জুলাই সনদে রাজনৈতিক ঐক্যের প্রতিশ্রুতি এলেও বাস্তব চিত্র এখনো অস্পষ্ট। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আহ্বান জানিয়েছেন- “নির্বাচনের ভিত্তি নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তুলতে হবে।”
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, দেশ কি সরাসরি নির্বাচনে যাবে, নাকি আগে গণভোটে জুলাই সনদের বৈধতা পরীক্ষা হবে?
এই প্রশ্নেই আটকে আছে পুরো রাজনৈতিক অঙ্গন।
বিএনপি: “জুলাই সনদেই নির্বাচনের রূপরেখা নির্ধারিত, দেরির সুযোগ নেই”
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন,
“জুলাই সনদই এখন বাংলাদেশের নির্বাচনের রূপরেখা। আমরা মনে করি, নির্বাচনি ট্রেন এখন চলতে শুরু করেছে, আর তা ফেব্রুয়ারির আগেই গন্তব্যে পৌঁছাবে।”
তিনি বলেন, গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন একসঙ্গে আয়োজন করলে জনগণের অংশগ্রহণ বাড়বে এবং প্রশাসনিক খরচও কমবে।
“দুইটি ভোট আলাদা করে আয়োজন করা মানে জনগণকে বিভ্রান্ত করা। গণভোটের প্রশ্নও তো নির্বাচনেই নির্ধারিত হবে- জনগণই সিদ্ধান্ত দেবে।”
জামায়াতে ইসলামী: “আগে গণভোটে বৈধতা, তারপর নির্বাচন”
জামায়াতে ইসলামী সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন,
“জুলাই সনদ একটি রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি, কিন্তু সেটি আইনি বৈধতা না পেলে নির্বাচনের ভিত্তি দুর্বল হবে।”
তার দাবি, নভেম্বরের মধ্যে গণভোট আয়োজন করে জনগণের সম্মতি নিশ্চিত করতে হবে।
“গণভোট ছাড়া নির্বাচন মানে জনগণের রায়ের আগেই সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া। আমরা চাই, আগে জনগণ বলুক তারা জুলাই সনদ মেনে নিচ্ছে কি না, তারপর নির্বাচন হোক।”
এনসিপি: “জুলাই সনদ রাজনৈতিক রঙে ঢেকে গেছে”
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন বলেন,
“জুলাই সনদে যে পরিবর্তনের আশা করা হয়েছিল, সেটি এখন রাজনৈতিক রঙে ঢেকে গেছে। ঐকমত্য কমিশন এখন বাস্তবায়নের জায়গায় নয়, বরং কে কতটা ক্ষমতার অংশ পাবে— সেই হিসাবেই ব্যস্ত।”
তার মতে, সনদের বাস্তবায়নে মাঠপর্যায়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি, বরং সরকার ও প্রশাসন উভয়েই এটিকে কৌশলগত প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করছে।
নাগরিক ঐক্য: “গণভোট ও নির্বাচন পৃথক দিনেও হতে পারে”
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন,
“গণভোটের আয়োজন নির্বাচনের দিনেই করতে হবে- এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। চাইলে আলাদা দিনেও করা যায়, যাতে ভোটাররা মনোযোগ দিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।”
তিনি আরও বলেন,
“জুলাই সনদকে জনগণের রায় ছাড়া বাস্তবায়ন করা যাবে না, তবে তা নিয়ে বাড়াবাড়িও করা উচিত নয়। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া টেকসই করতে হলে আগে জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে।”
গণসংহতি আন্দোলন: “একই দিনে ভোটই গণতান্ত্রিকভাবে শক্তিশালী বার্তা দেবে”
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন,
“গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন একই দিনে হলে সেটি গণতন্ত্রের শক্তিশালী বার্তা দেবে। এতে জনসম্পৃক্ততা বাড়বে এবং ফলাফল নিয়েও বিভ্রান্তি কমবে।”
তার মতে, এখন সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো- নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক আস্থার পরিবেশ তৈরি করা, শুধু তারিখ নির্ধারণ নয়।
খেলাফত মজলিস: “আইনি ভিত্তি ছাড়া নির্বাচন মানে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ”
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক বলেন,
“জুলাই সনদের আইনি স্বীকৃতি ছাড়া নির্বাচন হলে সেটি ভবিষ্যতে অস্থিরতা তৈরি করবে। জনগণ বিভ্রান্ত হবে, প্রশাসনও দ্বিধায় পড়বে।”
তিনি বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে গণভোট আয়োজন করে জুলাই সনদের সাংবিধানিক ভিত্তি নিশ্চিত করা উচিত।
“সরকার যদি গণভোট না করে সরাসরি নির্বাচন করে, তাহলে আগামী নির্বাচনের ফলাফল নিয়েও প্রশ্ন থেকেই যাবে।”
বিশ্লেষণ: জুলাই সনদের রাজনৈতিক পরিণতি
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, “জুলাই সনদ” এখন বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক বিভাজনরেখা।
একদিকে আছে গণভোটের দাবি, অন্যদিকে আছে দ্রুত নির্বাচনের তাগিদ।
যে পথেই যাওয়া হোক না কেন, আগামী তিন মাসই নির্ধারণ করবে- বাংলাদেশ গণতন্ত্রের পথে এগোবে, নাকি আবারও অনিশ্চয়তার দিকে ফিরবে।
সাননিউজ/এও