সুন্দরবনের উপকূলে বঙ্গোপসাগরের তীরে দুবলারচরে শুরু হয়েছে শুঁটকি মৌসুম। মৌসুমের প্রথম দুই দিনে সাগরে নেমে প্রচুর মাছ পেয়ে জেলেরা বেজায় খুশি। জেলে-মৎস্যজীবীদের পদচারণায় মুখরিত এখন দুবলার আলোরকোলসহ আশপাশের তিনটি চর।
বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পূর্ব সুন্দরবনের আলোরকোল, মাঝেরকেল্লা, নারিকেলবাড়িয়া ও শেলারচরের ৮১ বর্গমাইল এলাকা জুড়ে বিস্তৃত দুবলা জেলে পল্লী। দেশের মোট শুঁটকি মাছ আহরণের প্রায় ৮০ শতাংশই হয় এখান থেকে। সাগর থেকে লইট্যা, ছুরি, চিংড়ি, রূপচাঁদা, পোয়া ইত্যাদি নানা প্রজাতির মাছ ধরে শুঁটকি তৈরির জন্য দুবলার চরে সমবেত হয়েছেন প্রায় দশ সহস্রাধিক জেলে।
এ মৌসুমে শুঁটকি পল্লীতে জেলে-বহরদারদের জন্য ১,০৪০টি অস্থায়ী ঘর, ৬১টি ডিপো ও ৮০টি নিত্যপণ্যের দোকান ঘর তৈরির অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
দুবলার আলোরকোল থেকে সোমবার দুপুরে মোবাইল ফোনে দুবলা ফিশারমেন গ্রুপের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. কামাল উদ্দিন আহমেদ জানান, দুবলারচরে শুঁটকি মৌসুমের সূচনা ভালো হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় জেলেরা প্রথম দুই দিনেই প্রচুর মাছ পেয়েছেন। এ বছর প্রায় দশ সহস্রাধিক জেলে দুবলারচর এলাকায় এসেছেন।
তিনি আরও বলেন, জেলেদের মধ্যে জলদস্যু আতঙ্ক রয়েছে। জলদস্যু নিয়ন্ত্রণে রাখতে তাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে কোস্টগার্ড, র্যাব ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত আবেদন করা হয়েছে।
শেলারচর জেলে সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতি মৌসুমেই আমরা বিভিন্নভাবে ঋণ করে সুন্দরবনের দুবলার শুঁটকি পল্লীতে আসি। এবছরও ঋণ করে জেলেদের নিয়ে শেলারচরে মাছ ধরতে এসেছি।’
আলোরকোলের রামপাল জেলে সমিতির সভাপতি মোতাসিম ফরাজী বলেন, ‘মৌসুমের প্রথম দিনে আলোরকোলে এসে কেউ অস্থায়ী ঘর বানানোর কাজে ব্যস্ত, কেউ আবার সাগরে মাছ ধরতে নেমে পড়েছেন। রবিবার ও সোমবার জেলেরা প্রচুর মাছ পেয়ে খুব খুশি হয়েছেন।’
আলোরকোল ফরেস্ট টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফরেস্টার তানভির হাসান ইমরান বলেন, জেলেরা রবিবার আলোরকোলে এসেই সাগরে নেমে পড়েছেন। কেউ সময় নষ্ট করতে চান না। গত দুই দিনে ধরা মাছ শুঁটকি করার জন্য কেউ মাচায় বিছিয়ে দিয়েছেন, কেউ বা মাটিতে ত্রিপলের ওপর মেলে দিয়েছেন।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, দুবলার শুঁটকি পল্লীতে অস্থায়ী ঘর নির্মাণে জেলেদের দেশীয় প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সঙ্গে নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সুন্দরবনের কোনো গাছপালা ব্যবহার না করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তিনি জানান, জেলেদের থাকার জন্য ১,০৪০টি অস্থায়ী ঘর, ৬১টি ডিপো ও ৮০টি নিত্যপণ্যের দোকান ঘর তৈরির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এ বছর দুবলারচর থেকে ৬ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এখান থেকে ৫ কোটি ৭৭ লাখ ৭২ হাজার ৬৪৬ টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছিল। শুঁটকি আহরিত হয়েছিল ৬৩ হাজার ৫৪১ দশমিক ৬২ কুইন্টাল।
মাছ শিকারের আড়ালে কেউ যাতে সুন্দরবনের বন্যপ্রাণী শিকার বা গাছপালা কাটতে না পারে, সে জন্য বনরক্ষীরা সার্বক্ষণিক নজরদারি চালাবে বলে জানিয়েছেন ডিএফও।
সাননিউজ/আরপি