকেতে গিয়ে পৌঁছায়। ১৫ নভেম্বর সকালে ঘোষণা করা হয় সিডর নামের ঘূর্ণিঝড় ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে বাংলাদেশের উপকূলে। দুপুর নাগাদ তা বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করবে—১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত।
সিডরের প্রভাবে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। গাছপালা উপড়ে যায়। দেশের বিদ্যুৎব্যবস্থায় বিপর্যয় দেখা দেয়। বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণে নগরগুলোর পানি সরবরাহব্যবস্থা ভেঙে পড়ে।
সিডরে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জেলা হিসেবে চিহ্নিত হয় বাগেরহাট আর বরগুনা। সরকারি হিসাবে বাগেরহাট জেলায় নিহত হন ৯০৮ জন ও আহত হন ১১ হাজার ৪২৮ জন। বরগুনা জেলায় মারা যান ১ হাজার ৩৪৫ জন। নিখোঁজ ছিলেন ১৫৬ জন। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলা ছিল বাগেরহাটের শরণখোলা। আর শরণখোলার মধ্যে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় সাউথখালী ইউনিয়ন। শরণখোলা ছাড়াও বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ ও মোংলা উপজেলার অধিকাংশ এলাকায় সুপেয় পানির তীব্র সংকট দেখা দেয়।
সিডর–আক্রান্ত এলাকায় জায়গার অভাবে গণকবর দিতে হয়। অনেক লাশের কোনো পরিচয়ও পাওয়া যায়নি। কাপড়ের অভাবে অনেক মরদেহ পলিথিনে মুড়িয়ে দাফন করা হয়। ঘটনার এক মাস পরেও ধানখেত, নদীর চর, বেড়িবাঁধ, গাছের গোড়া আর জঙ্গলের নানা আনাচকানাচ থেকে লাশ, লাশের অংশবিশেষ অথবা কঙ্কাল উদ্ধার হয়। কেউ কেউ সিডর আঘাত হানার অনেক দিন পর স্বজনদের কাছে ফিরেও আসেন। স্মৃতি হারিয়ে অনেকেই আর গ্রামের বাড়ি খুঁজে পাননি। ফিরতে পারেননি।
লাশ পাওয়া না গেলে ব্যক্তি আইনের চোখে নিহত হিসেবে গণ্য হন না। ক্ষতিপূরণের হকদার হতে পারে না তাঁর পরিবার। নিখোঁজ জেলেদের স্ত্রীরা শাঁখা হাতে বিধবা বধূর জীবনযাপন করেন। পাথরঘাটার লাশ না পাওয়া ৪৬ জন জেলেকে শেষ পর্যন্ত আর মৃত ঘোষণা করা হয়নি। আজ পর্যন্ত তাঁদের কেউ ফিরেও আসেননি।
পাথরঘাটার বাদুড়তলা গ্রামের নিখোঁজ জেলে জাকির হোসেনের স্ত্রী মাসুরা বেগম তাঁর চার মেয়েকে লেখাপড়া করাতে পারেননি। এক মেয়ে মারা গেছে। আর বাকি তিন মেয়েকে তিনি অল্প বয়সে বিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন। নিখোঁজের স্ত্রী বিধবা নন, তাই তিনি বিধবা ভাতার হকদার নন।
পাথরঘাটার অষ্টম শ্রেণির ছাত্র মোহাম্মদ হাসানের বাবাও সিডরে নিখোঁজ। হাসান পড়ছে স্থানীয় বারি আজাদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। বাবার কোনো স্মৃতি তার মনে পড়ে না। ২০০৭ সালে হাসান কেবল হাঁটা শিখেছিল। মায়ের কাছে শুনেছে, বাবা তাঁর হাত ধরে উঠানে হাঁটতেন। তার বড় সান্ত্বনা—তার মা দ্বিতীয় বিয়ে করে তাকে ছেড়ে চলে যাননি। বাবা থাকলে করোনাকালে স্মার্টফোনের অভাবে পড়াশোনায় সে পিছিয়ে যেত না। মা মর্জিনা কোনো ভাতা পান না। দিনমজুরি করে ছেলেকে পড়াচ্ছেন। মর্জিনার মতো অনেক মা ঘুরে দাঁড়িয়েছেন নিজেদের চেষ্টায়।
সিডরের দুদিন আগে সাগরে মাছ ধরতে যান বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার হোসেন আলী (ছদ্মনাম)। সেদিন যখন ফজরের ওয়াক্তে সাত জেলের সঙ্গে সাগরে যাত্রা করেন, তখন তাঁর ১০ বছরের মেয়ে আর ৫ বছরের ছেলে ঘুমিয়ে ছিল। দীর্ঘ ১৪ বছরে তিনি ফেরেননি। নিখোঁজের স্ত্রী আজিজা বেগমের (ছদ্মনাম) নতুন জীবনযুদ্ধ শুরু হয় সেই ২০০৭ সাল থেকে। দুই সন্তানের লেখাপড়া চালিয়ে নেন আজিজা। তাঁর মেয়ে এখন রাষ্ট্রায়ত্ত একটি ব্যাংকে চাকরি পেয়েছেন। ছেলে এখন স্নাতকে ভর্তির অপেক্ষায় রয়েছেন।
সিডরে নিখোঁজ হওয়ার সাড়ে ৯ বছর পরে বাড়িতে ফিরে আসেন আমতলীর ঘটখালী গ্রামের এনসান আলীর ছেলে সোহেল (২৮)। কিন্তু তাঁর বাক্শক্তি নেই। কোথা থেকে কীভাবে ফিরে এসেছেন, কেউ বলতে পারে না। নিখোঁজ সোহেল ফিরে আসার পরে পরিবারের লোকজন চিকিৎসা করিয়েছিলেন। তবে এখন পর্যন্ত তেমন কোনো ফল মেলেনি।
সিডরের ১০ বছর পর ফিরে আসেন বরগুনার তালতলী উপজেলার তেতুঁলবাড়িয়া গ্রামের জেলে হানিফ গাজী। তাঁর ফিরে আসার গল্পটি এমন—তেতুঁলবাড়িয়া ও জলায়ভাঙ্গা এলাকায় মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় এক ব্যক্তি ঘোরাফেরা করছিলেন। শুক্কুর গাজী ভাত খাওয়ানোর কথা বলে তাঁকে বাড়ি নিয়ে যান। বাড়ির মেয়েরা দেখে চিনতে পারেন এই ব্যক্তিই হারিয়ে যাওয়া হানিফ।
হানিফের বাবা মেনসের গাজী বাড়ি ফিরে ছেলেকে দেখে প্রথমে চিনতে পারেননি। পরে ছেলের নাভির ওপর পোড়া দাগ ও পিঠে কালো দাগ দেখে নিশ্চিত হন, ছেলেটি তাঁরই সন্তান। হানিফ কিন্তু সোহেলের মতো বাকরুদ্ধ। এখন তিনি শুধু বাবার নাম একটু–আনেকটা বলতে পারেন।
শরণখোলা বাজার থেকে মানসিক প্রতিবন্ধী এক যুবককে তাঁর পরিবার পিরোজপুরে নিয়ে গেছে গত বছর। ১৩ বছর ধরে এই যুবক ঘুরে বেড়িয়েছেন শরণখোলার পথে–পথে।
সাইক্লোনে যেসব মা–বাবা নিখোঁজ হয়েছেন, তাঁদের সন্তানদের নিকটতম আত্মীয়দের কাছে রেখে বিকাশকে অব্যাহত রাখার উদ্যোগ নিয়েছিল দেশের শিশু অধিকার সংগঠনগুলো। জাতিসংঘের শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) তখন এগিয়ে এসেছিল। পরে মহিলা–বিষয়ক মন্ত্রণালয় এ কর্মসূচির নেতৃত্ব দেয়।
আমাদের শিশু’ নামের সেই কর্মসূচি নিখোঁজ জেলেদের অনেক শিশুকে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে সহায়তা করে। এদের মধ্যে কেউ কেউ সফলতার সঙ্গে পড়াশোনা শেষ করতে পেরেছে। সবাই পারেনি। অনেকেই বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছে। অনেকে শিশুশ্রমে বাধ্য হয়েছে। হারিয়ে গেছে সরকারি তালিকা থেকে।
সিডরে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৩০ জেলার ২০০ উপজেলা। সরকারি হিসেবে মৃতের সংখ্যা বলা হয় ৩,৩৬৩ জন। তবে বেসরকারিভাবে মৃতের সংখ্যা আরও বেশি। ভয়াবহ বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সড়ক, নৌ, বিদ্যুৎ এবং টেলিযোগাযোগসহ আধুনিক সভ্যতার সার্বিক অবকাঠামো। সংবাদপত্র ও টেলিভিশনে প্রকৃতির এ ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র দেখে শিউরে ওঠে গোটা বিশ্ব। সাহায্যের হাত বাড়ায় দেশি–বিদেশিরা।
সময়ের আবর্তনে বছর ঘুরে ঘুরে এসেছে সেই দিন। স্মৃতিচারণে চাপা কান্না আর দীর্ঘশ্বাস নিয়ে হারিয়ে যাওয়া স্বজনদের উদ্দেশে বহু জায়গায় আয়োজন করা হয় দোয়া ও মোনাজাতের।
সাননিউজ/আরপি