বিএনপিকে খাটো করে দেখবেন না, উপদেষ্টা পরিষদ পক্ষপাতদুষ্টভাবে কাজ করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি দেশকে অস্থিতিশীল করার দায়ে কিছু রাজনৈতিক মহলের বিরুদ্ধে সতর্কবার্তা উচ্চারণ করেন এবং দলের ইতিহাস ও সংগ্রামের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে জনসমক্ষে ক্ষমতাশালী শক্তিগুলোকে সতর্ক করেন।
আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় যশোর টাউন হল ময়দানে সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামের স্মরণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে যশোর টাউন হল ময়দানে ফখরুল এসব মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, দেশের স্বাভাবিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়া বজায় রাখতে ও জনগণের অধিকার রক্ষার লক্ষ্যে বিএনপি দৃঢ় অবস্থানে রয়েছে এবং কাউকে এ দলকে অবমূল্যায়ন করার সুযোগ দেওয়া হবে না।
ফখরুল অভিযোগ করেন, “উপদেষ্টা পরিষদ পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে কাজ করছে।” তিনি বলেন, কিছু মহল ও শক্তি দেশের গডলচে পরিস্থিতি সৃষ্টি করে বাংলাদেশের অস্থিতিশীলতা চায়, এ ধরনের অপপ্রয়াস অগত্যা বর্জনীয়। তিনি দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ঘটনার প্রসঙ্গে টেনে বলেন, বড় ছাত্র গণঅভ্যুত্থান ও পরে রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল; সেই প্রেক্ষিতে এখন অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে আবারও কিছু মহল দেশজুড়ে গোলযোগ চালানোর চেষ্টা করছে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ও জুলাই সনদ প্রসঙ্গ টেনে ফখরুল বলেন, কমিশন যে প্রস্তাবগুলো নিয়ে কাজ করেছে, সেখানে অনেক বিষয়ে ‘ভিন্নভাবে’ উপস্থাপন করা হয়েছে বলে তার অভিযোগ। তিনি বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, যেগুলোতে ঐকমত্য হবে সেগুলো থাকবে, নেগুলো পার্লামেন্টে নিয়ে যাওয়া হবে। কিন্তু হঠাৎ উপদেষ্টা মণ্ডলীর সভা করে সাত দিনের সময়সীমা দিয়ে বার্তা দেওয়া হয়েছে, যা যুক্তিযুক্ত নয়।” তিনি প্রশ্ন তোলেন, এতদিন যারা সভায় অংশ নিয়েছেন, তারা কি করলেন? বিএনপির বক্তব্যগুলোকে গুরুত্ব না দিয়ে পুনরায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ চাপানো হচ্ছে কেন, এ ধরনের প্রশ্নও তোলেন তিনি।
ফখরুল আরও মন্তব্য করেন, “আজ যে দাবি-দাওয়াগুলো নিয়ে কয়েকটি দল ঘেরাও করছে, নির্বাচন বানচাল করার চক্রান্ত করছে—এটা দেশের জনগণ মেনে নেবে না।” তিনি দেশের স্বাধীনতা অর্জনসহ বিএনপির ইতিহাস তুলে ধরে দলের রাজনৈতিক পরিচয় ও সংগ্রামের কথা স্মরণ করিয়ে দেন এবং জানান, বিএনপি কোনো ‘ভেসে আসা’ দল নয়—এটি দেশের জনগণের গড়া দল। তিনি বলেন, ‘শহীদ জিয়াউর রহমানের দল, স্বাধীনতার ঘোষকের দল; আমরা দেশের জন্য বহু ত্যাগ স্বীকার করেছি, সেই ভিত্তিতেই কাউকে বিএনপিকে ক্ষুদ্রভাবে দেখা উচিত নয়।’
বক্তব্যে ফখরুল আরও বলেন, দল এখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছেন এবং সরাসরি রাস্তায় না যাওয়ার অবস্থান নিয়েছে; কিন্তু যদি প্রয়োজন হয়, তখন রাজনীতির ধরণ বদলে দিতে তারা রাস্তায় নামার কথাও উল্লেখ করেন। তিনি দেশের রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, দূর্ভাবনা সৃষ্টি বা “পানি ঘোলা” করার চেষ্টা করবেন না, দেশকে অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দেবেন না। তিনি বলেন, ‘অনেক রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা রয়েছে, এ সুযোগকে নষ্ট করার সুযোগ কাউকেই দেওয়া হবে না।’
নির্বাচন প্রসঙ্গে ফখরুল হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, “নির্বাচনের দিনই গণভোট হতে হবে; তার আগে গণভোট করা যাবেনা।” এছাড়া তিনি রাজনৈতিক সকল পক্ষকে সংলাপে আমন্ত্রণ জানান এবং বলেন, দেশকে অশান্তিতে দুর্বল দলগত স্বার্থ হাসিলের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হলে জনগণ তা মেনে নেবে না।
সমাবেশের প্রেক্ষিতে রাজনৈতিক অঙ্গনে এই বক্তব্য পুনরায় উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষত উপদেষ্টা পরিষদ ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক দরবারে যে মন্থরতা দেখা দিয়েছে, তাতে কিভাবে অগ্রগতি করা হবে তা এখন নজরকাড়া বিষয়। ফখরুলের কড়া প্রতিপাদ্য ও দলের অবস্থান আগামী দিনগুলোতে রাজনৈতিক আলাপ-আলোচনায় ও সংঘটিত কর্মসূচিতে প্রভাব ফেলে কিনা সেটাই এখন দেখার বিষয়।
সাননিউজ/এও