সারাদেশ

টং দোকানটি দৃষ্টিহীন জসিমের একমাত্র ভরসা

নিজস্ব প্রতিনিধি, লক্ষ্মীপুর : রাস্তার পাশে ছোট্ট টং দোকানটিতে ক্রেতার ভিড়। কেউ চা, আবার কেউ কেউ পান-সিগারেট কিনছেন। দোকানিও ব্যস্ত ক্রেতাদের চাহিদামতো পণ্য দিতে। নাম বলার সঙ্গে সঙ্গে এগিয়ে দিচ্ছেন পণ্য, টাকাও গুনে নিচ্ছেন। জসিম উদ্দিন এসব করছেন না দেখেই। একেবারে ছোটবেলায় ভুল চিকিৎসায় জ্যোতি হারান ২৮ বছর বয়সী এই যুবক।

তার টং দোকানটি লক্ষ্মীপুর শহরের উত্তর তেমুহনী বাসস্টেশন এলাকায়। এতে চা, পান, সিগারেট, কলা ও বিস্কুট বিক্রি করেন তিনি। দোকানের সারা দিনের উপার্জনের টাকায় কোন মতে সংসার চলে তার। তবে অন্যের বোঝা না হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াতে ব্যবসা শুরু করেন তিনি। সাবেক লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসকের দেয়া অনুদানের টাকায় দোকানের বাক্সটি কেনেন জসিম।

দৃষ্টিহীন জসিম উদ্দিন বলেন, দৃষ্টিহীনরা সমাজের বোঝা নন। ব্যবসা করে তিনি প্রমাণ করতে চান, তার এই সারাদিনের উপার্জনের টাকায় কষ্ট করে সংসার চলে।

কয়েকজন ক্রেতা বলেন, দোকানি চোখে দেখেন না। তবুও পণ্যের নাম বললেই তা বের করে দেন। আবার সঠিকভাবে টাকাও গুনে নেন। দৃষ্টিহীন হয়েও কারও কাছে হাত না পেতে ব্যবসা করছেন।

জানা গেছে, জসিমের জীবন-সংগ্রামের শুরু, যখন তার বয়স মাত্র এক বছর। ওই সময় তার রক্ত আমাশয় হয়। পরে গ্রামের চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় চোখের আলো হারান জসিম। এরপর নানা জায়গায় চিকিৎসা করালেও দৃষ্টি আর ফেরেনি। দরিদ্র পরিবারের সন্তান জসিম উদ্দিন। সদর উপজেলার চর রুহিতা গ্রামের চা দোকানি শামছুল হকের পাঁচ সন্তানের সংসারে তিনি সবার বড়। দারিদ্র্য ও শারীরিক সীমাবদ্ধতা থামাতে পারেনি জসিমকে। দৃষ্টিহীন হয়েও তিনি স্নাতক শেষ করেছেন; পড়ছেন স্নাতকোত্তরে।

জসিম বলেন, স্থানীয় দালাল বাজার সমন্বিত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী স্কুল থেকে শিক্ষার্থী খুঁজতে তার গ্রামে যান শিক্ষকরা। তাদের কাছ থেকে প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে পারেন তার নানা। পরে ওই স্কুলে জসিমকে ভর্তি করান তিনি। ভর্তির পর জসিম বুঝতে পারেন শিক্ষার গুরুত্ব। প্রতিজ্ঞা করেন উচ্চশিক্ষা গ্রহণের। কিন্তু সেই স্কুলে এসএসসির বেশি পড়ার সুযোগ ছিল না।

তবে থেমে যাননি জসিম। বাবার আর্থিক সামর্থ্য না থাকলেও ভর্তি হন লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজে। সেখানে মোবাইলে রেকর্ড করা পাঠ শুনে এবং শ্রুতি লেখকের সাহায্যে পরীক্ষা দিয়ে এইচএসসি ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক সম্পন্ন করেন। একই কলেজে বর্তমানে তিনি স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী। জসিমের পড়ালেখার খরচ চালাতে সহযোগিতা করেছেন তারই এক সহপাঠী। লিপি আক্তার নামে ওই সহপাঠীর আর্থিক সহায়তায় একাদশ শ্রেণি থেকে পড়ালেখা চালিয়ে আসছেন তিনি।

জসিম আরও বলেন, বর্তমানে লিপি স্বামীর সঙ্গে লন্ডনে বসবাস করছেন। সেখানে থেকেই নিয়মিত তার পড়ালেখার খরচ দেন। এখন লিপির স্বামীও এগিয়ে এসেছেন। দুই বছর আগে একই এলাকায় রোকেয়া বেগমের সঙ্গে জসিমের বিয়ে হয়। তাদের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। এতে তার সংসারে বেড়েছে খরচ। এরপর লক্ষ্মীপুর শহরের উত্তর তেমুহনীর এসএ পরিবহনের কাউন্টারের সামনে চা, পান, সিগারেটের মতো পণ্য বিক্রি শুরু করেন।

ব্যবসা করলেও ছোটবেলা থেকে তার ইচ্ছা চাকরি করার। সে জন্য স্নাতক শেষ করে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে আবেদনও করেছেন। এখন সংশ্লিষ্টদের সদিচ্ছা থাকলে তার ইচ্ছা পূরণ হবে। অন্যথায় দোকান বড় করবেন। নিজের ও পরিবারের স্বচ্ছলতা ফেরাবেন। ব্যবসা করে প্রমাণ করবেন, দৃষ্টিহীনরা সমাজের বোঝা নয়।


সান নিউজ/জেইউবি/এনকে

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

দুপুরের মধ্যে ১০ জেলায় ঝড়ের শঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীসহ দেশের ১০টি অঞ্চলের ওপর দিয়ে ঘণ্ট...

ভোলায় উপকূলজুড়ে কোস্টগার্ড মোতায়েন  

ভোলা প্রতিনিধি: আসন্ন ৬ষ্ঠ উপজেলা...

সমুদ্রে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা শুরু কাল 

নিনা আফরিন, পটুয়াখালী: আগামীকাল...

বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় উদ্বেগ

নিজস্ব প্রতিবেদক: কিরগিজস্তানে বা...

নজর কাড়লেন কিয়ারা

বিনোদন ডেস্ক: কান চলচ্চিত্র উৎসব...

মাথাসহ হরিণের মাংস উদ্ধার

জেলা প্রতিনিধি: নোয়াখালী জেলার দ্বীপ উপজেলার হাতিয়ায় অভিযান...

পাঁচ অঞ্চলে ঝড়-বৃষ্টির আভাস

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের ৫ অঞ্চলের ওপর দিয়ে ঝড়-বৃষ্টির আভাস...

ক্রিস্টোফার কলম্বাস’র প্রয়াণ

সান নিউজ ডেস্ক: আজকের ঘটনা কাল অতীত। প্রত্যেকটি অতীত সময়ের স...

রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশে প্রেসিডে...

ওজন নিশ্চিতে বিএসটিআই কাজ করছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিএসটিআই সঠিক ওজন ও পরিমাপ নিশ্চিত করতে ন...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা