ঐতিহ্য ও কৃষ্টি

আদিবাসী না উপজাতি!

দিয়াত মাহমুদ শাকিল:

স্বাধীনতার পূর্বের থেকেই বাংলাদেশ নামক এই ভূখণ্ডে বহু জাতির বসবাস। বাঙালির পাশাপাশি সুদূর অতীত থেকে এই ভূখণ্ডে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তঞ্চগ্যা, মণিপুরি,খাসিয়া, সাঁওতাল, মান্দিসহ ৪৫টি জাতিসত্তার মানুষ বসবাস করে আসছে। বাংলাদেশের পাহাড়-সমতল মিলে এমন জাতিসত্তার মানুষের সংখ্যা চল্লিশ লাখের বেশি।

দেশ স্বাধীনের পর থেকে এই এই চল্লিশ লাখ মানুষ তাদের কিছু দাবী দফা রাষ্ট্রের কাছে তুলে ধরছেন। তাদের দাবী গুলোর মধ্যে নিজেদের আদিবাসি হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার দাবীটি অধিক জোরালো। তাদের এই দাবীর পক্ষে লড়াই সংগ্রামের ইতিহাস কম নয়। ‘হিল উইম্যান্স ফেডারেশন’-এর নেত্রী একজন কল্পনা চাকমার সন্ধান তো ২৩ বছরের মিললো না। সেসব সংগ্রামের কথা না হয় অন্য দিন বলবো বরং আজ না হয় তাদের এই দাবীর পক্ষে কিছু কথা বলা যাক।

প্রথমে জেনে নেই, আদিবাসি কারা?

জাতিসংঘ কর্তৃক আদিবাসি শব্দটির কোন নিদিষ্ট ডেফিনিশন ঠিক করে দেওয়া হয়নি। তবে, যে কথাটির সাথে বেশির ভাগ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী সহমত পোষণ করেন সেটি হল, ‘সাধারণত কোন একটি নিদিষ্ট এলাকায় দখলদার ও অনুপ্রবেশকারী জনগোষ্ঠীর পূর্বে যারা বসবাস করতো (এটা ঔপনিবেশিক অভিজ্ঞতার সাথে সম্পৃক্ত এবং আমেরিকা,কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য -বাংলাদেশের ক্ষেত্রে নয়) এবং এখনো করে; যাদের নিজস্ব ও আলাদা সংস্কৃতি,রাজনীতি ও মূল্যবোধ রয়েছে; যারা নিজেদের আলাদা সামষ্টিক সমাজ-সংস্কৃতির অংশ হিসেবে চিহ্নিত করে এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সমাজে সংখ্যালঘু হিসেবে পরিগণিত, তারাই আদিবাসি। অর্থাৎ, একটি রাষ্ট্র ব্যবস্থায় বসবাসকারি একদল জনগোষ্ঠী যারা সাংস্কৃতিক-ভাবে সংখ্যালঘু,যাদের নিজস্ব সংস্কৃতি আছে যা জনতাত্ত্বিক সংখ্যাগুরুর থেকে আলাদা এবং যাদের একটি স্বতন্ত্র সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকার আছে এবং যারা রাষ্ট্রের সামাজিক,অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে প্রান্তিক তারাই আদিবাসি হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার দাবী রাখে।

পৃথিবীর বিভিন্ন রাষ্ট্র এই সজ্ঞা অনুযায়ী তাদের আদিবাসিদের স্বীকৃতি দিয়েছে। এখনো দিচ্ছে। তাহলে বাংলাদেশের আদিবাসিদের স্বীকৃতি দিতে সরকারের সমস্যা কোথায়?

সমস্যা হলো সরকারের স্বদিচ্ছার অভাব। কেননা উপরের সজ্ঞাটি বিশ্লেষণ করলে খুব সহজেই বোঝা যায় বাংলাদেশে বসবাসকারী তথা কথিত উপজাতিয় মানুষেরা আদিবাসি হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার অধিকার রাখে। কিন্তু শুধুমাত্র সরকারের স্বদিচ্ছার অভাবে তারা তাদের অধিকার বঞ্চিত হচ্ছে। উল্টো সরকারের পক্ষ থেকে যে যুক্তিটি দেখানো হচ্ছে সেটি হল, ‘তারা এই অঞ্চলের আদি বাসিন্দা নয়,তারা সবাই বাংলাদেশের ভূখণ্ডের বাহির থেকে এসেছেন’।

কিন্তু উপরে উল্লেখ যে এই কথাটি শুধু নিদিষ্ট ২/৩ টি দেশের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এছাড়াও সরকার আশংকা করছে যে তাদের আদিবাসি হিসেবে স্বীকৃতি দিলে বাংলাদেশের জাতিয় পরিচয়,ভাবমূর্তি ও সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়তে পারে। কিন্তু পৃথিবীর যে সকল রাষ্ট্র তাদের আদিবাসি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে সেখানে কিন্তু এইরকম কোন নজির আজ পর্যন্ত স্থাপন হয়নি। বরং সেখানকার আদিবাসিরা রাষ্ট্রের অন্য সকল নাগরিকদের মতো-ই আচরণ করছেন ও রাষ্ট্রের সকল সুবিধা ভোগ করছেন।

কিন্তু বাংলাদেশে ঠিক তার উল্টো চিত্র। তাদের আদিবাসি হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি না দেওয়ার রাষ্ট্রের প্রতি তাদের ক্ষোভ দিন দিন বেড়েই চলেছে। এই ক্ষোভের পরিমাণ এতই যে তারা মাঝে মাঝেই রাষ্ট্রীয় বাহিনীকেও বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখায়।

একটি রাষ্ট্রের সামগ্রিক উন্নয়ন তখন-ই হবে যখন রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের আত্ম সামাজিক উন্নতি সাধিত হবে। কিন্তু দেখা যায় বাংলাদেশের তথাকথিত উপজাতিয় মানুষগুলো সামাজিক,অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে তুলনামূলক পিছিয়ে রয়েছে। তাদেরকে আদিবাসি হিসেবে স্বীকৃতি না দেওয়া এই পিছিয়ে থাকার একটি বড় কারণ।

সুতরাং রাষ্ট্রের সামগ্রিক উন্নয়নের স্বার্থে সরকারের চিন্তা করা উচিৎ, একটি রাষ্ট্রের সকল সম্প্রদায় যখন এগিয়ে যাচ্ছে তখন এই সম্প্রদায় কেন পিছিয়ে! যদিওবা অনেক দেরি হয়ে গেছে তবুও আশা করি, শিগগিরই সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। রাষ্ট্রকে একজাতিকরনের চিন্তা ধারা থেকে সরে এসে সরকার তাদের ন্যায্য দাবির পক্ষে সমর্থন দিবেন।

লেখা: শিক্ষার্থী ও মানবাধিকার কর্মী।

সাননিউজ/এএসএম

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

ব্রাজিল দলে ফিরছেন নেইমার, বাদ ভিনিসিয়ুস

আগেই ২০২৬ বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত করেছে ব্রাজিল। বাছাইপর্বে বাকি আছে মাত্র দ...

বলিভিয়ার মানুষ  দীর্ঘ দুই দশকের বামপন্থী শাসন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে

দুই দশক ধরে লাতিন আমেরিকার দেশ বলিভিয়া শাসন করছে বামপন্থী মুভমেন্ট অব সোশ্যাল...

ডাকসু নির্বাচনে মব সৃষ্টি করে ছাত্রদলকে বাধা দেয়া হয়েছে: রিজভী

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ছাত্রদলের মনোনয়ন...

রূপলাল-প্রদীপকে মারধরে জড়িত অনেকে চিহ্নিত, গ্রেপ্তার নেই

রংপুরের তারাগঞ্জে দুই ব্যক্তিকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিও...

বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চায় ইইউ

ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনের জন্য সহায়তা করবে বলে জা...

গুলি চালানোর কথা শুনে আদালতে হাসলেন অভিনেতা সিদ্দিক

রাজধানীর গুলশানে জুলাই আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালানোর কথা শুনে কাঠগড়ায় দাঁড়ি...

ভারত-চীন সম্পর্কের  অগ্রগতি নিয়ে আশাবাদী মোদি

দীর্ঘদিনের উত্তেজনার পর ভারত ও চীনের সম্পর্ক ‘ক্রমাগত উন্নতির দিকে&rsqu...

 রাশিয়ার দুই হেলিকপ্টার কিনে বিপাকে বাংলাদেশ

রাশিয়ার কাছ থেকে দুটি হেলিকপ্টার কিনেছিল জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়...

৭৮ অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ

পদোন্নতি বঞ্চিত অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাগণের আবেদনের দ্বিতীয় পর্যায়ের প...

বনানির সিসা বারে রাব্বি হত্যায় দোষ স্বীকার করে মুন্নার জবানবন্দি

ঢাকার বনানী এলাকার ‘সিসা বারে’ ছুরিকাঘাতে রাহাত হোসেন রাব্বি হত্য...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা