জাতীয়

কাল ভিন্নরকম এক ঈদ

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের কারণে এবারের ঈদ আনন্দের সবকিছুতেই যেন ভাটা পড়েছে।

ঈদ মানেই পরম আনন্দ। ঈদ মানেই নতুন জামাকাপড়। ঈদ মানে আত্মীয়-স্বজন আর বন্ধুদের মিলনমেলা, হৈ-হুল্লোড়, ঘুরে বেড়ানো, খাওয়া-দাওয়া আর আড্ডা। এ উৎসবে মুসলমানরা ঈদগাহে কোলাকুলি ও করমর্দন করে থাকেন।

এছাড়া সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি, ভালোবাসার বন্ধনে সবাইকে নতুন করে আবদ্ধ করাও ঈদের অন্যতম অর্থ। ঈদ মানে ভোগান্তিকে সঙ্গী করে নাড়ির টানে গ্রামের বাড়িতে মা-বাবা, ভাই-বোনদের সঙ্গে একত্রিত হওয়া। কিন্তু বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে এবারের ঈদ আনন্দের সবকিছুতেই যেন ভাটা পড়েছে।

করোনার দ্বিতীয় বছর অর্থাৎ এবারের ঈদেও নেই অনাবিল আনন্দের আবহ আর খুশির জোয়ার। অদৃশ্য এক ভাইরাসে পুরো বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও থমকে গেছে স্বাভাবিক জীবনযাপন। এক কথায় বলতে গেলে, এবারও ঈদ উৎসব আনন্দ-খুশির ডালা সাজিয়ে নয়, এসেছে শঙ্কা-অনিশ্চয়তার বার্তা নিয়ে।

আগামীকাল শুক্রবার (১৪ মে) পবিত্র ঈদুল ফিতর। ৩০ দিন সিয়াম সাধনার পর দেশের মুসলমানরা এদিন ঈদ উদযাপন করবেন।

ঈদের নামাজ একটি বড় উৎসব। এদিন ছেলে, বুড়ো, পাড়া-প্রতিবেশী সবাই দল বেঁধে ঈদের নামাজ পড়তে ঈদগাহে যান। নামাজ শেষে একে অপরের সঙ্গে কুশল বিনিময়, করমর্দন, কোলাকুলি করেন।

সকল ভেদাভেদ ভুলে হাতে হাতে রাখার দৃঢ় প্রত্যয় নেন। কিন্তু করোনার স্বাস্থ্যবিধিতে এবারও তা হচ্ছে না। এবারের ঈদে নামাজ শেষে করা যাবে না চিরাচরিত কোলাকুলি, করমর্দন। উন্মুক্ত স্থানে জনসমাগম করা যাবে না। তাই ঈদের নামাজ পড়তে হবে মসজিদে মসজিদে।

সময় ভাগ করে একাধিক ঈদের জামাত অনুষ্ঠানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই নামাজ আদায় করতে হবে। যে এলাকায় করোনার প্রাদুর্ভাব নেই সেই এলাকায় হয়তো স্থানীয় লোকজনের উদ্যোগে ঈদগাহে জামাত হতে পারে। কিন্তু সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশনা মেনে করা যাবে না কোলাকুলি, করমর্দন।

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় প্রথম রমজান থেকে সরকারি বিধিনিষেধ চলছে। যা ঈদের পরেও বহাল থাকছে বলে আভাস দিয়েছে সরকার। করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার ঈদযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা বহাল রেখেছে। বন্ধ রয়েছে দূরপাল্লার সব ধরনের গণপরিবহন।

তাই নাড়ির টানে গ্রামে গিয়ে মা-বাবা, ভাই-বোনদের সঙ্গে একত্র হওয়াতে ছেদ পড়েছে। যদিও সরকারি বিধিনিষেধকে উপেক্ষা করে নজরবিহীন ভোগান্তিকে সঙ্গী করে গ্রামের বাড়িতে গেছেন অনেক মানুষ। তবে অনেকেই কর্মস্থলে থাকছেন।

ঈদ সামনে রেখে লাইনে দাঁড়িয়ে ট্রেনের টিকিট কাটা, দূরপাল্লার বাসে টিকিট কাটার জন্য এবার ছিল না হুড়োহুড়ি। ছিল না যাত্রীবাহী বাস ও ট্রেনের ছাদভর্তি মানুষ—চিরাচরিত সেই দৃশ্য। লঞ্চের ডেকের ওপর ঠাসা যাত্রীর কোলাহলও দেখা যায়নি। চোখে পড়েনি মহাসড়কে যানজট।

ঈদকে কেন্দ্র করে কোনো মেলার আয়োজন এবার হয়নি। প্রতি বছর শাড়ি মেলা, পাঞ্জাবি মেলাসহ বিভিন্ন মেলা বসে ঈদঘিরে। প্রতিটি পর্যটন কেন্দ্রে থাকে উপচে পড়া ভিড়। অনেকে আনন্দ করার জন্য বিদেশে পাড়ি জমান।

অনেকেই চান ঈদের ছুটিতে সাগর-পাহাড় বা কাছাকাছি কোনো রিসোর্টে নিজেদের মতো সময় কাটাতে। ছেলে-মেয়ে নিয়ে অনেকেই যান বিনোদন কেন্দ্রে। কিন্তু এবার দেশ-বিদেশের পর্যটনকেন্দ্রগুলোও বন্ধ রয়েছে। সেখানে যাওয়ারও উপায় নেই।

মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে দেশের বিপণিবিতানগুলো জমজমাট থাকে। ধুম পড়ে যায় কেনাকাটার। রোজার মাঝামাঝি শপিংমলগুলো নির্ধারিত সময়ের জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে খোলার অনুমতি দেওয়া হলেও তা মানা হয়নি। চোখে পড়ে সেই পুরানো চিত্র।

বাংলাদেশে করোনার দুই বছরে কয়েক দফায় লডডাউনে অফিস-আদালত, কলকারখানা, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান, গণপরিবহন বন্ধ থাকায় মধ্যবিত্ত, নিম্ন আয়ের মানুষ পড়েছেন বিপাকে।

ঘরে খাবার নেই এমন পরিবারের জন্য ঈদ এসেছে বিষাদ হয়ে। যদিও ব্যক্তিগত উদ্যোগে দেশের ধনী ব্যক্তি, বিভিন্ন সংস্থা ও সরকারের পক্ষ থেকে ত্রাণ ও ঈদ উপহার সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। তবে তা ছিল খুবই অপর্যাপ্ত। ব্যবসা বাণিজ্যের মন্দার কারণে এবার জাকাতের ত্রাণ-কাপড় বিতরণ ছিল কম।

প্রতিবার এমপি-মন্ত্রী এবং রাজনৈতিক নেতারা এলাকার নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করলেও এবার একেবারেই ব্যতিক্রম পরিবেশ ও প্রেক্ষাপটে তা উদযাপিত হতে যাচ্ছে। এ কারণে তারাও এবার গ্রামে যাচ্ছেন না। বেশিরভাগ নেতাকর্মী ঢাকায় ঈদ করছেন। তবে নেতারা ঢাকায় থেকেই এলাকায় ত্রাণ পাঠিয়েছেন। কেউ কেউ কর্মীদের জন্য ঈদের উপহারও পাঠিয়েছেন।

শোলাকিয়া ঈদগাহের গ্র্যান্ড ইমাম প্রখ্যাত আলেম শায়খুল হাদিস আল্লামা ফরিদ উদ্দীন মাসউদ বলেন, এবারও করোনাকে সঙ্গী করে এসেছে দুর্যোগ-দুর্ভোগের ঈদ। এর মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদ উদযাপন করতে হবে।

আল্লাহ সহায় হলে এ মহামারি একদিন পৃথিবী থেকে বিদায় নেবে। আল্লাহ বাঁচিয়ে রাখলে, দুর্যোগের মেঘ কেটে গেলে সাড়ম্বরে ঈদ উৎসব উদযাপনের সুযোগ সামনে আসবে, ইনশাল্লাহ।

তিনি বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য সরকার যেসব বিধিনিষেধ দিয়েছে তা সবার মানা উচিত। ঈদের নামাজের ক্ষেত্রে সরকার যে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে বলেছে তার সঙ্গে শরিয়তের বিধানের কোনো বিরোধ নেই। স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করলে আল্লাহ সবাইকে হেফাজত করবেন।

সাননিউজ/এএসএম

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

রাজধানীতে স্বস্তির বৃষ্টি

নিজস্ব প্রতিবেদক: টানা একমাস দাবদ...

মিল্টন সমাদ্দার রিমান্ডে

নিজস্ব প্রতিবেদক: মৃত্যুর জাল সনদ তৈরির অভিযোগে প্রতারণা ও জ...

আমিরাতে প্রবল বৃষ্টিপাত, সতর্কতা জারি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: প্রবল বৃষ্টিপা...

লিওনার্দো দা ভিঞ্চি’র প্রয়াণ

সান নিউজ ডেস্ক: আজকের ঘটনা কাল অতীত। প্রত্যেকটি অতীত সময়ের স...

ভরিতে ১৮৭৮ টাকা কমলো স্বর্ণের দাম 

নিজস্ব প্রতিবেদক: টানা অষ্টমবারের...

পানিতে ডুবে প্রাণ গেল ভাই-বোনের

জেলা প্রতিনিধি : মুন্সীগঞ্জের সদরে পুকুরের পানিতে ডুবে দুই ভ...

তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকার আভাস

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকাসহ বিভিন্ন বিভাগের ওপর দিয়ে যে তাপপ্র...

বৃষ্টিতে বন্ধ খেলা

স্পোর্টস ডেস্ক : বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়ের মধ্যকার প্রথম টি-টোয়...

রাজধানীতে বাসের ধাক্কায় নিহত ১

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর বকশিবাজারে বাসের ধাক্কায় আনোয়ার...

বাস-ট্রাক সংঘর্ষে আহত ৮

জেলা প্রতিনিধি : রাজবাড়ীর পাংশায় বাস ও ট্রাকের সংঘর্ষে ৮ যাত...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা