লাইফস্টাইল

বন্ধ্যাত্বের কারণ ও চিকিৎসা

সাননিউজ ডেস্ক: অনেক দম্পত্তি রয়েছে যারা সন্তান ধারণে অক্ষম। বর্তমানে আমাদের দেশে বন্ধ্যাত্বের সংখ্যা ক্রমে বেড়েই চলছে।বাংলাদেশে কত শতাংশ দম্পতি এ সমস্যায় ভুগছেন, তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই। এই সমস্যার কারণে অনেকেই নারীদের দোষারোপ করে থাকে। কিন্তু এ ভ্রান্ত ধারণা থেকে বের হয়ে আসা উচিত। কারণ বন্ধ্যাত্ব নারী ও পুরুষ উভয়েরই হতে পারে। চিকিৎসকেরা বলেছেন, সন্তান ধারণে অক্ষম নারী ও পুরুষের সংখ্যা একই রকম।

যদিও পারিবারিক ও সামাজিকভাবে বাংলাদেশে নারীদেরই এজন্য নিগ্রহের শিকার হতে হয় বেশি। বন্ধ্যাত্বের এখন নানা চিকিৎসা বাংলাদেশে রয়েছে। তবে তা দীর্ঘমেয়াদি, ব্যয়বহুল এবং কষ্টকর।

যেসব কারণে নারীদের বন্ধ্যাত্ব হয়

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, সন্তান ধারণের চেষ্টা করার পর টানা এক বছর সময়কাল যদি কেউ সফল না হন তাহলে তাকে ইনফার্টাইল বা সন্তান ধারণে অক্ষম হিসেবে গণ্য করা হয়।

স্ত্রী রোগের পাশাপাশি নারীদের বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসা দিয়ে থাকেন ডা. সেলিনা আক্তার। তিনি বলছিলেন, তার কাছে যে দম্পতিরা আসেন তাদের মধ্যে সন্তান ধারণে অক্ষমতায় নারী ও পুরুষের সংখ্যা একই রকম।

দেখা যায় দম্পতিদের মধ্যে ৪০ শতাংশ ক্ষেত্রে স্ত্রী এবং একই সংখ্যক স্বামীদের শারীরিক সমস্যা থাকে। বাকি ১০ ভাগ ক্ষেত্রে দুজনেরই সমস্যা থাকে। কিন্তু ১০ ভাগ ক্ষেত্রে সমস্যা অজানা থেকে যায়। নারীরা প্রধানত কি কারণে সন্তান ধারণে অক্ষম হয়ে থাকেন সে সম্পর্কে ধারণা দিলেন ডা. সেলিনা আক্তার।

১. প্রেগন্যান্সির জন্য জরুরি পলিসিস্টিক ওভারি, যার মাধ্যমে একটা করে ওভাম আসার কথা, সেটা আসে না।
২. জরায়ুর কিছু সমস্যা থাকে, যা জন্মগত হতে পারে আবার অসুখের কারণে হতে পারে।
৩. জন্মগত সমস্যার কারণে হয়ত ডিম আসছে না, তার টিউব ব্লক, জরায়ু যেটা আছে সেটা বাচ্চাদের মতো।
৪. আরও কিছু অসুখ আছে, যেমন: ওভারিয়ান চকলেট সিস্ট, এন্ডোমেট্রিওসিসের কারণে হতে পারে।
৫. হরমোনের কারণেও হতে পারে। যেমন থাইরয়েডের সমস্যার কারণে হতে পারে।
৬. আর যৌনবাহিত রোগের কারণে মেয়েদের প্রজনন অঙ্গগুলোর ক্ষতি করে। সেজন্য বন্ধ্যাত্ব হতে পারে।

পুরুষের যেসব কারণে বন্ধ্যাত্ব

জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ফজল নাসের বলছেন, তাদের অভিজ্ঞতা হচ্ছে পুরুষরা বন্ধ্যাত্বের সমস্যা নিয়ে অনেক দেরিতে চিকিৎসকের কাছে যান। কেননা সন্তান না হলে শুরুতেই স্ত্রীকে চিকিৎসকের কাছে নেওয়া হয়। পুরুষদের বন্ধ্যত্বের মূল কারণগুলো কী জানালেন তিনি।

১. একটা কারণ এজোস্পার্মিয়া, অর্থাৎ বীর্যের মধ্যে শুক্রাণু নেই। তার নালির কোথাও বাধা সৃষ্টি হয়েছে তাই শুক্রাণু মিলতে পারছে না। শুক্রাণু তৈরি হওয়ার যে স্থান অণ্ডকোষ, কোনো কারণে সেটি তৈরিই হয়নি।
২. অনেক সময় শুক্রাণু থাকে কিন্তু পরিমাণে কম থাকে।
৩. আবার শুক্রাণুর পরিমাণ ঠিক আছে কিন্তু মান ঠিক নেই। যার ফলে সে ডিম ফার্টিলাইজ করতে পারে না।
৪. এছাড়া টেস্টোস্টেরন হরমোনও ‘সিক্রেশন’ হতে হবে।
৫. প্রজনন অঙ্গে কোনো ধরনের আঘাত।
৬. অস্ত্রোপচারের কারণে সৃষ্ট বাধা।
৭. প্রজনন অঙ্গে যক্ষ্মা।
৮. ডায়াবেটিস।
৯. ছোটবেলায় মাম্পস।
১০. এমনকি মাথায় চুল গজানোর ওষুধও পুরুষদের সন্তান ধারণের অক্ষমতার উৎস।

যে ধরনের চিকিৎসা রয়েছে

বাংলাদেশে এখন বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসার নানা ব্যবস্থা রয়েছে। সে সম্পর্কে ডা. সেলিনা আক্তার বলছিলেন, ‘যখনই কোনো কাপলের এক বছর বাচ্চা হচ্ছে না, তাদের অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে আসতে হবে। বয়স যদি ত্রিশের বেশি হয়, সেক্ষেত্রে আমরা এক বছর অপেক্ষা করতে মানা করি। তাদের তার আগেই ডাক্তারের কাছে চলে আসতে হবে। ছয় মাসের মধ্যে যদি না হয়। আর বয়স যদি ত্রিশের নিচে হয় তাদের বলি এক বছরের কথা।’

এছাড়া আজকাল অনেকেই পেশাগত কারণে সন্তান ধারণে সময় নেন, সেটি এক এসময় সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

মানুষের জীবনযাত্রায় যে পরিবর্তন এসেছে সেটি স্বাস্থ্যসম্মত করা পরামর্শ দিচ্ছেন তিনি।

১. মেয়েদের খাদ্যাভ্যাস ঠিক করতে হবে।
২. ক্যালরি খাওয়া কমাতে হবে।
৩. ঘরে রান্না খাবার খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।
৪. ব্যায়াম করতে হবে।
৫. শরীরের স্বাভাবিক ওজন রক্ষা করতে হবে।
৬. জীবনাচারণ পরিবর্তন করতে হবে।
৭. দিনে ঘুমানো, রাতে জেগে থাকার মত অভ্যাস বদলাতে হবে।
৮. বয়স থাকতে বাচ্চা নিতে হবে।

ডা. সেলিনা আক্তার বলেছেন, নারীদের ডিম্বাণু বৃদ্ধির জন্য ওষুধ, হরমোন ইনজেকশন দেন তারা। ডিম্বাশয়, এর নালী ও জরায়ুর সমস্যা দেখতে ল্যাপারস্কপি রয়েছে। কিছুদিন আগে স্বল্প পরিসরে চালু হয়েছে স্টেম সেল থেরাপি। সন্তান জন্মদানে অক্ষম দম্পতির দেহ থেকে শুক্রাণু ও ডিম্বাণু সংগ্রহ করে কৃত্রিম পরিবেশে তা নিষিক্ত করে পুনরায় স্ত্রীর জরায়ুতে স্থাপন করা বা টেস্টটিউব বেবির ব্যবস্থা শুরু হয়েছে প্রায় কুড়ি বছর আগে। তবে বাংলাদেশে সন্তানহীনতার চিকিৎসা যতটুকু রয়েছে তার বেশিরভাগেই নারীদের জন্য এবং তা মূলত বিভাগীয় শহরভিত্তিক।

দেশের সবগুলো বিভাগীয় শহরে মেডিকেল কলেজগুলোতে এর ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। ঢাকায় শুধু বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসায় বেসরকারি ক্লিনিক রয়েছে। বড় বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে ইনফার্টিলিটি বিভাগ রয়েছে।

পুরুষদের জন্য কিছু চিকিৎসার কথা বলছিলেন চিকিৎসক ফজল নাসের:

ওষুধ দিয়ে শুক্রাণু বাড়ানো যেতে পারে। স্বাভাবিক হচ্ছে প্রতি মিলিতে চল্লিশ থেকে ১২০ মিলিয়ন শুক্রাণু থাকার কথা। যদি সংখ্যাটা ১০ মিলিয়নের নিচে নেমে যায়, তাহলে কৃত্রিম গর্ভধারণে যেতে হবে। যদি পুরোপুরি অবস্ট্রাকশন হয়ে থাকে যে, শুক্রাণু আসছে না, তাহলে দেখতে হবে অণ্ডকোষটা সক্রিয় আছে কি না। অণ্ডকোষ সক্রিয় থাকলে সেখান থেকে সুঁই দিয়ে শুক্রাণু নিয়ে এসে টেস্টটিউব পদ্ধতিতে সন্তান জন্ম দেয়া যায়। ‘পৃথিবীর ভালো কেন্দ্রগুলোতেও অবস্ট্রাকশনের সার্জারি সফল হওয়ার হার মোটে ২৫ শতাংশ এবং এটি খুবই ব্যয়বহুল’, বলেন নাসের।

ধৈর্য, ব্যয় ও শারীরিক কষ্ট

বিশ্বব্যাপী পুরুষদের বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসায় সাফল্যের হার কম। নারী পুরুষ দুজনের জন্যই বন্ধ্যত্বের চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদি।তাই এক্ষেত্রে ধৈর্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।আর এর চিকিৎসা প্রায়ই ব্যয়বহুল হয়ে থাকে। বিশেষ করে টেস্টটিউব পর্যন্ত যদি বিষয়টি গড়ায়।

বেসরকারি পর্যায়ে এর খরচ দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা। কিন্তু এটি একবারে সফল নাও হতে পারে। আর বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসা অনেক কষ্টকর।

হরমোন ইনজেকশনে অসময়ে ব্লিডিং হয়। দেখা যায় পিরিয়ডের সময় না কিন্তু আটদিন দশদিন ধরে চলে। পেটে অসম্ভব ব্যথা হয়। চুল পড়ে যাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। এছাড়া ওষুধ খেতে হয় ইনজেকশনের ডেটের সাথে হিসাব করে। সেটার হিসাব মেলানো। মাসিকের দ্বিতীয় দিনে ওষুধ খেতে হবে। মিস হয়ে গেলে ওই মাসের কোর্সটা আর হয় না। ভুল হওয়ার ভয়, কিছুদিন পর পর সময় বের করে ডাক্তারের কাছে যাওয়া এটা খুব স্ট্রেসফুল।

সাননিউজ/এএএ

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনে মনোনয়ন ঘোষণা: মির্জা ফখরুলের কুশপুত্তলিকা দাহ

মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনে (সদর–গজারিয়া) মনোনয়ন ঘোষণার প্রতিবাদে বিএনপির মহাসচিব...

ফরিদপুর-১ আসনে মনোনয়ন পেলেন খন্দকার নাসিরুল ইসলাম

ফরিদপুর-১ (মধুখালী, বোয়ালমারী ও আলফাডাঙ্গা) আসনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন জাতীয়তাব...

কুষ্টিয়ায় সারের ডিলারসহ ৩ ব্যবসায়ীকে জরিমানা

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে সার বিক্রি না করে অবৈধভাবে মজুদ, মেয়াদোত্তীর্ণ কৃষি ওষু...

সীমান্তের বসবাসরত নাগরিকদের সাথে কুষ্টিয়া বিজিবির মতবিনিময়

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (৪৭ বিজিবি) কুষ্টিয়া ব্যাটালিয়নের অধীনস্থ পৃথক দুটি বিও...

গজারিয়ায় সিলিন্ডার বিস্ফোরণে দুই বাড়ি পুড়ে ছাই

মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার ইমামপুর ইউনিয়নে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে দুটি বসতবাড়ি প...

ফরিদপুর-১ আসনে মনোনয়ন পেলেন খন্দকার নাসিরুল ইসলাম

ফরিদপুর-১ (মধুখালী, বোয়ালমারী ও আলফাডাঙ্গা) আসনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন জাতীয়তাব...

ঝালকাঠিতে আন্তঃকলেজ ফুটবলে শের-ই বাংলা ফজলুল হক কলেজ চ্যাম্পিয়ন

"এসো দেশ বদলাই, পৃথিবী বদলাই" শ্লোগানে তারুণ্যের উৎসব উপলক্ষে ঝালকা...

মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনে মনোনয়ন ঘোষণা: মির্জা ফখরুলের কুশপুত্তলিকা দাহ

মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনে (সদর–গজারিয়া) মনোনয়ন ঘোষণার প্রতিবাদে বিএনপির মহাসচিব...

গাজায় ইসরায়েলি যুদ্ধাপরাধের প্রমাণ রয়েছে: জাতিসংঘ মহাসচিব

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সতর্ক করে বলেন, ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে যুদ্ধাপ...

 শুধু খালেদা জিয়া এসএসএফের সুবিধা পাবেন, পরিবারের অন্য সদস্যরা নয়

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকেই শুধু এসএসএফের নির...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা