তুষারশুভ্র দাড়ি, লাল পোশাক আর উপহারে ভরা ঝুলি-এই চেনা ছবিতেই বড়দিনকে কল্পনা করেন বেশির ভাগ মানুষ। সঙ্গে থাকে ‘জিঙ্গেল বেলস’-এর সুর, আলোকসজ্জা আর ক্রিসমাস ট্রি। তবে বড়দিনের এই পরিচিত দৃশ্যের আড়ালে লুকিয়ে আছে বিশ্বের নানা প্রান্তের বিচিত্র সব রেওয়াজ, যা জানলে অনেকেই অবাক হতে পারেন।
যিশু খ্রিষ্টের জন্মদিন উপলক্ষে পালিত বড়দিন খ্রিষ্টানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। শত শত বছর ধরে এই দিনটি ঘিরে গড়ে উঠেছে নানা সংস্কৃতি, লোকবিশ্বাস ও সামাজিক আচার। দেশভেদে এসব রেওয়াজের রূপ এতটাই আলাদা যে কোথাও টার্কির বদলে মাছ, কোথাও সান্তার বদলে উট, আবার কোথাও ক্রিকেটই হয়ে ওঠে উৎসবের মূল আকর্ষণ।
চেক প্রজাতন্ত্রে বড়দিন মানেই বাথটাবে মাছ
ইউরোপের দেশ চেক প্রজাতন্ত্রে বড়দিনের প্রধান খাবার টার্কি নয়, বরং মাছ। অনেক পরিবার বড়দিনের আগে বাজার থেকে জলজ্যান্ত মাছ কিনে এনে বাথটাবে রেখে দেন। কেউ কেউ মাছ রান্না করেন, আবার কেউ উৎসব শেষে সেটিকে নদী বা হ্রদে ছেড়ে দেন।
এ ছাড়া অনেকে মাছের আঁশ মানিব্যাগে রাখেন সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে। স্থানীয়দের বিশ্বাস, এতে সারা বছর অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা বজায় থাকে।
বিয়ে ভবিষ্যৎ জানার খেলাও আছে
চেক প্রজাতন্ত্র ও বেলারুশে বড়দিনে মেয়েরা জুতা ছুড়ে ভবিষ্যৎ স্বামী সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেন। জুতা যদি দরজার দিকে পড়ে, তাহলে ধরে নেওয়া হয় খুব শিগগিরই বিয়ে হবে। বেলারুশে আবার খাবার টেবিলের পা দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখার রেওয়াজ রয়েছে যেন অশুভ প্রভাব ঘরে না ঢোকে।
গুয়াতেমালায় বড়দিন শুরু হয় ‘শয়তান পোড়ানো’ দিয়ে
মধ্য আমেরিকার দেশ গুয়াতেমালায় বড়দিনের উৎসব শুরু হয় ৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ছয়টায়। এ সময় ‘লা কেমা দেল দিয়াবলো’ নামে শয়তানের কুশপুত্তলিকা পোড়ানো হয়। স্থানীয়দের বিশ্বাস, এতে পুরোনো পাপ ও অশুভ শক্তি দূর হয়।
যদিও পরিবেশদূষণের কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই রেওয়াজ নিয়ে সমালোচনাও বাড়ছে।
গ্রিসে ক্রিসমাস ট্রির বদলে নৌকা
গ্রিসে বড়দিনের ঐতিহ্যবাহী প্রতীক হলো ছোট নৌকা, যার নাম ‘কারাভাকি’। ১৮৩৩ সালের আগে সেখানে ক্রিসমাস ট্রির চলই ছিল না। লোককথা অনুযায়ী, বড়দিনে ‘কাল্লিকান্তজারোই’ নামে কিছু দুষ্ট আত্মা বের হয় যাদের তাড়াতে আলো আর সাজসজ্জা ব্যবহার করা হয়।
ইথিওপিয়ায় বড়দিন জানুয়ারিতে
আফ্রিকার দেশ ইথিওপিয়ায় বড়দিন পালিত হয় ৭ জানুয়ারি, যার নাম ‘গান্না’। অর্থোডক্স খ্রিষ্টানদের এই উৎসবের আগে টানা ৪৩ দিন উপবাস পালন করা হয়। এ সময় মাংস, দুধ ও ডিম খাওয়া নিষিদ্ধ থাকে।
সিরিয়ায় সান্তার ভূমিকায় উট
সিরিয়ায় শিশুদের উপহার দেয় সান্তা নয়, বরং উট। একটি প্রাচীন কিংবদন্তি অনুযায়ী, উটে চড়েই তিন জ্ঞানী ব্যক্তি শিশু যিশুকে দেখতে গিয়েছিলেন। সেই স্মৃতি থেকেই উট বড়দিনের অংশ হয়ে উঠেছে।
মুসলিমপ্রধান দেশেও বড়দিনের রঙ
ইন্দোনেশিয়ায় বড়দিনে দেখা যায় স্থানীয় সংস্কৃতির প্রভাব। উত্তর সুমাত্রায় ‘মারবিন্দা’ প্রথায় পশু উৎসর্গ করা হয়। আবার জাকার্তার কিছু এলাকায় বড়দিনে মানুষ একে অন্যের মুখে পাউডার মেখে দেন যার নাম ‘রাবো রাবো’।
অস্ট্রেলিয়ায় বড়দিন মানেই ক্রিকেট
ডিসেম্বরে যখন ইউরোপ বরফে ঢাকা, তখন অস্ট্রেলিয়ায় গ্রীষ্মকাল। তাই বড়দিনে অনেক পরিবার সমুদ্রসৈকত বা খোলা মাঠে ক্রিকেট খেলেই উৎসব উদ্যাপন করেন। বয়স এখানে কোনো বাধা নয় শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই অংশ নেন।
টাইম সাময়িকী (TIME Magazine)