ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা আদর্শ কলেজে স্নাতক সম্মান (ডিগ্রি) পরীক্ষা চলাকালে দেশীয় অস্ত্র (রামদা) হাতে এক যুবকের মহড়ার ঘটনায় শিক্ষক-কর্মচারীদের ভয়ভীতি ও পরীক্ষা কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিনষ্টের অভিযোগে আল-সাদকে (৩০) প্রধান আসামি করে দুজনের নামে থানায় সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা হয়েছে।
মামলার ১১ দিনের মাথায় প্রধান আসামি আল-সাদকে খুলনা মহানগরের সদর থানা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-১০)।
রোববার (২১ ডিসেম্বর) আসামি আল-সাদকে ফরিদপুর আদালতে পাঠানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন আলফাডাঙ্গা থানার ওসি মো. আবুল হাসনাত খান। এর আগে শনিবার রাতে র্যাব-১০ সিপিসি-৩, ফরিদপুর ক্যাম্প থেকে দেওয়া এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আল-সাদকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি জানায়।
গ্রেপ্তার হওয়া আল-সাদ ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা পৌরসভার কুসুমদি এলাকার মো. আনোয়ার হোসেনের ছেলে।
র্যাবের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ৯ ডিসেম্বর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা আদর্শ কলেজে স্নাতক সম্মান (ডিগ্রি) পরীক্ষা চলাকালে বহিরাগত আল-সাদ ১৪৪ ধারা অমান্য করে স্ত্রীর সিট (আসন) দেখার জন্য জোরপূর্বক পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশের চেষ্টা করেন। এ সময় কেন্দ্রে কর্তব্যরত শিক্ষক-কর্মচারী ও কলেজের অধ্যক্ষ তাকে কেন্দ্রে ঢুকতে বাধা দেন। এ ঘটনার প্রায় ১৫ মিনিটের মধ্যে আল-সাদ তার এক সহযোগী সাদি খানকে সঙ্গে নিয়ে দেশীয় অস্ত্র (রামদা) হাতে পুনরায় কলেজ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে শিক্ষক-কর্মচারীদের ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে চলে যায়।
ওই ঘটনার পরদিন, ১০ ডিসেম্বর কলেজের কর্মচারী নাজমুল হোসেন প্রকাশ্যে দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন করে ভয়ভীতি দেখানো ও ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টির অভিযোগে সন্ত্রাস দমন আইনে আলফাডাঙ্গা থানায় একটি মামলা করেন। মামলার পর আসামিকে গ্রেপ্তারের জন্য র্যাব-১০-এর ফরিদপুর ক্যাম্পে একটি অধিযাচনপত্র পাঠায় পুলিশ। এরপর থেকেই র্যাব-১০-এর সিপিসি-৩ ফরিদপুর ক্যাম্প আসামি গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু করে।
গত শনিবার র্যাব-৬-এর সহযোগিতায় খুলনা মহানগরের সদর থানার ময়লাপোতা এলাকায় যৌথ অভিযানে আল-সাদকে গ্রেপ্তার করে আলফাডাঙ্গা থানায় হস্তান্তর করা হয়।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-১০)-এর সিপিসি-৩, ফরিদপুর ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার স্কোয়াড্রন লিডার তারিকুল ইসলাম জানান, গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণ ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় শনিবার বিকেলে খুলনা মহানগরীর সদর থানার ময়লাপোতা এলাকায় অভিযান চালিয়ে আল-সাদকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং রাতেই সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়।
কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. মুজিবুর রহমান রোববার স্বস্তি প্রকাশ করে জানান, ওইদিন সবাই আতঙ্কিত হয়ে ইউএনও ও ওসি সাহেবকে ফোন করে বিষয়টি জানালে পুলিশ আসার আগেই তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। এ ঘটনায় আল-সাদের পক্ষে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা কলেজের অধ্যক্ষ ও শিক্ষক-কর্মচারীদের সঙ্গে প্রাথমিকভাবে মীমাংসার চেষ্টা করলেও পরবর্তীতে কলেজের সিসিটিভি ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। পরে বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে প্রশাসনের টনক নড়ে।
আলফাডাঙ্গা থানার ওসি মো. আবুল হাসনাত জানান, প্রকাশ্যে দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন করে ভয়ভীতি দেখানো ও ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করায় সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা হয়। মামলার পর র্যাব-১০-এ অধিযাচনপত্র পাঠানো হলে শনিবার রাতে আসামিকে গ্রেপ্তার করে থানায় হস্তান্তর করা হয়। রোববার তাকে ফরিদপুর আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
সাননিউজ/আরআরপি