গুম প্রতিরোধ অধ্যাদেশে চূড়ান্ত অনুমোদন, সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড, এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে দীর্ঘদিনের আলোচিত মানবাধিকার ইস্যুতে বড় অগ্রগতি আনল সরকার। বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম এ তথ্য জানান।
বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির মিলনায়তনে এক বিফ্রিংয়ে তিনি এ কথা জানান। গুম প্রতিরোধ ও প্রতিকার অধ্যাদেশকে চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে সরকার। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর দাবি, আন্তর্জাতিক মহলের চাপ এবং ভুক্তভোগী পরিবারের দীর্ঘ আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রেসসচিব শফিকুল আলম বলেন, গুম প্রতিরোধ এবং প্রতিকারের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ আইন প্রণয়নে দীর্ঘদিন ধরে কাজ চলছিল। বিভিন্ন সংস্থার মতামত, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড ও ঘনিষ্ঠ পর্যালোচনার মাধ্যমে অধ্যাদেশটির খসড়া প্রস্তুত করা হয়। অবশেষে আজ এটি আনুষ্ঠানিক অনুমোদন পেল।
অধ্যাদেশে গুমকে স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে এবং এটিকে ‘চলমান অপরাধ’ হিসেবে বিবেচনার বিধান রাখা হয়েছে। ফলে কোনো ব্যক্তিকে গুম করার পর তাকে জীবিত বা মৃত কোনো অবস্থায় ফিরিয়ে না আনা পর্যন্ত অপরাধ চলমান থাকবে। এর জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড ও অন্যান্য কঠোর দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
আইনে ‘গোপন আটক কেন্দ্র’ বা কথিত ‘আয়নাঘর’-এর মতো অবৈধ স্থাপনা তৈরি ও ব্যবহারকে গুরুতর অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এসব স্থাপনা পরিচালনা বা সহযোগিতার সঙ্গেও কঠোর শাস্তির বিধান যোগ করা হয়েছে।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে গুম-সংক্রান্ত অভিযোগ গ্রহণ ও তদন্তের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, পাশাপাশি আলাদা একটি তদন্ত কমিশনও গঠন করা হবে। অভিযোগ প্রমাণ সাপেক্ষে ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়েরের পর ১২০ দিনের মধ্যে বিচার সম্পন্নের বাধ্যবাধকতা আইনটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী ও সাক্ষীদের নিরাপত্তা, ক্ষতিপূরণ, পুনর্বাসন এবং আইনগত সহায়তা নিশ্চিত করার জন্য বিশেষ ধারা সংযোজন করা হয়েছে। এ ছাড়া গুম প্রতিরোধ ও প্রতিকার তহবিল গঠন এবং একটি কেন্দ্রীয় তথ্যভাণ্ডার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সব অভিযোগ, মামলার অগ্রগতি ও তথ্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা কার্যকর করা হবে।
মানবাধিকার কর্মীরা আশা করছেন, আইনটির কার্যকর বাস্তবায়ন হলে দেশে গুমের ঘটনা প্রতিরোধে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসবে এবং ভুক্তভোগী পরিবারের দীর্ঘদিনের অপেক্ষার অবসান ঘটবে। সরকার বলছে, এই উদ্যোগ মানবাধিকার সুরক্ষায় দেশের ইতিহাসে নতুন অধ্যায় রচনা করবে।
সাননিউজ/এও