নিজস্ব প্রতিনিধি, বান্দরবান : বান্দরবানের লামা পৌরসভা নির্বাচনে জাল ভোটের প্রতিযোগিতা এবং বিএনপি প্রার্থীর এজেন্টদের বের করে দেবার অভিযোগ উঠেছে।
শনিবার (১৬ জানুয়ারি) সকালে লামা পৌরসভা নির্বাচনে শান্তিপূর্ণভাবেই ভোট গ্রহণ শুরু হয়। সকাল বেলায় লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে ভোটারদের ভোট দিতে দেখা গেছে সবগুলো কেন্দ্রে। নারী ভোটারদের উপস্থিতি ছিলো চোখে পড়ার মত। তবে বেলার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতিও বদলাতে শুরু করে। ভোটারের উপস্থিতি কমে যাওয়ায় এবং ২ ও ৪ নাম্বার ওয়ার্ডে পুরুষ কাউন্সিয়র প্রার্থী না থাকায় কেন্দ্রগুলো দখলে নেয় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। ৫নং ওয়ার্ড'সহ কয়েকটি কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হয় বিএনপি প্রার্থীর এজেন্টদের। পৌরসভার ৮,৪,৩,২,১ নাম্বার ওয়ার্ডে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রবেশেও প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়। গণমাধ্যমের উপস্থিতি আর চ্যালেঞ্জের মুখে জাল ভোট প্রদানকারীরা সরে পড়ে। র্যাব এর উপস্থিতিতে কিছুক্ষণ ফাঁকা হয়ে চার নাম্বার ওয়ার্ডের ভোট কেন্দ্র। সুষ্ঠু নির্বাচনের অজুহাতে গণমাধ্যমকর্মীদের মোটর সাইকেলের অনুমতি না দিলেও পৌর এলাকার ৯টি ওয়ার্ডেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ভোট কেন্দ্রের আশপাশে মোটর সাইকেল নিয়ে ঘুরাফেরা করতে দেখা গেছে।
আদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নির্বাচনী আচরণবিধি লংঘনের অভিযোগে আব্দুর রহিম, মোজাফফর নামে ২ জনকে আড়াই হাজার করে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। একই সময়ে এক জনকে আটক করে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ শাহীন বলেন, ৫,২ নাম্বার ওয়ার্ডসহ কয়েকটি কেন্দ্র থেকে ধানের শীষের এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসনের উপস্থিতিতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জাল ভোট দিচ্ছেন। অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। দুই নাম্বার ওয়ার্ডে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থী প্রকাশে কেন্দ্রে ঢুকে জাল ভোট দিচ্ছেন, আমি নিজে দেখেছি। নয়টি ভোট কেন্দ্রে নয় জন ম্যাজিষ্ট্রেট দায়িত্ব পালনের কথা থাকলেও দু'একজন ছাড়া অন্যকেন্দ্র গুলোতে ছিলো না। রিটার্নিং অফিসারের কথা সাথে কাজের কোনো মিল খোঁজে পাচ্ছি না।
আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান মেয়র মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, শান্তিপূর্ণ ভাবেই ভোট গ্রহণ হয়েছে। কোথাও কোনো বিশৃঙ্খলার খবর পাইনি।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসার রেজাউল করিম জানান, শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর বিশৃঙ্খলার খবর পাওয়া যায়নি। প্রতিটি কেন্দ্রে ১ জন করে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট এবং পুলিশের একজন অফিসারসহ পুলিশ-আনসারের ১৬ জন করে সদস্য নিয়োজিত ছিলো। র্যাব ও বিজিবি সদস্যরাও টহলে ছিলেন।
এদিকে, ২৮.৪৯ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এ পৌরসভায় মোট ভোটার সংখ্যা হচ্ছে ১৩ হাজার ৩৮৯ জন। তারমধ্যে পুরুষ ভোটার ৭ হাজার ৩ জন এবং মহিলা ৬ হাজার ৩৮৬ জন। চতুর্থ বারের সাধারণ নির্বাচনে লড়ছেন ৩ জন মেয়র প্রার্থী। তারমধ্যে রয়েছেন আওয়ামীলীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মো: জহিরুল ইসলাম, বিএনপি মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী মোহাম্মদ শাহীন এবং জাতীয় পার্টি মনোনীত লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী এ.টি.এম শহীদুল ইসলাম।
এছাড়াও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে-৯ জন এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে-২৬ জন প্রাথী ছিলেন। তাদের মধ্যে ২ ও ৪ নাম্বার ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের ২ জন কাউন্সিলর প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছে।
সান নিউজ/এআর/কেটি