ছবি: সংগৃহীত
রাজনীতি

যারা গণভোট চাপিয়ে দিতে চাইছে, তারা নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত: ফখরুল

সান নিউজ অনলাইন 

গণভোট হলে জাতীয় নির্বাচনের দিনই হতে হবে, আলাদাভাবে নয়-অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি এমন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আমরা খুব পরিষ্কার করে বলে দিতে চাই, গণভোট হলে নির্বাচনের দিনই হতে হবে। নির্বাচন ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতেই হতে হবে। অন্যথায়, বাংলাদেশের মানুষ কিছুতেই মেনে নেবে না। আমরা এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব। ইনশাআল্লাহ এই নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলব। যারা গণভোটের জন্য চাপ দিচ্ছে তারা নির্বাচন বানচাল করার ষড়যন্ত্র করছে।

শুক্রবার বিকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর বিপ্লব ও সংহতি দিবসের র‌্যালিপূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তরের যৌথ উদ্যোগে র‌্যালিটি নয়াপল্টন, কাকরাইল, নাইটিঙ্গেল রেস্তোরাঁ মোড় থেকে বিকাল ৪টায় শুরু হয়। শান্তিনগর, মালিবাগ, মৌচাক, মগবাজার, বাংলামোটর হয়ে সোনারগাঁও হোটেলের মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। পূর্বঘোষিত কর্মসূচিতে অংশ নিতে দুপুর থেকেই নয়াপল্টন এলাকায় জড়ো হন বিএনপিসহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নেতাকর্মীদের ঢল নামে। র‌্যালি শুরু হলে একটি খোলা ট্রাকে এতে অংশ নেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খানসহ কেন্দ্রীয় নেতারা। জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া, তারেক রহমানের ছবি সংবলিত পোস্টারসহ জাতীয় ও দলীয় পতাকা নিয়ে আসা নেতাকর্মীদের হাতে হাতে ছিল ধানের শীষ। ‘স্বাধীনতার ঘোষক জিয়া, লও লও লও সালাম’, বাংলাদেশের অপর নাম জিয়াউর রহমান’ ইত্যাদি স্লোগান দেন নেতাকর্মীরা।

তবে এদিন ব্যতিক্রমী চিত্রও দেখা গেছে র‌্যালিতে। জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের একটি ছোট পিকআপে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রতীকী মডেল তৈরি করা হয়। সেখানে কয়েদির পোশাকে ছয়জনকে রাখা হয়, যাদের শরীরে লেখা-আমরা সবাই ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’র দালাল। আরেকজনের গায়ে লেখা ‘আমি সালমান, আমি ব্যাংক লুট করি’, ‘আমি আনিসুল, আমি আইনমন্ত্রী, আমি আইন ভঙ্গ করি’ ইত্যাদি ব্যঙ্গাত্মক বার্তা। আরেকটি ভ্যানে লোহার খাঁচায় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার একটি প্রতীকী সাজিয়ে রাখা হয়, যা জনতার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এক মহিলাকে শেখ হাসিনা হিসাবে সাজিয়ে তার মুখের সামনে ঝুলছিল ফাঁসির দড়ি। সেখানে দেখা যাচ্ছে হাতজোড় করে ক্ষমা চাচ্ছেন ‘শেখ হাসিনা’।

জামায়াতে ইসলামীর দিকে ইঙ্গিত করে মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে একটা রাজনৈতিক দল, তারা কয়েকটি দল নিয়ে জোট বানিয়েছে। জোর জবরদস্তি করে নির্বাচনের আগেই গণভোট দিতে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। আমরা গণভোট মেনে নিয়েছি এবং বলেছি এটা নির্বাচনের দিনই হতে হবে। কারণ দুটি আলাদা ভোট করতে গেলে অনেক টাকা খরচ হবে। তাছাড়া মূল যে নির্বাচন, সেই নির্বাচনের ধারাবাহিকতা ক্ষুণ্ন হয়ে যাবে।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ব্যাহত করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিজেরাই একটা অবস্থা তৈরি করেছে বলেও অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘দুর্ভাগ্য আমাদের, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, যাকে আমরা সম্পূর্ণ সমর্থন দিচ্ছি; তারা আজকে নিজেরাই একটা অবস্থা তৈরি করছে, যাতে করে নির্বাচন ব্যাহত হয়। এছাড়া ওই রাজনৈতিক দলগুলো (জামায়াতসহ কয়েকটি দল) যারা গণভোটের জন্য চাপ দিচ্ছে তারাও নির্বাচন বানচাল করার ষড়যন্ত্র করছে।

সংস্কার প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ৭ নভেম্বরের চেতনা গণতন্ত্রের চেতনা, আমাদের বিএনপির জন্ম হয়েছে সংস্কারের মধ্য দিয়ে। আমাদের নেতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীরউত্তম তিনি সংস্কারের সূচনা করেছেন। আর আজকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নতুন সংস্কারের ৩১ দফা দিয়ে জাতিকে সামনে রেখে এগিয়ে দেওয়ার একটা ‘ম্যাগনাকার্টা’ দিয়েছেন। বিএনপি যে সংস্কারের কথা বলেছে বা ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছে, তা জুলাই সনদে লিপিবদ্ধ করা উচিত। জিয়া (জিয়াউর রহমান) তার সাড়ে তিন বছরের শাসনামলে বাংলাদেশে নতুন স্বনির্ভরতার পথ তৈরি করেছিলেন। এ সময় তারেক রহমানের দেওয়া সংস্কারের কাজই ঐকমত্য কমিশন শুরু করে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

জুলাই জাতীয় সনদের প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছিল যে আমরা আমাদের যেগুলো আপত্তি থাকবে অর্থাৎ যেগুলো নোট অব ডিসেন্ট থাকবে, সেখানে তা লিপিবদ্ধ থাকবে। সেটা সেখানে রাখা হয়নি। আমরা সেটা গ্রহণ করিনি আমরা প্রেস কনফারেন্স করে বলেছি।’

সরকার ও ঐকমত্য কমিশনের কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, আমরা যেগুলো গ্রহণ করিনি, কনফারেন্স করে তা বলেছি। পরবর্তী সময়ে আমরা দেখলাম, হঠাৎ করেই উপদেষ্টা কাউন্সিলের একজন সদস্য প্রেস কনফারেন্স করে বললেন যে তাদের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে-রাজনৈতিক দলগুলোকে সাত দিন সময় দেওয়া হবে, যাতে তারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তাহলে এতদিন ধরে যে ঐকমত্য কমিশনে বসে সংস্কারের প্রস্তাবগুলো নিয়ে কাজ করেছেন, সেখানে আমাদের প্রতিনিধি ছিল, সব দলের প্রতিনিধি ছিল-তাহলে এটা কেমন হলো? বহু টাকা খরচ করে কাজটি করলেন, সেটাতে রাজনৈতিক দলগুলোর কোনো সমস্যা সমাধান হলো না।

ট্যাবলেট খাওয়ারও সুযোগ থাকবে না-মির্জা আব্বাস : র‌্যালিপূর্ব সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, বিএনপির ষড়যন্ত্র করার ইতিহাস নেই, এমনকি পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ারও ইতিহাস নেই। জামায়াতকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, একটি দল ধর্ম ব্যবসা করে জান্নাতের টিকিট বিক্রি করে। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে। আব্বাস বলেন, ‘শান্ত, সভ্য ও ভদ্র দল হিসাবে বিএনপি বলেছিল, এই সরকারকে সহযোগিতা করবে এবং সেটাই করে যাচ্ছি। কিন্তু এই ভদ্রতাকে যদি দুর্বলতা ভেবে থাকেন, তাহলে বোকার স্বর্গে বসবাস করছেন। বিএনপি যদি মাঠে নামে, আপনাদের ট্যাবলেট খাওয়ার জন্য খুঁজে পাওয়া যাবে না। সনদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অনেকেই এটা নিয়ে লম্বা লম্বা কথা বলছে, আমরা এটা মানতে চেয়েছি কিন্তু আপনারা একটা না একটা খুঁত ধরে নষ্ট করার চেষ্টা করছেন। এসব অপকর্ম বাদ দিয়ে ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিন। জাতিকে আর বিভ্রান্ত করবেন না বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সঞ্চালনায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু, উত্তরের আহ্বায়ক আমিনুল হক। মঞ্চে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে সকালে ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষ্যে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন দলটির নেতাকর্মীরা। এ সময় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সালাহউদ্দিন আহমদসহ দলটির সিনিয়র নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে আবার ধ্বংস করার চক্রান্ত চলছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘আজকে বাংলাদেশে বিভিন্ন রকম, এই গণ-অভ্যুত্থানের পরে বিভিন্ন রকমভাবে একটা প্রচেষ্টা, চক্রান্ত চলছে গণতন্ত্রকে আবার ধ্বংস করার জন্য।’

দেশের পরিস্থিতি নিয়ে বিএনপিকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। এ বিষয়ে মির্জা ফখরুলের কাছে জানতে চান সাংবাদিকরা। কিন্তু তিনি এ ব্যাপারে নতুন করে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

সাননিউজ/এও

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

যারা গণভোট চাপিয়ে দিতে চাইছে, তারা নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত: ফখরুল

গণভোট হলে জাতীয় নির্বাচনের দিনই হতে হবে, আলাদাভাবে...

উত্তেজনা চাই না, কিন্তু বাংলাদেশ প্রসঙ্গে স্পষ্ট বার্তা দিলেন রাজনাথ সিং

ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং জানিয়েছেন, বাং...

‘পরিস্থিতির শিকার হয়ে বাচ্চা রেখে গেলাম, কেউ নিয়ে যাবেন’– হাসপাতালের শিশু

দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে সম...

মনোনয়নে ‘আউট’, ধানক্ষেতে রিভিউ: ভাইরাল বিএনপি নেতার প্রতিবাদ

ফেনী জেলা বিএনপির সদস্যসচিব আলাল উদ্দিন আলাল দলীয়...

জাহানারার যৌন নিপীড়ন অভিযোগে ঝড়, তদন্তে নড়েচড়ে বিসিবি

বাংলাদেশ নারী ক্রিকেটে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে তোলপাড়...

১০ম গ্রেড বেতন ও পদোন্নতির দাবিতে প্রাথমিক শিক্ষকরা আন্দোলনে

ময়মনসিংহ ও শরীয়তপুরের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স...

‘পরিস্থিতির শিকার হয়ে বাচ্চা রেখে গেলাম, কেউ নিয়ে যাবেন’– হাসপাতালের শিশু

দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে সম...

মনোনয়নে ‘আউট’, ধানক্ষেতে রিভিউ: ভাইরাল বিএনপি নেতার প্রতিবাদ

ফেনী জেলা বিএনপির সদস্যসচিব আলাল উদ্দিন আলাল দলীয়...

জাহানারার যৌন নিপীড়ন অভিযোগে ঝড়, তদন্তে নড়েচড়ে বিসিবি

বাংলাদেশ নারী ক্রিকেটে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে তোলপাড়...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা