ছবি: সান নিউজ
সারাদেশ

নদীর পাড়ে চলছে মাটিখেকোদের দৌরাত্ম্য, ভাঙন আতঙ্কে গ্রামবাসী

মাদারীপুর প্রতিনিধি

মাদারীপুরের প্রধান দুটি নদী—আড়িয়াল খাঁ ও কুমার নদীর পাড়ের মাটি কেটে নিচ্ছে দুর্বৃত্তরা। এ দুটি নদীর অন্তত ২০টি স্থানের মাটি কেটে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। রাতের আঁধারে ও ভোরে অবৈধভাবে নদীর পাড়ের মাটি কাটা হচ্ছে। এতে ওইসব গ্রামের মানুষ ফসলি জমি হারানোর পাশাপাশি নদীভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছেন। স্থানীয়রা একাধিকবার প্রশাসনকে জানালেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাদারীপুর সদর উপজেলার পাঁচখোলা ইউনিয়নের উত্তর মহিষেরচর গ্রামের আড়িয়াল খাঁ নদীর পাড় থেকে স্থানীয় আবু চৌকিদারের ছেলে ইলিয়াস চৌকিদার তার নিজস্ব লোকজন নিয়ে রাতের আঁধারে কিংবা কখনও ভোর ৫টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত মাটি কেটে ট্রলারে করে নৌপথে সেই মাটি নিয়ে যাচ্ছেন। প্রথমে তিনি নিজের জমি থেকে মাটি কাটলেও পরবর্তীতে স্থানীয় মো. খলিল চৌকিদার ও মো. বাবুল চৌকিদারের জমি থেকেও মাটি কেটেছেন। তারা ইলিয়াস চৌকিদারকে মাটি কাটতে নিষেধ করলেও তিনি তা শোনেননি।

এদিকে নদীর পাড়ের মাটি কেটে গর্ত হওয়ায় কাদের সরদারের লাউ, লালশাক, টমেটো, করল্লাসহ তার সবজির বাগান ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এছাড়া মিন্টু সরদারের বসতবাড়িটিও হুমকির মুখে পড়েছে। এখনই মাটি কাটা বন্ধ না হলে পুরো গ্রামটি নদীভাঙনের ঝুঁকিতে পড়বে।

আরও জানা যায়, মাদারীপুর সদর উপজেলার পাঁচখোলা ইউনিয়নের উত্তর মহিষেরচর গ্রামের আড়িয়াল খাঁ নদীর পাড়ে ২টি স্থানে, একই ইউনিয়নের কাতলা বাহেরচরে ২টি স্থানসহ মাদারীপুর জেলায় কমপক্ষে ২০টি স্থানে নদীর মাটি কেটে চুরির একই চিত্র দেখা যাচ্ছে। এসব স্থানের মধ্যে রয়েছে—মাদারীপুর সদর উপজেলার রাজারচর, পখিরা, তিন নদীর মুখ, চর কালকিনি, চর হোগলপাতিয়া, চর ব্রাহ্মন্দীসহ একাধিক স্থান। এসব স্থান থেকে রাতের অন্ধকারে কোথাও ড্রেজার মেশিনে, আবার কোথাও কোদাল দিয়েও মাটি কেটে ট্রলারে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এই মাটিগুলো বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে ইটভাটায়।

মাদারীপুর সদর উপজেলার পাঁচখোলা ইউনিয়নের উত্তর মহিষেরচর গ্রামের শিকদারবাড়ি জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা আলমগীর শিকদার বলেন, “আমাদের এই গ্রামে স্থানীয় ইলিয়াস চৌকিদার রাতের আঁধারে আড়িয়াল খাঁ নদীর পাড়ের মাটি কেটে নিচ্ছেন। আমি এ ব্যাপারে প্রতিবাদ করায় ইলিয়াস আমাকে নানা ধরনের হুমকি দিয়েছে। এমনকি আমার চোখ তুলে ফেলারও হুমকি দিয়েছে।”

একই গ্রামের বাসিন্দা আসাদুজ্জামান সাইফ বলেন, “আমরা এই বিষয়টি বহুবার প্রশাসনকে জানিয়েছি। কিন্তু তবুও মাটি চুরি থামানো যায়নি। প্রতিদিনই রাতের আঁধারে তারা ট্রলারে করে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। এই গ্রামের আড়িয়াল খাঁ নদীর ৪ থেকে ৫টি স্থানে এভাবেই মাটি কাটা হচ্ছে। এটা যদি বন্ধ না হয়, তাহলে পুরো গ্রামটাই হুমকির মুখে পড়বে।”

আরেক বাসিন্দা মিন্টু সরদার বলেন, “প্রতিদিন রাতেই এখান থেকে মাটি চুরি করে নিয়ে যায়। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের বসতবাড়ি ও ফসলি জমি সব নদীগর্ভে চলে যাবে। আমরা এর প্রতিকার চাই।”

একই এলাকার কাদের সরদার বলেন, “আমার ফসলি জমির পাশ থেকেই মাটি কাটা হয়েছে। আমার জমিতে ফাটল দেখা দিয়েছে। তাই আমার জমিও হুমকির মুখে আছে। তাছাড়া পাশে আছে ইরি ধানের ক্ষেত, সেটিও ঝুঁকির মধ্যে।”

স্থানীয় মো. বাবুল চৌকিদার বলেন, “আমার প্রায় তিন কড়া জমি থেকে মাটি কেটে নিয়ে গেছে ইলিয়াস চৌকিদার। তাকে না বলেও তিনি তা শোনেন না।”

আরেক ভুক্তভোগী খলিল চৌকিদার বলেন, “আমার জমি থেকেও মাটি কেটে নিয়ে গেছে। রাতের আঁধারে মাটি চুরি হয়ে যায়। আর আমাদের এলাকায় এগুলো করছে ইলিয়াস চৌকিদার। এখনই এসব বন্ধ না হলে নদীর পাড়ের ফসলি জমিগুলো একসময় নদীগর্ভে চলে যাবে।”

স্থানীয় শাজাহান চৌকিদার বলেন, “আমার জমির পাশ থেকেও মাটি কাটা হয়েছে। এতে আমার ফসলি জমি হুমকির মুখে রয়েছে।”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন স্থানীয় বলেন, “মাঝে মাঝে প্রশাসনের অভিযান চললেও তা সাময়িক প্রভাব ফেলে। কয়েক দিন বন্ধ থাকলেও পরবর্তীতে আবার আগের মতোই অবৈধ মাটি তোলা শুরু হয়। তাই এই কাজে জোরালো ও টেকসই উদ্যোগ না নিলে স্থানীয়রা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বেন।”

মাদারীপুরের স্থানীয় আইনজীবী আবুল হাসান সোহেল বলেন, “নদী থেকে মাটি তোলা মানে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহকে ক্ষতিগ্রস্ত করা। এতে নদীর ভারসাম্য নষ্ট হয় এবং ক্রমান্বয়ে নদীভাঙন বাড়ে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে চরাঞ্চলগুলো মানচিত্র থেকেই হারিয়ে যাবে। পাশাপাশি স্থানীয়রাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।”

মাদারীপুর উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট মাসুদ পারভেজ বলেন, “নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলোতে নিয়মিত টহল ও মনিটরিং ব্যবস্থা চালু করা দরকার। অবৈধ মাটি খনন বন্ধে জরুরি ভিত্তিতে আইন প্রয়োগ ও জনসচেতনতা বাড়ানোর মাধ্যমে এই মাটি কাটা বন্ধ করতে হবে।”

মহিষেরচর এলাকার অভিযুক্ত ইলিয়াস চৌকিদার বলেন, “আমি অনেক আগে মাটি কেটেছিলাম। কিন্তু এখন আর মাটি কাটি না। যখন দেখেছি মাটি কাটলে অন্যের ক্ষতি হয়, তখন থেকেই এই কাজ বন্ধ করেছি।”

মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক আফসানা বিলকিস বলেন, “ইতিমধ্যেই এই ব্যাপারে আমরা একাধিকবার মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেছি। যারা নদীর মাটি কাটছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ব্যাপারে কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।”

সাননিউজ/আরপি

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

কম খরচে বেশি লাভ, মাদারীপুরে আখ চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে

একসময় মাদারীপুর জেলায় ব্যাপক পরিমাণে আখ চাষ হলেও দীর্ঘমেয়াদি ফসল হওয়ায় কৃষকরা...

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সড়কে দুর্ঘটনা, আহত এক

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) অভ্যন্তরীণ সড়কে শাটলকার ও ভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্...

অ্যাটর্নি জেনারেল পদত্যাগ করে নির্বাচন করার ঘোষণা দিলেন 

অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান তার পদ থেকে পদত্যাগ করে নির্বাচন করার ঘোষণ...

জাকির নায়েককে আপাতত বাংলাদেশে আসার অনুমতি দিচ্ছে না সরকার

ইসলামী বক্তা, ভারতীয় বংশোদ্ভূত জাকির নায়েককে আপাতত বাংলাদেশে আসার অনুমতি না দ...

ঢাকা-১৪ আসনে বিএনপি প্রার্থী সানজিদা ইসলাম তুলির নেতৃত্বে প্রথম পদযাত্রা

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ঢাকা-১৪ আসনের মনোনীত প্রার্থী সানজিদা ইসল...

২৪ ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগের আলটিমেটাম বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরকে

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরকে আগামী ২...

বিএনপি ভেসে আসা দল নয়, বিএনপিকে খাটো করে দেখবেন না

বিএনপিকে খাটো করে দেখবেন না, উপদেষ্টা পরিষদ পক্ষপা...

গুম প্রতিরোধ আইনে চূড়ান্ত অনুমোদন, সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড

গুম প্রতিরোধ অধ্যাদেশে চূড়ান্ত অনুমোদন, সর্বোচ্চ স...

সৌদি আরবে ১৭ হাজার নারী শিক্ষকে দেয়া হবে সংগীত প্রশিক্ষণ

সৌদি আরব সরকার বিদ্যালয় পর্যায়ে সংগীত শিক্ষা চালুর বড় পদক্ষেপ নিয়েছে। দেশের শ...

‘ঘি আমাদের লাগবেই, সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে বাঁকা করব’ — নো হাংকি পাংকি

জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে গণভোটের দাবিতে সরকারকে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছে জামা...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা