একসময় মাদারীপুর জেলায় ব্যাপক পরিমাণে আখ চাষ হলেও দীর্ঘমেয়াদি ফসল হওয়ায় কৃষকরা ধীরে ধীরে এ ফসলের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলেন। তবে গত কয়েক বছরে ধান, পাট ও ডালজাতীয় ফসল উৎপাদনে ব্যয় বৃদ্ধি, ন্যায্য দাম না পাওয়া, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসলহানি এবং আখ চাষে ঝুঁকি কম ও বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় জেলার রাজৈর, শিবচর, কালকিনি, ডাসার ও সদর উপজেলার কৃষকদের মধ্যে আখ চাষে নতুন করে আগ্রহ দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে লাভজনক এ ফসল ফলাতে বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ।
জানা গেছে, মাদারীপুর জেলায় বিভিন্ন এলাকায় ধান ও পাটসহ অন্যান্য রবি ফসল উৎপাদনে ব্যয় বেশি, বাজারমূল্য কম। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতি হলেও আখের ফলনে খরচের প্রায় তিনগুণ লাভ হওয়ায় এ ফসলের দিকে ঝুঁকছেন তারা। চলতি বছর মাদারীপুর জেলার পাঁচটি উপজেলায় প্রায় ৪০০ একর জমিতে আখ চাষ করছেন কৃষকরা।
মাদারীপুর সদর উপজেলার ছিলারচর গ্রামের আখচাষি সাজেম মাতুব্বর জানান, “২৫ হাজার টাকা খরচ করে আখ চাষে আমি ৪ লাখ টাকা লাভ করেছি। আখ চাষে লাভবান হয়ে আমি খুবই খুশি।”
কালকিনি উপজেলার শিকারমঙ্গল গ্রামের সাহাবুদ্দিন আকন বলেন, “আগে জমিতে পাট, কলাই, সরিষা লাগাতাম। অনেক কষ্ট হতো, পরিচর্যায়ও বেশ কষ্ট ছিল। এখন আখ লাগিয়ে তেমন কষ্ট করতে হয় না। আখ বিক্রি করে পরিবারের সবার ভালোই চলছে।”
স্থানীয় কৃষকদের ভাষ্য, গত বছরের তুলনায় এ বছর আখে রোগ-বালাই কম দেখা যাচ্ছে। অন্যান্য ফসলের তুলনায় আখের আবাদ ভালো হওয়ায় তারা এ ফসলের দিকে ঝুঁকেছেন।
মাদারীপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. রহিমা খাতুন বলেন, “মাদারীপুরে আখ চাষের নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। জেলার অনেক কৃষক এবার আখ চাষে যুক্ত হয়েছেন। এছাড়া স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত গুড়ের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সুগার মিল না থাকলেও কৃষকরা আখ চাষ, গুড় উৎপাদন ও খুচরা বিক্রির মাধ্যমে লাভবান হচ্ছেন। কৃষি বিভাগ থেকে নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।”
মাদারীপুরে আখ চাষে সম্ভাবনা থাকায় ভবিষ্যতে কৃষি বিভাগ প্রান্তিক কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ ও প্রণোদনা প্রদান করে আখ চাষ আরও সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেবে—এমনটাই প্রত্যাশা স্থানীয় কৃষকদের।
সাননিউজ/আরপি