বাংলাদেশ নারী ক্রিকেটে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে তোলপাড় শুরু হয়েছে। জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও তারকা পেসার জাহানারা আলম প্রকাশ্যে অভিযোগ তোলার পর নড়েচড়ে বসেছে বিসিবি ও ক্রীড়া মহল। এতদিন কানাঘুষা থাকলেও প্রথমবারের মতো একজন প্রতিষ্ঠিত ক্রিকেটারের মুখ থেকে বিস্তারিত অভিযোগ প্রকাশ পাওয়ায় ঝড় বইছে দেশের ক্রিকেট অঙ্গনে। অভিযোগের রেশ ধরে ভীতি, ক্ষোভ ও উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে নারী ক্রিকেটাঙ্গনে।
একটি জাতীয় দৈনিকে সাক্ষাৎকারের পর ইউটিউবের একটি স্পোর্টস চ্যানেলেও বিস্ফোরক বক্তব্য দেন জাহানারা। সেখানে তিনি নারী ক্রিকেট দলের সাবেক নির্বাচক ও সাবেক পেসার মঞ্জুরুল ইসলাম এবং নারী ক্রিকেট বিভাগের সাবেক ইনচার্জ প্রয়াত তৌহিদ মাহমুদের বিরুদ্ধে সরাসরি যৌন নিপীড়নের অভিযোগ করেন। আরও কয়েকজন কর্মকর্তার দিকেও ইঙ্গিত করেন তিনি। জাহানারা বলেন, “একদিন তিনি (মঞ্জুরুল) এসে আমার কাঁধে হাত রেখে বলছিলেন—‘তোর পিরিয়ডের কতদিন চলছে, শেষ হলে বলিস… আমার দিকটাও তো দেখতে হবে।’”
তার এই অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার সঙ্গে সঙ্গেই বিসিবি প্রথমে বিষয়টিকে গুরুত্বহীন বলে মন্তব্য করে। তবে সামাজিকমাধ্যমে ক্ষোভ, নারী অধিকার কর্মীদের প্রতিবাদ এবং আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে খবর ছড়িয়ে পড়ায় জরুরি ভিত্তিতে এক সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে বোর্ড। এখনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি না দিলেও বিসিবি সূত্র বলছে, অভিযোগ প্রমাণ হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে সরকারের পক্ষ থেকেও বিষয়টি ‘শূন্য সহনশীলতার’ আওতায় আনার ঘোষণা এসেছে। যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব বলেন, “এটা ফৌজদারি অপরাধ। ভুক্তভোগী আইনগত পথে এগুলে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তিনি জানান, সরকারের পক্ষ থেকে জাহানারার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।
অন্যদিকে অভিযুক্ত মঞ্জুরুল ইসলাম বিদেশে অবস্থান করে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এএফপিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “সবই মিথ্যা। দলের অন্য মেয়েদের জিজ্ঞেস করুন।” তার এই প্রতিক্রিয়ার পরও নারী ক্রিকেট সংশ্লিষ্টদের মধ্যে আতঙ্ক ও অস্থিরতা বিরাজ করছে। অনেকেই মনে করছেন, দীর্ঘদিন চাপা থাকা অভিযোগগুলো এবার প্রকাশ্যে আসতে শুরু করবে।
এ ঘটনায় শুধু ক্রিকেট নয়, দেশের ক্রীড়া অঙ্গনে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। নারী খেলোয়াড়দের পরিবারও শঙ্কিত। এ অভিযোগ ভবিষ্যতে মেয়েদের খেলাধুলায় অংশগ্রহণকে প্রভাবিত করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। নারী ক্রীড়াঙ্গনের সঙ্গে যুক্ত অনেকেই বলছেন, বাংলাদেশের ক্রীড়া পরিবেশ নারীদের জন্য কতটা নিরাপদ, জাহানারার অভিযোগ সেই প্রশ্নই আবার সামনে এনে দিয়েছে।
ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট মহলের মন্তব্য, জাহানারার মতো তারকা খেলোয়াড় মুখ খুললে অন্য ভুক্তভোগীরাও সাহস পাবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে কঠোর ব্যবস্থা না নেওয়া হলে নারী ক্রিকেটের অগ্রযাত্রায় বড় আঘাত লাগবে। অনেকেই স্বচ্ছ তদন্ত ও স্বাধীন কমিটি গঠনের দাবি তুলছেন।
বিসিবি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন ও সম্ভাব্য শাস্তির দিকেই এখন দৃষ্টি ক্রিকেট–বিশ্বের।
সাননিউজ/এও