ঐতিহ্য ও কৃষ্টি

শুধু বিধবাদের গ্রাম

ফিচার ডেস্ক: বিধবা নারীদের জন্য আবার আলাদা গ্রাম! মিশরের উত্তরে একটি গ্রাম আছে যেখানে কেবল বিধবা এবং বিবাহ-বিচ্ছেদ হওয়া নারীরাই থাকতে পারে। এমনকি পুরুষ ও বিবাহিত নারীদের পর্যন্ত প্রবেশ নিষেধ কায়রো থেকে প্রায় এক হাজার কিলোমিটার দূরের এই মফস্বলের গ্রামটিতে।

‘সামাহা’ নামের সেই গ্রামের বিধবা এবং বিবাহ-বিচ্ছেদ হওয়া নারীরা খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠেন। কোদাল হাতে তারা বেরিয়ে পড়েন।

সারাদিন তারা মাঠে ফসলের ক্ষেতে কাজ করেন এবং বিকেলের পর থেকে নিজের সন্তানদের দেখাশোনা করেন। তাদের জীবনে নিয়মানুবর্তিতাই যেন সব কিছুকে ছাপিয়ে যেতে চায়।

মিশরের মত পুরুষতান্ত্রিক সমাজে তারা প্রতিদিন লড়াই করে যাচ্ছেন। এমনকি মিশরের কৃষিমন্ত্রী এসব নারীদের চাষবাসের জমি প্রদান করেছেন। সেই জমির মালিক হওয়ার জন্যে একটি শর্ত কেবল পূরণ করতে হবে, তা হল সে গ্রামে কোন নারী ১৫ বছরের বেশি সময় বাস করা।

উম মোহামেদ নামে একজন নারী এই গ্রামে বসবাস করছেন এবং সরকারি জমিও পেয়েছেন। ৬২ বছর বয়সী এই নারী স্বামীকে হারিয়ে আসোয়ান নামক গ্রাম থেকে এসেছিলেন। স্বামীর মৃত্যুর সময় তিনি চার সন্তানের জননী, যার প্রথমজন তখন মাত্র প্রিপারেটরি স্কুলের ছাত্র। তারপর তিনি কোন উপায় না পেয়ে এই গ্রামে আশ্রয় নেন। সেখান থেকে সরকারি সহায়তা নিয়ে তিনি আজ ৬ একর জমির মালিক হয়েছেন, ধান-গমের আবাদের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করছেন।

আরেকজনে ৫৯ বছর বয়সী হানেম হুসেইন; যিনি কেবল ভেড়া চড়ান। তিনিও স্বামী হারিয়ে এই মরুভূমির গ্রামে হাজির হয়েছিলেন। অনেকটা বাধ্য হয়েই এই জনাকীর্ণ শহরে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছেন হানেম। এখানে এভাবেই নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন এই হতভাগা নারীরা। এই গ্রাম তাদের আত্মবিশ্বাস গড়ে তুলতে ব্যাপক অবদান রাখছে বলে হানেমের মনে হয়।

সাদেয়া, ৬৫ বছর বয়সী আরেক নারী যিনি পুকুরের ধারে বসেছিলেন, তার গল্প আমাদের শোনালেন। ২০ বছর আগে তিনি এই গ্রামে পা রেখেছিলেন। এখন সরকারি জমি প্রদানের হার কমে গেছে, অর্থাৎ সেভাবে নতুন বিধবা নারীরা এদিকে আসছেন না। এখানে প্রতিটি দিন লড়াইয়ের। এখানে সকলের ধৈর্য্য ধরার এবং লড়াইয়ের মানসিকতা থাকতে হয়।

এছাড়া এই এলাকাটি প্রচণ্ড বন্যা-প্রবণ এলাকা হিসেবেও চিহ্নিত। নারীরা চাষাবাদসহ মেষ চরানো ইত্যাদি কাজ করেন। এছাড়া অনেকেই ক্ষুদ্র ব্যবসা যেমন মুদি দোকানসহ বেশ কিছু নিজস্ব ব্যবসার সাথে তাদের জড়িত রেখেছেন।

এই এলাকার নারীদের একশোর বেশি সন্তান লালিত পালিত হচ্ছে। তারা তাদের মায়ের কাজে সর্বদা সহায়তা করেন। তবে তাদের শিক্ষার কোন ভাল ব্যবস্থা এখনো হয়নি। এমনকি স্বাস্থ্যের মতো জরুরি ব্যাপারেও তারা তেমন সহায়তা পাচ্ছে না।

তারা অনেকে তাদের এলাকা থেকে কয়েক মাইল দূরের স্কুলগুলোতে বিদ্যার্জনে যান। তাদেরই একজন মাহমুদ আলী, বয়স ১৬। সে প্রতিদিন ৩৫ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে তার বিদ্যালয়ে শিক্ষার আলো নিতে যান। সেখানেও আছে শিক্ষকের অভাব, আসা যাওয়ার গণপরিবহনের রয়েছে ব্যাপক সংকট।

‘সামাহা’ মূলত প্রথম এলাকা যেখানে সরকার নারীদের কৃষিকাজের প্রতি আগ্রহী করতে কাজ করেছে। সেখানে কৃষি মন্ত্রণালয় ৩০৩জন বিধবা বা বিবাহ-বিচ্ছেদের শিকার নারীদের প্রায় ২ হাজার একরের আবাদী জমি দিয়েছেন। যেখানে প্রত্যেকে প্রায় ৬ একর করে জমি মাথাপিছু পেয়েছেন।

হতভাগা নারীদের শেষ আশ্রয়স্থল এই সামাহা নামের গ্রামের প্রতি মিশরীয় সরকারের যথেষ্ঠ সুনজর থাকার পরেও এখানে আবাসের উন্নত ব্যবস্থা, সুপেয় পানি, পয়ঃনিস্কাশনসহ নানা সংকটের আবর্তে ঘুরছে সবাই। তবে এই নারীদের লড়াকু জীবনের অংশীদার এই গ্রাম ইতিহাসের পাতায় এভাবেই টিকে থাকবে বলে মনে করেন সবাই।

সূত্র: টিআরটি ওয়ার্ল্ড ডট কম

সাননিউজ/এএসএম

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

মুন্সীগঞ্জে কালবৈশাখীর আঘাত

মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ: এ বছ...

গাঁজাসহ মাদক কারবারি গ্রেফতার

আবু রাসেল সুমন, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি: খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজ...

ফিলিস্তিনে গণহত্যার প্রতিবাদে ভোলায় কর্মসূচি 

ভোলা প্রতিনিধি: স্বাধীন ফিলিস্তিন...

ওসিসহ ৯ পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা

মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ: মুন্...

ইউরোপ সফরে চীনা প্রেসিডেন্ট

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ৫ বছর পর ইউরোপ...

ইয়াবাসহ গ্রেফতার ১

জেলা প্রতিনিধি: নাটোর জেলার বড়াইগ...

ফের বাড়লো হজ ভিসা আবেদনের সময়

নিজস্ব প্রতিবেদক: ২য় দফা বাড়ানো হয়েছে হজ ভিসার জন্য আবেদন কর...

ফিলিস্তিনে হামলার প্রতিবাদে ইবিতে মানববন্ধন

নজরুল ইসলাম, ইবি : ফিলিস্তিনে ইসরাইলের বর্বর আগ্রাসনের প্রতি...

সীমান্তে ভারতীয় নাগরিক আটক

জেলা প্রতিনিধি: লালমনিরহাট জেলার...

হত্যা মামলায় ৩ জনের মৃত্যুদণ্ড

জেলা প্রতিনিধি : জয়পুরহাটে ভ্যানচালক আবু সালাম হত্যার ঘটনায়...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা