তুষার আবদুল্লাহ, গণমাধ্যমকর্মী
মতামত

তারুণ্যের বাংলাদেশ

তুষার আবদুল্লাহ

মেয়েকে নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছি। মেয়ে কলা অনুষদের সভাকক্ষে বিষয় বাছাইয়ে। আমি সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে আছি। বৃষ্টি হচ্ছে। ছেলে-মেয়েরা কেউ গাড়িতে, কেউ রিকশা- সিএনজিতে আবার কেউ দৌড়ে এসে কলা ভবনে উঠছে। এদের মধ্যে একটি অংশ নবীন। আমার মেয়ের মতো এবার প্রবেশ করবে বিশ্ববিদ্যালয়ে। বেশ কয়েকজন ছেলে-মেয়ে ঢাকার বাইরে থেকে এসে সরাসরি চলে এসেছে ক্যাম্পাসে। হয়তো বিষয় বেছে নেওয়ার পরই ফিরে যাবে নিজ জেলায়। তাদের একটি অংশ কলা ভবন, অপরাজেয় বাংলাকে সঙ্গে নিয়ে ছবি তুলছে। চোখে মুখে উচ্ছ্বলতা ওদের। তাদের একজন সহপাঠীকে বলছিল- ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০০তম বছরে আমরা এর শিক্ষার্থী হচ্ছি। এটা যেমন গৌরবের, তেমনই ইতিহাস হয়ে যাবো আমরা।’

সহপাঠী উত্তর দেয়- ‘আর যাই করিস রাজনীতিতে নাম লেখাবি না। চুপচাপ পড়ালেখা করে বিসিএস দিয়ে বের হয়ে যাবো’। এই কথা আমার মনটাকে মেঘলা করে দেয়।

আমরা এ কেমন শিক্ষা ও চাকরি ব্যবস্থা তৈরি করেছি? উচ্চশিক্ষা নিতে আসা শিক্ষার্থী গবেষণা, বহুমাত্রিক জ্ঞানের অন্বেষণ না করে, সরকারি চাকরি পাওয়াকে জীবনের লক্ষ্য বলে স্থির করে নিলো। সেই সঙ্গে আরও মন খারাপের বিষয়– রাজনীতির প্রতি অনীহা। আমাকে অবশ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বন্ধুরা বলেছে, প্রথম বর্ষ থেকেই তাদের ছাত্র-ছাত্রীরা বিসিএস নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ছে। পাঠ্যক্রমের বইয়ের বদলে তারা বিসিএস গাইড পড়াতেই মনোযোগী বেশি। একাধিক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে আমি নিজেও এই প্রবণতা লক্ষ্য করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক সংগঠনতো বটেই, সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গেও তাদের দূরত্ব তৈরি হয়েছে।

ছাত্র রাজনীতি আদর্শিক জায়গা থেকে সরে এসে ব্যক্তি কেন্দ্রিক হয়েছে। দল বড় নয়, ব্যক্তির আনুগত্য বড় হয়ে ওঠায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে রাজনৈতিক আদর্শ প্রভাবিত ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটছে না। রাষ্ট্র, জনগণের স্বার্থের কথা শিক্ষার্থীদের ভাবনাতেই থাকছে না। তারা নিজ স্বার্থ ও ক্ষমতা নিয়েই মেতে থাকছে। শিক্ষাঙ্গন, বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় যে রাজনৈতিক অনুশীলনের আতুঁড় ঘর ছিল, সেই আতুঁড় ঘরে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হলো। ফলে নেতৃত্ব তৈরির বীজতলায় দেখা দিলো খরা। শুধু রাজনীতির মাঠ নয়, সরকারি, বেসরকারি পেশার ক্ষেত্রেও দেখতে পাচ্ছি নেতৃত্ব শূন্যতা।

স্বৈরাচার পতনের পরও আমরা দেখেছি শিক্ষাঙ্গনে অস্ত্রের মহড়া। লাশ পড়েছে একের পর এক। কেমন করে অশান্ত হয়ে উঠতো একের পর এক ক্যাম্পাস। সন্ত্রাস, ক্যাডার এগুলো আমাদের শিক্ষার্থীদের শিখিয়েছে কে? অশান্ত ক্যাম্পাসের প্রযোজক ছিলেন কারা? ছাত্র। রাজনীতির বিরুদ্ধে বড় একটি ষড়যন্ত্র বরাবরই ছিল। রাজনীতিকে আদর্শ থেকে দূরে সরিয়ে দিলে, এখানে বহিরাগতের অনুপ্রবেশ সহজ হবে। সেই নকশাতেই, এখনও ষড়যন্ত্র অব্যাহত আছে। জাতীয় সংসদে প্রকৃত রাজনীতিকের সংখ্যাতো আগেই কমেছে। এখন একদম তৃণমূল ইউনিয়ন পরিষদেও সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তরুণরা রাজনীতির মাঠে আছে দৃশ্যমান। আসলে তারা রাজনীতির সঙ্গে নেই। আছে ক্ষমতা, ভোগ এবং দখলের সঙ্গে। ছাত্র রাজনীতি যখন ছিল তখন যে তারা দখল, চাঁদাবাজী করেনি তা নয়। সেই সংখ্যা ছিল সীমিত। কিন্তু দেশের সংকটে, জনগণের প্রয়োজনে সকল মতের ছাত্রদের পাওয়া যেত। যেমনটি পাওয়া গিয়েছিল ঊনসত্তর, একাত্তর ও নব্বইতে।

ছাত্ররা এখনও পথে নামে নো-ভ্যাট, কোটার বিরুদ্ধে এবং নিরাপদ সড়কের দাবিতে। রাজনৈতিক লেবাসমুক্ত হয়ে মাঠে নামলেও, তাদের দখলের জন্য বড় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে স্বার্থের লড়াই শুরু হয়ে যায়। ফলে লক্ষ্যে পৌঁছানোর আগেই ছত্রভঙ্গ হয় ওরা।

বাংলাদেশ বিজয়ের ৫০ উদযাপন করছে। এই উদযাপনের উপলক্ষ্য তৈরিতে বড় অবদান রেখেছিল আমাদের শিক্ষার্থীরা। আমরা নানা অসাম্য, বৈষম্যকে ধারণ করেও রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বচ্ছলতার দিকে যাচ্ছি।

আগামী বাংলাদেশের অর্থনীতি কৃষি, শিল্প ও প্রযুক্তির সমন্বয়ে আরও স্বচ্ছলতা পাবে। সেই স্বচ্ছলতাকে টেকসই করতে ও ফলদায়ক করতে প্রয়োজন তরুণ নেতৃত্ব। এবং সেই নেতৃত্ব শুধু পুস্তক ও সফটওয়্যার মনস্ক হলেই হবে না। তাদের করোটিতে থাকতে হবে মুক্তিযুদ্ধ, জনগণ ও বাংলাদেশ। রাজনৈতিক সচেতনতা ছাড়া এই তিন করোটিতে বাসা বাঁধতে চায় না। বাংলাদেশের ৫০ এ বড় চাওয়া আমাদের তারুণ্য শুদ্ধ ও শুভ চিন্তার রাজনীতিকে ধারণ করুক।

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী

সান নিউজ/এফএইচপি

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

কোচিং সেন্টারে মিলল বিপুল অস্ত্র-বিস্ফোরক

রাজশাহী নগরীর কাদিরগঞ্জ এলাকায় একটি বাড়ি থেকে অস্ত্র ও বিস্ফোরক তৈরি সরঞ্জাম...

আলাস্কায় ট্রাম্প-পুতিন বৈঠক শেষ, যুদ্ধ স্থগিতের ঘোষণা নেই

যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কায় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট...

কোনো চাঁদাবাজকে বাংলাদেশে থাকতে দেওয়া হবে না : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

কোনো চাঁদাবাজকে বাংলাদেশে থাকতে দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র...

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে মালয়েশিয়ার প্রভাব কাজে লাগাতে চায় বাংলাদেশ

দীর্ঘদিনের রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা জোরদার করা...

‘গোপন রাজনীতি’, ছাত্রশিবির ও ডাকসু নির্বাচন নিয়ে উত্তপ্ত ঢাবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গেস্টরুম সংস্কৃতি এবং এই কেন্দ্রিক নির্যাতন গত ১৫ বছরে ছি...

ফের ৯৮ বাংলাদেশিকে বিমানবন্দর থেকে ফেরত পাঠাল মালয়েশিয়া

ফের কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আটকে দেওয়া হয়েছে ৯৮ বাংলাদেশিকে। বিম...

‘গোপন রাজনীতি’, ছাত্রশিবির ও ডাকসু নির্বাচন নিয়ে উত্তপ্ত ঢাবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গেস্টরুম সংস্কৃতি এবং এই কেন্দ্রিক নির্যাতন গত ১৫ বছরে ছি...

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে মালয়েশিয়ার প্রভাব কাজে লাগাতে চায় বাংলাদেশ

দীর্ঘদিনের রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা জোরদার করা...

কোনো চাঁদাবাজকে বাংলাদেশে থাকতে দেওয়া হবে না : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

কোনো চাঁদাবাজকে বাংলাদেশে থাকতে দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র...

আলাস্কায় ট্রাম্প-পুতিন বৈঠক শেষ, যুদ্ধ স্থগিতের ঘোষণা নেই

যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কায় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা