মানবতাবিরোধী অপরাধের দুই মামলায় অভিযুক্ত ১৩ সেনা কর্মকর্তাকে আজ রোববার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ (আইসিটি-১)-এ হাজির করা হবে। এ উপলক্ষে ট্রাইব্যুনাল চত্বরে নেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সকাল থেকে ট্রাইব্যুনালের সামনে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ও পুলিশ অবস্থান নিয়ে নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তোলে। আদালত ভবনের চারপাশ ও গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশপথগুলোতে অতিরিক্ত চেকপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে।
টানা দ্বিতীয় দিনের মতো আজ ওই ১৩ কর্মকর্তাকে আদালতে হাজির করা হচ্ছে। গত ২২ অক্টোবর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর হেফাজতে থাকা অবস্থায় কড়া নিরাপত্তায় তাঁদের প্রথমবার ট্রাইব্যুনালে আনা হয়। সেদিন ট্রাইব্যুনাল মোট ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। পাশাপাশি পলাতক আসামিদের আদালতে হাজির হওয়ার জন্য দুটি জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আদেশ দেওয়া হয়।
প্রসিকিউশনের দায়ের করা দুই মামলায় মোট ২৮ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। অভিযোগপত্রে উল্লেখ আছে, অভিযুক্তদের মধ্যে আছেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সেনাবাহিনীর ২৩ জন বর্তমান ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং আরও কয়েকজন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি। অভিযোগগুলোর মূল কেন্দ্রবিন্দু হলো আটকের পর নির্যাতন, গুম এবং বেআইনি আটককরণ।
প্রথম মামলাটি র্যাব-পরিচালিত টাস্ক ফোর্স ফর ইন্টারোগেশন (টিএফআই)–কে কেন্দ্র করে গঠিত। অভিযোগ অনুযায়ী, ২০১৬ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সময়কালে টিএফআই সেলে মোট ১৪ জন ব্যক্তিকে আটক রেখে নির্যাতন করা হয়। প্রসিকিউশন দাবি করেছে, সংগঠিতভাবে, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন করে এসব কর্মকাণ্ড সংঘটিত করা হয়েছে।
দ্বিতীয় মামলাটি ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স (ডিজিএফআই) পরিচালিত জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেল (জেআইসি)–কে কেন্দ্র করে। অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০১৬ থেকে ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত জেআইসি সেলে ২৪ জনকে আটক রাখা হয় এবং তাঁদের ওপর বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন চালানো হয়। প্রসিকিউশন বলছে, এসব কর্মকাণ্ড ছিল মানবতাবিরোধী অপরাধের মানদণ্ডে পড়ে এমন গুরুতর লঙ্ঘন।
গত ৮ অক্টোবর আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গ্রহণের পর ট্রাইব্যুনাল মোট ৩০ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। তাঁদের মধ্যে ২৩ জন বর্তমান ও অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা। পরোয়ানা জারির পর থেকেই আসামিদের ধরতে বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান পরিচালনা করছে।
আজকের হাজিরা নিয়ে আদালত চত্বরে কঠোর সতর্কতা বজায় রাখা হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মামলাগুলোর গুরুত্ব বিবেচনা করে আদালতে আসামিদের নিরাপদ উপস্থিতি নিশ্চিত করা হচ্ছে। আদালতের কার্যক্রম নির্বিঘ্ন রাখতে সাধারণ মানুষের প্রবেশও সীমিত করা হয়েছে।
মামলাগুলোর পরবর্তী কার্যক্রম আজ আসামিদের হাজিরার পর আদালতের নির্দেশনার মাধ্যমেই নির্ধারিত হবে বলে জানা গেছে।
সাননিউজ/এও