ছবি : সংগৃহিত
সারাদেশ

যশোরে আমন চাষ নিয়ে দুশ্চিন্তায় ৫ লাখ কৃষক!

বেনাপোল প্রতিনিধি: যশোরে শুরু হয়েছে আমন চাষের মৌসুম। অথচ বর্ষায়ও দেখা নেই প্রত্যাশিত বৃষ্টির। সময় দ্রুত চলে যাওয়ায় তাই অধিকাংশ কৃষক সেচ দিয়ে চারা লাগানো শুরু করেছেন। এতে বাড়তি খরচ তাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। ফলে আমন চাষ নিয়ে রীতিমতো হতাশায় রয়েছেন জেলার পাঁচ লাখ কৃষক। বাড়ছে জমি পতিত থাকার শঙ্কা।

আরও পড়ুন: সাংবাদিকের উপর হামলা, আটক ২

কৃষকদের দাবি, বাড়তি খরচের কারণে এ বছর পরিত্যক্ত থাকবে অনেক জমি। অবশ্য কৃষি বিভাগের দাবি, সম্পূরক সেচ দিয়ে হলেও আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা হবে। পাশাপাশি কৃষকের অতিরিক্ত খরচের বিষয়টি সহনীয় করতে উদ্যোগ নেয়া হবে।

আষাঢ় ও শ্রাবণ মাসে সাধারণত বৃষ্টির পানির ওপর নির্ভর করে আমন চাষে নামেন চাষিরা। কিন্তু চলতি মৌসুমে যশোরে বৃষ্টি হচ্ছে না বললেই চলে। গত বছরের তুলনায় এ বছর বৃষ্টিপাতের পরিমাণ অর্ধেকের নিচে নেমেছে। ফলে জমিতে বৃষ্টির পানি না জমায় আমন আবাদ ঠিকমতো শুরু করতে পারছেন না চাষিরা।

এরই মধ্যে ধান রোপণের সময় এক মাস অতিবাহিত হওয়ায় কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে যশোরের পাঁচ লাখ কৃষকের। এ অবস্থায় বাধ্য হয়ে অনেকেই বৃষ্টির অপেক্ষায় না থেকে শ্যালো মেশিনে পানি দিয়ে ধানের চারা রোপণের কাজ শুরু করেছেন। কৃষকদের দাবি, এতে উৎপাদন খরচ যেমন বাড়বে, তেমনি পরিত্যক্ত থাকবে অনেক জমি।

আরও পড়ুন: বাউফলে অস্ত্র ও গুলিসহ আটক ১

যশোরের শার্শা উপজেলার শ্যামলাগাছী গ্রামের কৃষক আবুল কাশেম বলেন, ‘এ বছর আমন চাষের অবস্থা খুব খারাপ। আমরা খুব কষ্টের মধ্যে আছি। এক মাস আগে চাষ শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বৃষ্টি না হওয়ায় অপেক্ষায় ছিলাম।

অবশেষে শ্যালো মেশিনের পানি দিয়ে চাষ শুরু করেছি। এবার খরচ বাড়বে। প্রায় ইরি ধান চাষের মতো খরচ হবে। এ বছর লাভের আশা করতে পারছি না।’

আনিছুর রহমান নামে অপর এক কৃষক বলেন, ‘আমরা আমন চাষ করি বৃষ্টির পানির ওপর নির্ভর করে। এ বছর আকাশে কোনো বৃষ্টি নেই। ভূগর্ভস্থ পানি তুলতে ডিজেল লাগে, বিদ্যুৎ লাগে। তার দাম বাড়তি, সার-কীটনাশক, বীজ সবকিছুর দাম বাড়তি। এতে এ বছর সেচ দিয়ে আমন চাষ করে লাভ হবে বলে মনে হচ্ছে না।’

আরও পড়ুন: বাস-প্রাইভেটকার সংঘর্ষে নিহত ২

বেনাপোলের নামাজ গ্রামের মাহাবুব রহমান নামে আরেক কৃষক বলেন, এ বছর আমন ধান করার জন্য জমিতে তিনবার চাষ দিয়েছি। বৃষ্টি না হওয়ায় তা কোনো কাজে লাগেনি। এখন আবার নতুন করে চাষ দিয়ে সেচের পানি দিয়ে ধানের চারা রোপণ করছি। এতে খরচ বাড়ছে। তা ছাড়া শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। যদিও-বা পাওয়া যায়, মজুরি অনেক বেশি। সেচের মূল্যও এবার বাড়িয়েছে। সব মিলিয়ে অনেক ক্ষতিতে আছি।’

তৌহিদ ইসলাম নামে এক কৃষক বলেন, ‘এ বছর সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় অনেকে জমি ছেড়ে দিয়েছেন। আমি পাঁচ বিঘা জমি লিজ নিয়ে চাষ করতাম। এবার দুই বিঘা করব।’ তা ছাড়া বিলের মধ্যে হাজার হাজার বিঘা জমি রয়েছে। যেখানে সেচের ব্যবস্থা নেই। ফলে এ বছর অনেক জমি পতিত থাকবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

অনাবৃষ্টিসহ নানা কারণে প্রতিবছরই আমনে উৎপাদন খরচ বেড়ে চলেছে। এ অবস্থায় খরচ কমাতে সেচ, সার ও বীজে ভর্তুকির দাবি কৃষকদের।

আরও পড়ুন: দুই যুবকের মরদেহ উদ্ধার

ওয়াহিদ সরদার নামে এক কৃষক বলেন, ‘আমাদের হরিনার বিলের চারপাশে ১৭টি গ্রাম। গ্রামের কৃষক পরিবারগুলো সবাই এ বিলে ধান চাষ করে। আমন রোপণের সময় এক মাস পেরিয়ে গেলেও বিলের অধিকাংশ জমি শুকনা পড়ে আছে।

বৃষ্টির অভাবে কেউ চারা রোপণ করতে পারেনি। সেচ দিয়ে রোপণ করতে গেলে খরচ বাড়ে। তা ছাড়া সবকিছুর দাম বেড়েছে। প্রতিবছর ব্যয় বাড়ছে। এ অবস্থায় কৃষকদের সার, বীজ, ডিজেল ও বিদ্যুতে ভর্তুকি দেয়া জরুরি।’

এদিকে কৃষি বিভাগের দাবি, বৃষ্টির পানির অভাব থাকলেও সম্পূরক সেচ দিয়ে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে। পাশাপাশি কৃষকের অতিরিক্ত খরচের বিষয়টি সহনীয় করতে উদ্যোগ নেয়া হবে।

আরও পড়ুন: ব্যাটারি কারখানায় বিস্ফোরণ, আহত ১৬

যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা সুশান্ত কুমার তরফদার বলেন, এখনও সময় হাতে আছে। মধ্য-আগস্ট পর্যন্ত রোপণ করা যাবে। এ সময়ের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টি না হলে সেচ দিয়ে আমন রোপণের জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এ বছর ধানের দাম ভালো পেয়েছে কৃষক। সামনে ভালো দাম পেলে বাড়তি খরচ পুষিয়ে নিতে পারবে তারা।

তিনি আরও বলেন, ‘বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে চাষাবাদেও ব্যয় বাড়ছে। আমাদের কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি। সরকার কৃষকদের নিয়ে ভাবে। তাদের খরচ সহনীয় করতে ভবিষ্যতে কৃষকদের ভর্তুকির আওতায় আনার বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে কৃষি বিভাগ।’

প্রসঙ্গত, এ বছর যশোরে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৫০০ হেক্টর। গত বছর চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৩৮ হাজার ১৪৭ হেক্টর।

সান নিউজ/এইচএন

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

ভূমি অফিসে ঘুষ নেওয়ার ভিডিও ভাইরাল, নীরব প্রশাসন; ফুঁসছে জনগন!

মুন্সীগঞ্জ শহরের উপকণ্ঠ পঞ্চসার ইউনিয়ন ভূমি অফিসের জারিকারক লুৎফা আক্তার (৪৫)...

ছাত্রলীগ সভাপতির বসতঘরে আগুন

ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার গালুয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সভাপতি মাছুম বিল্লাহ বাপ্পির...

মুন্সীগঞ্জে বিএনপির চার নেতার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার

মুন্সীগঞ্জ জেলা বিএনপির বিভিন্ন ইউনিটের চার নেতার আবেদনের প্রেক্ষিতে বহিষ্কার...

নোয়াখালীতে মধ্যরাতে ফুটবল খেলা নিয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, আহত ১৮

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের রামপুর ও মুছাপুর ইউনিয়নের মধ্যে মধ্যরাতে ফুটবল খেলাক...

ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্টতায় ইবির এক শিক্ষার্থী আটক

আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের পক্ষে নিয়মিত ফেসবুক পোস্ট করা এবং সংগঠনটির সঙ...

নোয়াখালীতে মধ্যরাতে ফুটবল খেলা নিয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, আহত ১৮

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের রামপুর ও মুছাপুর ইউনিয়নের মধ্যে মধ্যরাতে ফুটবল খেলাক...

আজ সেই ভয়াল ১৫ নভেম্বর, ১৮ বছরেও ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি উপকূলবাসী

২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর—দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জীবনে এক বিভীষিকাময় রাত। ভয়...

দেশ স্বাধীনের ৫৪ বছরেও এ জাতির ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি: আকন

উলিপুর (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি কুড়িগ্রামের উলিপুরে ইসলামী আন্দোলন বাং...

মুন্সীগঞ্জে বিএনপির চার নেতার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার

মুন্সীগঞ্জ জেলা বিএনপির বিভিন্ন ইউনিটের চার নেতার আবেদনের প্রেক্ষিতে বহিষ্কার...

ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্টতায় ইবির এক শিক্ষার্থী আটক

আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের পক্ষে নিয়মিত ফেসবুক পোস্ট করা এবং সংগঠনটির সঙ...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা