ছবি: সংগৃহীত
জাতীয়

হাসিনার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর চায় বাংলাদেশ, পথে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক বাধা ভারত

সান নিউজ অনলাইন 

বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ঘোষিত মৃত্যুদণ্ড এখন দুই দেশের কূটনৈতিক অচলাবস্থার কেন্দ্রবিন্দুতে দাঁড়িয়েছে। দেশের অভ্যন্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা হওয়ার পর থেকে ঢাকা তার প্রত্যর্পণ দাবি জানালেও, নয়াদিল্লি বিষয়টি ‘পর্যবেক্ষণাধীন’ বলে জানাচ্ছে। এর ফলে দণ্ড কার্যকর হবে কি না—তা সম্পূর্ণ নির্ভর করছে ভারতের সিদ্ধান্তের ওপর।

শেখ হাসিনা বর্তমানে ভারতে নির্বাসিত অবস্থায় আছেন। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান দমনে ২০২৪ সালে ব্যাপক সহিংসতার অভিযোগে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। দেশজুড়ে দমন–পীড়ন, ফাঁসির নির্দেশ এবং শক্তি ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়ার অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অনুপস্থিতিতেই তার বিচার চলে। সেই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কার্যকর হওয়ার আগেই তিনি ভারতের অভিমুখে পালিয়ে যান।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসনের শেষ দিকে হাসিনা ক্রমেই কর্তৃত্ববাদী হয়ে ওঠেন। কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংস দমনে অন্তত এক হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটে বলে জাতিসংঘ মানবাধিকার দপ্তর জানায়। তবে এই দমন–পীড়ন আন্দোলনকে থামাতে তো পারেনিই, বরং আরও বিস্তৃত করে তোলে। নিরাপত্তা বাহিনীর অনেক অংশও সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় শেষ পর্যন্ত তিনি দেশ ছাড়তে বাধ্য হন।

১৯৭৫ সালের পরিবারের হত্যাযজ্ঞ, ছয় বছরের নির্বাসন, ১৯৮১ সালে দেশে ফেরা, ১৯৯৬ ও ২০০৮ সালে ক্ষমতায় ফেরা—এসব ইতিহাস নতুন করে আলোচনায় এসেছে তার পতনের পর। একসময় ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতির প্রতীক হিসেবে পরিচিত হলেও, সময়ের পরিক্রমায় তিনি হয়ে ওঠেন ক্ষমতা আঁকড়ে থাকা দৃঢ় নেতৃত্ব, যা পরিণত হয় বিতর্কে। মানবাধিকার লঙ্ঘন, বিরোধী দমন, নির্বাচনে অনিয়ম—এসব অভিযোগ স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক মহলে সমালোচনার মুখে ফেলে তাকে।

নতুন পরিস্থিতিতে দুই দেশের মধ্যে জটিলতা তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণার পরদিনই ভারতকে ‘বিলম্ব না করে’ তাকে হস্তান্তর করতে অনুরোধ জানায়। ঢাকা মনে করছে—বিচার সম্পন্ন হওয়ায় প্রত্যর্পণে আর কোনো বাধা থাকা উচিত নয়।

কিন্তু ভারতের অবস্থান অনিশ্চিত। দেশটির অভ্যন্তরেও মৃত্যুদণ্ড প্রযোজ্য হলেও, দিল্লির কূটনীতিকরা ইঙ্গিত দিচ্ছেন—এ মামলাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হিসেবে ব্যাখ্যা করে তারা প্রত্যর্পণ না করার পথ বেছে নিতে পারে। দুই দেশের প্রত্যর্পণ চুক্তিতেও ‘রাজনৈতিক অপরাধের ক্ষেত্রে’ ব্যতিক্রম রাখার সুযোগ রয়েছে।
সাবেক কূটনীতিকরা বলছেন, নয়াদিল্লি বিষয়টি দ্রুত নিষ্পত্তি করবে না, বরং সর্বশেষ আইনি ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে সময় নেবে। ভারতের উদ্বেগ—হাসিনাকে ফেরত পাঠালে দেশের স্থিতিশীলতায় নতুন ঝুঁকি তৈরি হতে পারে এবং এতে উগ্রবাদী গোষ্ঠীগুলোর সক্রিয়তা বাড়তে পারে।

ট্রাইব্যুনালের রায় ঘোষণার পর আদালতকক্ষে অনেক ভুক্তভোগী পরিবার সন্তোষ প্রকাশ করলেও তারা স্পষ্ট জানায়—দণ্ড কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত তাদের শান্তি ফিরবে না। এক নিহত বিক্ষোভকারীর বাবা আবদুর রব বলেন, ‘রায়ে কিছুটা সান্ত্বনা পেলেও আমরা পরিপূর্ণ ন্যায়বিচার চাই—ওটা হবে তার দণ্ড কার্যকর হলে।’

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে এই রায় বড় ধরনের অস্থিরতা তৈরি করেছে। আওয়ামী লীগ দলটি নিষিদ্ধ হওয়ায় তাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। অন্যদিকে বিরোধী দলগুলোর সামনে সুযোগ তৈরি হলেও, দেশের গভীর বিভক্তি সহজে কাটবে না। বিশ্লেষকদের মতে, শেখ হাসিনার রাজনীতি হয়তো শেষ পর্যায়ে পৌঁছেছে, কিন্তু আওয়ামী লীগের মতো একটি বড় দল আবারও সংগঠিত হয়ে ফিরে আসার চেষ্টা করবে—তবে তার নেতৃত্বে নয়।

দুই দেশের মধ্যে এখন অচলাবস্থার কেন্দ্রবিন্দুতে একটি প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে—ভারত কি তাকে ফেরত পাঠাবে, নাকি রাজনৈতিক শরণার্থী হিসেবে রেখে দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিকে আরও অনিশ্চিততার দিকে ঠেলে দেবে?

সাননিউজ/এও

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

ক্ষমতায় গেলে ইমাম, মুয়াজ্জিনদের ভাতা চালুর ঘোষণা তারেক রহমানের

বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের সম্মানী ভাতা চালুর পরিকল্পনা র...

শেখ হাসিনার পক্ষে লড়বেন জেডআই খান পান্না

দীর্ঘ শাসনামলে টিএফআই-জেআইসি সেলে বিরোধী মতাদর্শের...

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দুই সপ্তাহের জন্য বন্ধ ঘোষণা

ভূমিকম্পের পর পরিস্থিতি এবং ঝুঁকিপূর্ণ আবাসিক হলসমূহের নিরাপত্তা বিবেচনায় ঢাক...

যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নতুন সামরিক অভিযান শুরু করতে প্রস্তুত

যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলাকে কেন্দ্র করে নতুন ধরনের স...

হাতিয়ায় বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, আহত ২২

নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা ও...

মাসুদ কামালের তীব্র সমালোচনা, সাদিক কায়েমকে সংযত হতে বললেন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু...

হাসিনার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর চায় বাংলাদেশ, পথে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক বাধা ভারত

বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধ...

মধ্যপ্রাচ্যে নতুন মেরুকরণ,  ট্রাম্প-সৌদি ঘনিষ্ঠতায় ইসরায়েলের অস্বস্তি বাড়ছে

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সর্বশেষ সৌদি...

হার্ট ও ফুসফুসে ইনফেকশন, মেডিকেল বোর্ডের বিশেষ পর্যবেক্ষণে খালেদা জিয়া

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার হার্ট ও চেস্টে (ফুস...

রাবির আন্তর্জাতিক সম্মেলনে সেরা তিনে ইবি শিক্ষার্থীদের গবেষণাপত্র

'সংকেত প্রক্রিয়াকরণ, তথ্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থা' বিষয়ক (SPICSCON-2025) আ...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা