আন্তর্জাতিক ডেস্ক: জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনের প্রস্থানের জেরে মালির উত্তরাঞ্চলে তুয়ারেগ বিদ্রোহীদের সাথে সেনাবাহিনীর সংঘর্ষে কমপক্ষে ৫৬ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ১০ জন সেনা ও ৪৬ জন বিদ্রোহী।
আরও পড়ুন: ভারতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১১
মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) এ সংঘর্ষ ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
বার্তা সংস্থাটি বলছে, গত আগস্ট থেকে কোঅর্ডিনেশন অব আজওয়াদ মুভমেন্টস (সিএমএ) নামক একটি জোট মালির সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করছে। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনের প্রস্থানের দাবিতে এ লড়াই শুরু হয়। যদিও জাতিসংঘের ঐ মিশন বছরের পর বছর ভঙ্গুর পরিস্থিতিতে হলেও দেশটি শান্ত রাখতে সাহায্য করছিল।
আরও পড়ুন: দিল্লি ছাড়লেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী
কিন্তু সম্প্রতি জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনের খালি করে দেওয়া অঞ্চলগুলোতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ তীব্রতর হচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মালির সশস্ত্র বাহিনীর জেনারেল স্টাফ বলেন, মঙ্গলবার তার পক্ষে থাকা ১০ জন যোদ্ধা নিহত হয়েছেন। তারা বোরেমের কাছে একটি আক্রমণ প্রতিহত করেছে। এছাড়া অভিযানের সময় ৪৬ শত্রু যোদ্ধাও নিহত হয়েছেন।
আরও পড়ুন: ১৫৯ যাত্রী নিয়ে শস্যখেতে বিমান
এর আগে সিএমএ মুখপাত্র মোহাম্মদ এলমাউলউদ রামাদান বলেছিলেন, বোরেমে একটি সামরিক ক্যাম্প দখল করার জন্য সিএমএ-এর লড়াইয়ে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। তবে এ সংঘর্ষে ঠিক কতজন নিহত হয়েছেন, তা উল্লেখ করেননি তিনি।
সিএমএ’র এই মুখপাত্র বলেন, আমি নিশ্চিত করছি, খুব মারাত্মক লড়াইয়ের পর সকাল ১০ টার দিকে সিএমএ যোদ্ধারা ক্যাম্পের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল।
পরে রয়টার্সকে তিনি জানান, সিএমএ তাদের অবস্থান থেকে পিছু হটেছে। সেনাবাহিনী বোরেম শহর দখল করে নিয়েছে। ক্যাম্পটি দখলে রাখা বিদ্রোহী গোষ্ঠীর উদ্দেশ্য ছিল না বলেও জানান এলমাউলউদ রামাদান।
আরও পড়ুন: রাশিয়ায় পৌঁছালেন কিম
অতীতে সিএমএ’র কৌশল ছিল- অস্ত্র, যানবাহন এবং গোলাবারুদ নেওয়ার জন্য সামরিক শিবিরগুলোতে আক্রমণ করা। তবে মঙ্গলবারের সংঘর্ষের সময় তেমনটি ঘটেছিল কিনা, তা বলেননি তিনি।
মালির এ অঞ্চলে ঠিক কি ঘটেছে, তা স্বাধীনভাবে নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়নি রয়টার্স।
মালির সশস্ত্র বাহিনীর জেনারেল স্টাফ জানান, বোরেমের চারপাশের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। মঙ্গলবার রাতে দেওয়া বিবৃতিতে বেঁচে থাকা বিদ্রোহীরা উত্তর দিকে পিছু হটেছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন: চীনে খামার থেকে পালিয়েছে ৭৫ টি কুমির
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, মালির উত্তরাঞ্চলের আধা যাযাবর তুয়ারেগ জনগোষ্ঠীর সদস্যদের নিয়ে সিএমএ গঠিত হয়। দীর্ঘদিন ধরে এসব মানুষ সরকারি অবহেলার অভিযোগ করে আসছেন। সেই সাথে তাদের মরুভূমি অঞ্চলের জন্য স্বায়ত্তশাসন দাবি করে আসছেন।
২০২০ সাল থেকে সামরিক জান্তা মালি শাসন করছে। নিরাপত্তাহীনতা বাড়তে থাকায় দেশটিতে ২০২০ ও ২০২১ সালে পরপর ২ টি অভ্যুত্থান হয়। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম বুবাকার কেইতার বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভের পর জান্তা যখন ক্ষমতা দখল করে, তখন তাদের পক্ষে ব্যাপক জনসমর্থন ছিল।
মূলত, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, বিতর্কিত নির্বাচন এবং দীর্ঘস্থায়ী নিরাপত্তাহীনতায় ক্ষুব্ধ ছিল দেশটির জনগণ। এরপর মালির সামরিক সরকার দেশের কিছু অংশ নিয়ন্ত্রণকারী ইসলামপন্থিদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সামান্য অগ্রগতি অর্জন করে।
আরও পড়ুন: রাজবাড়ীতে বালুচাপায় ৩ জনের মৃত্যু
প্রসঙ্গত, আফ্রিকা মহাদেশের অন্যতম বৃহৎ দেশ মালি। সাহেল অঞ্চলজুড়ে বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে যে সংঘাত চলছে, অতি দরিদ্র এই দেশটি তার উপকেন্দ্র।
বছরের পর বছর ধরে পশ্চিম আফ্রিকার এ দেশটিতে জঙ্গিদের সাথে সংঘর্ষে হাজার হাজার সৈন্য ও বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। এছাড়া বাস্ত্যুচুত হয়েছেন প্রায় ২০ লাখ মানুষ।
সান নিউজ/এনজে