জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে গণভোটের দাবিতে সরকারকে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের। তিনি বলেন, “সোজা আঙুলে যদি ঘি না উঠে, তাহলে আঙুল বাঁকা করব। তবে ঘি আমাদের লাগবেই। যা বোঝাতে চাই, বুঝে নিন—নো হাংকি পাংকি। জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট করতেই হবে।”
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর পল্টন মোড়ে গণমিছিল-পূর্ব সমাবেশে তিনি এ মন্তব্য করেন। সাংবিধানিক সংস্কার, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন এবং জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটসহ পাঁচ দফা দাবিতে জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনসহ সমমনা আট দল যুগপৎ কর্মসূচি পালন করছে। আজ প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দেওয়ার কর্মসূচির অংশ হিসেবে সমাবেশ ও গণমিছিল অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশে তাহের বলেন, “আমরা আপনাদের চালাকি বুঝি। আপনাদের চালাকির ওপর ভিত্তি করেই দাবি আদায়ের পথ আমরা খুঁজে বের করব। এখনও আমরা নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনে আছি।” নির্বাচন কমিশন নির্বাচন তফসিল ঘোষণা করলেও গণভোটে আইনি বাধা নেই দাবি করে তিনি সতর্ক করেন, “সময়ক্ষেপণ অন্তর্বর্তী সরকারকে বিপদে ফেলবে।”
গণভোট আয়োজনের ব্যয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “অনেকে বলে, গণভোটে খরচ বেশি। কিন্তু একদিনে বাংলাদেশে যে চাঁদাবাজি হয়, সেই টাকা দিয়েই একটা গণভোট করা সম্ভব।”
তিনি জানান, সংলাপের জন্য জামায়াত ইতোমধ্যে একটি কমিটি গঠন করেছে এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলকেও আলোচনার জন্য কমিটি করার আহ্বান দিয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ফোন করেও পাওয়া যায়নি দাবি করে তিনি বলেন, “মিছিল শেষে তাকে আবার কল করা হবে। আমরা চাই বিএনপিও আলোচনায় অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিক।”
নির্বাচন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিতের দাবি জানিয়ে তাহের বলেন, “মেজর রাজনৈতিক দলগুলো বসে শুধু জুলাই সনদ নয়, নির্বাচন কীভাবে হবে তা নিয়েও আলোচনা করা উচিত। কেন্দ্র দখল হলে সেই কেন্দ্রের ভোট বাতিল, এমন ঘোষণায় ঐকমত্য দরকার। প্রধান উপদেষ্টাকেও বলতে হবে, সুষ্ঠু না হলে নির্বাচন বাতিল করে নতুন নির্বাচন দেবেন। এ দেশের মানুষ আর প্রহসনের নির্বাচন চায় না।” তিনি আরও দাবি জানান, নির্বাচন কমিশন ও সরকারের উদ্যোগে সব দলের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি বলেন, “প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হবে। এরপরও অগ্রগতি না হলে ১১ নভেম্বর ঢাকা মহানগরী হবে জনতার নগরী।”
সমাবেশে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব ও মুখপাত্র গাজী আতাউর রহমান বলেন, জাতীয় নির্বাচন পিছিয়ে গেলেও গণভোট আগে করতে হবে। “যেদিনই নির্বাচন হোক, গণভোট আগে দিতে হবে। যারা সংস্কারের বিরোধিতা করবে, তাদের সঙ্গে আলোচনা হবে না,” মন্তব্য করেন তিনি।
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদের সঞ্চালনায় সমাবেশে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত আন্দোলন, নেজামে ইসলাম পার্টি, জাগপা ও ডেভেলপমেন্ট পার্টির নেতারাও বক্তব্য দেন।
পরে দুপুর ১২টার দিকে পল্টন থেকে মিছিল নিয়ে দলগুলো প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার দিকে যাত্রা করে। মৎস্য ভবন এলাকায় পৌঁছালে পুলিশ বাধা দেয়। এরপর সমমনা আট দলের নয় সদস্যের প্রতিনিধি দল যমুনায় গিয়ে প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি জমা দেয়।
প্রতিনিধি দলে ছিলেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ, ইসলামী আন্দোলনের মুখপাত্র গাজী আতাউর রহমান, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত আন্দোলন, নেজামে ইসলাম পার্টি, জাগপা এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির নেতারা।
সাননিউজ/এও