বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে মালচিং পদ্ধতিতে এ প্যাটান মাচা মাধ্যমে শীতকালীন জাদু শসা চাষ করে এখন গোটা জেলায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন সফল চাষি কৃষক পারভেজ খান।
বীজ রোপণের ৭০/৮০ দিনের মধ্যে প্রতিটি শসা গাছে অধিক ফলন হয়। এ প্রজাতির ফলনের আয়ুষ্কাল ৪২ দিন। বাজারে এ শসার চাহিদা দ্বিগুণ। খেতে সুস্বাদু, মিষ্টতা বেশি। সাইজ সাধারণ শসার চেয়ে বড়, রঙ ভালো থাকায় দামও বেশি পাচ্ছেন কৃষক।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দৈবজ্ঞহাটী ইউনিয়নের আলতিবুরুজবাড়িয়া গ্রামের আব্দুল মজিদ খানের ছেলে সফল কৃষক মো. পারভেজ খান। বেকার জীবনে দুশ্চিন্তায় সময় কাটছিল। ছেলে-মেয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে কিভাবে সংসার চলবে—অভাব কোনভাবেই ছাড়ছিল না। হিমশিম খেতে হচ্ছিল সংসার চালাতে। নিজ ক্রয়কৃত ১৫ শতক জমিতে এক সময়ে সামান্য ধান হতো। সেই জমিতে এখন কৃষি দপ্তরের পরামর্শ অনুযায়ী মালচিং পদ্ধতিতে জাদু শসা চাষ করে এখন গোটা উপজেলাজুড়ে সাড়া জাগিয়েছেন সফল চাষি পারভেজ খান।
এ পর্যন্ত ক্ষেত থেকে ৫ বারে ৪৫ মণ শসা তুলে বাজারে বিক্রি করেছেন। প্রতি মণ শসা প্রথমে ২ হাজার, পরবর্তীতে ১৮ শ’ টাকা দরে প্রায় ৯০ হাজার টাকার শসা বিক্রি করতে পেরেছেন। আরও ৩/৪ বার শসা তুলতে পারবেন বলে তিনি জানান।
যেখানে সাধারণ শসা প্রতি মণ বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার থেকে ১২ শ’ টাকায়, সেখানে জাদু শসা প্রতিমণে বাড়তি পাচ্ছেন ৮ শ’ টাকা।
কৃষক পারভেজ খান বলেন, ১৫ শতক জমিতে জাদু শসা উৎপাদনে বীজ, ওষুধ, মালচিং পেপার, শ্রমিক মজুরি দিয়ে ব্যয় হয়েছে ১৫ হাজার টাকা। এ ক্ষেত থেকে লক্ষাধিক টাকার বেশি শসা বিক্রি করতে পারবেন বলে আশাবাদী তিনি। এ পদ্ধতিতে ভালো ফলন পাওয়ায় আনন্দিত পারভেজ। বিভিন্ন স্থান থেকে চাষিরা তার ক্ষেত দেখতে এসে তাদেরও আগ্রহ বাড়ছে।
এ ফলন দেখে আগামী বছরে অনেক কৃষকই এ জাদু শসা চাষে ঝুঁকবেন। পরিশ্রম সফলতার মূল চাবিকাঠি। তার বেকার জীবন ঘুচিয়ে উদ্যোক্তা হতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে করছেন তিনি।
এ বিষয়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মশিউর রহমান বলেন, তার ইউনিয়নে এক টুকরো জমিও কোথাও খালি থাকবে না। সেক্ষেত্রে কৃষি অধিদপ্তরের মাধ্যমে নতুন নতুন ফসল উৎপাদনে চাষিদেরকে আধুনিক প্রশিক্ষণ ও সময়োপযোগী পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। যে কারণেই আজ সফল চাষি পারভেজ খান এখন গোটা উপজেলার দৃষ্টান্ত।
মোরেলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, মোরেলগঞ্জ উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় এ বছর ১৫০০ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন ও শীতকালীন সবজি চাষ হচ্ছে। এসব সবজির মধ্যে আছে শিম, লাউ, মুলা, ফুলকপি ও বাঁধাকপি। বাজারে আগাম শীতকালীন সবজির চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, আবার সেগুলো বেশি দামে বিক্রিও করতে পারছে কৃষকরা। এতে কিছুটা ঝুঁকি থাকলেও আগাম সবজি চাষে কৃষকরা আগ্রহী হচ্ছেন। নতুন নতুন ফসল উৎপাদনে চাষিদেরকে আধুনিক প্রশিক্ষণ ও সময়োপযোগী পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। যে কারণেই আজ সফল চাষি পারভেজ খান এখন গোটা উপজেলার দৃষ্টান্ত। আগামী দিনে কৃষকরা যেন আগাম সবজি চাষে আরও আগ্রহী হয় সে ব্যাপারে আমাদের মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রম অব্যাহত আছে। আশা করছি আগামীতে এই সবজি চাষ আরও বৃদ্ধি পাবে।
সাননিউজ/আরপি