স্বাস্থ্য

হোম কোয়ারেন্টিন: কী করবেন, কী করবেন না!

বিশেষ প্রতিবেদক:

বৈশ্বিক করোনাভাইরাস মহামারির বিপদজনক প্রেক্ষাপটে কোয়ারেন্টিন এখন অতিপরিচিত একটা শব্দ। এর অর্থ হচ্ছে, সংক্রমণ ঝুঁকি এড়ানোর উদ্দেশ্যে ব্যক্তি বা দলের চলাফেরাকে সীমাবদ্ধ করা। কোয়ারেন্টিন তাঁদের জন্যই প্রযোজ্য, যারা রোগে আক্রান্ত হননি কিন্তু রোগীর সংস্পর্শে এসেছেন। কিংবা রোগের প্রাদুর্ভাব যুক্ত এলাকায় থেকেছেন ফলে যারা রোগ ছড়াতে পারেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।

পূর্বে প্লেগের সময় জাহাজের মাল খালাস করার আগে ৪০ দিন তীরে ভিড়ে থাকতে হতো। সেই থেকেই ‘কোয়ারান্টাগাইরন’ কথাটা এসেছে, যার অর্থ ফরটি ডে (৪০ দিন)। চীনসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেই কুষ্ঠ রোগ, পীতজ্বর বা ইয়েলো ফিভার, কলেরার মতো রোগের বিস্তার ঠেকানোর জন্য কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। সাম্প্রতিক সময়ের ইবোলার ক্ষেত্রেও এর অনুশীলন করতে দেখা গেছে।

সাম্প্রতিক করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে বিদেশ ফেরত অথবা প্রবাসীদের সংস্পর্শে থাকা স্বজনদের কোয়ারেন্টিনে রাখা হচ্ছে। যা নিয়ে জনমনে আতঙ্ক ও বিভ্রান্তি কিছুটা হলেও রয়েছে। ফলে এই উপদেশ কেউ মানছেন, কেউ মানছেন না আবার কেউ আতঙ্কিত হচ্ছেন অতিমাত্রায়।

আদতে কোয়ারেন্টিন কোনো ভয়ের শব্দ নয়। নিজের এবং সবার কল্যাণের স্বার্থে আলাদা থাকাই হচ্ছে কোয়ারেন্টিন। আর এর সময়কাল নির্ভর করে যে রোগের ইনকিবেশন পিরিয়ড বা জীবাণু প্রবেশ থেকে রোগ প্রকাশিত হওয়ার মধ্যবর্তী সময় কত দিন, তার ওপর। করোনাভাইরাস সংক্রমণের ক্ষেত্রে কোয়ারেন্টিনের মেয়াদ ধরা হয়েছে ১৪ দিন।

কোয়ারেন্টিন শব্দের পাশাপাশি যুক্ত হয়েছে হোম কোয়ারেন্টিন। হোম কোয়ারেন্টিন মানে ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তি নিজ বাড়িতে স্বেচ্ছায় একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত কোয়ারেন্টিনে থাকবেন এবং এ সময় নির্দিষ্ট স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন।

এখন জেনে নিন করোনাভাইরাসের কারণে কারা হোম কোয়ারেন্টিনে থাকবেন। যেসব দেশে কোভিড-১৯–এর স্থানীয় সংক্রমণ ঘটেছে, সেসব দেশ থেকে যেসব যাত্রী এসেছেন এবং আসবেন (দেশি-বিদেশি যেকোনো নাগরিক), যারা দেশে শনাক্তকৃত ৩ জন কোভিড-১৯–এ আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এসেছেন এবং যার অথবা যাঁদের কোনো শারীরিক উপসর্গ নেই, তাঁদের ১৪ দিন স্বেচ্ছা/গৃহ কোয়ারেন্টিন পালন করতে হবে।

কীভাবে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকবেন? হোম কোয়ারেন্টিন মানে শুধু বাড়িতে থাকা নয়। তার জন্য নির্দিষ্ট কিছু বিধিনিষেধও পালন করতে হবে। এ বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন আছে। যেমন,

১. বাড়ির অন্য সদস্যদের থেকে আলাদা থাকতে হবে।
২. আলো–বাতাসের সু-ব্যবস্থাসম্পন্ন আলাদা ঘরে থাকতে হবে। সম্ভব না হলে অন্যদের থেকে অন্তত ১ মিটার (৩ ফুট) দূরে থাকতে হবে। রাতে পৃথক বিছানা ব্যবহার করতে হবে।
৩. আলাদা গোসলখানা ও টয়লেট ব্যবহার করতে হবে। সম্ভব না হলে অন্যদের সঙ্গে ব্যবহার করতে হয়—এমন স্থানের সংখ্যা কমিয়ে এবং ওই স্থানগুলোতে জানালা খুলে রেখে পর্যাপ্ত আলো–বাতাসের ব্যবস্থা করতে হবে।
৪. স্তন্যদায়ী মা শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াতে পারবেন। তবে শিশুর কাছে যাওয়ার সময় মাস্ক ব্যবহার করতে হবে এবং ভালোভাবে হাত ধুয়ে নিতে হবে।
৫. বাড়ির অন্য সদস্যদের সঙ্গে একই ঘরে অবস্থান করলে, বিশেষ করে ১ মিটারের মধ্যে আসার প্রয়োজন হলে, অত্যাবশ্যকীয় প্রয়োজনে বাড়ি থেকে বের হলে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।
৬. কাশি, সর্দি, বমি ইত্যাদির সংস্পর্শে এলে সঙ্গে সঙ্গে মাস্ক খুলে ফেলতে হবে এবং নতুন মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। মাস্ক ব্যবহারের পর ঢাকনিযুক্ত ময়লার পাত্রে তা ফেলে সাবান–পানি দিয়ে ভালোভাবে হাত ধুয়ে নিতে হবে।
৭. সাবান ও পানি দিয়ে অন্তত ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধুতে হবে। প্রয়োজনে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা যেতে পারে।
৮. সাবান-পানি ব্যবহারের পর টিস্যু দিয়ে হাত শুকনো করে ফেলতে হবে। টিস্যু না থাকলে শুধু হাত মোছার জন্য নির্দিষ্ট তোয়ালে/গামছা ব্যবহার করা যাবে। তবে ভিজে গেলে বদলে ফেলতে হবে।
৯. অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ করা যাবে না।
১০. কাশি শিষ্টাচার মেনে চলতে হবে। হাঁচি–কাশির সময় টিস্যু পেপার/মেডিকেল মাস্ক/কাপড়ের মাস্ক/বাহুর ভাঁজে মুখ ও নাক ঢেকে রাখতে হবে। এরপর হাত ভালো করে পরিষ্কার করতে হবে।
১১. ব্যক্তিগত ব্যবহার্য সামগ্রী অন্য কারও সঙ্গে ভাগাভাগি করে ব্যবহার করা যাবে না। খাওয়ার বাসনপত্র—থালা, গ্লাস, কাপ ইত্যাদি, তোয়ালে, বিছানার চাদর অন্য কারও সঙ্গে ভাগাভাগি করে ব্যবহার করা যাবে না। জিনিসপত্র ব্যবহারের পর সাবান-পানি দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করে ফেলতে হবে।

চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী একজন থেকে অন্যজনের কোয়ারেন্টিনের সময়সীমা আলাদা হতে পারে। তবে করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে সাধারণত এ সময়সীমা ১৪ দিন হয়ে থাকে।

এখন জেনে নিন কোয়ারেন্টিনে থাকাকালে কী কী করতে পারবেন। কোয়ারেন্টিনের অবসর সময়কে কাজে লাগান। নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে করোনাভাইরাস সম্পর্কে জানার চেষ্টা করুন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও), সিডিসি এবং আইইডিসিআরের ওয়েবসাইটে সঠিক তথ্য পাবেন। পরিবার ও বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে ফোন/মোবাইল/ইন্টারনেটের সাহায্যে যোগাযোগ রাখুন। দৈনন্দিন রুটিন, যেমন: খাওয়া, হালকা ব্যায়াম ইত্যাদি মেনে চলুন। সম্ভব হলে বাড়িতে বসে অনলাইনে বা ফোনে অফিসের কাজ করতে থাকুন। বইপড়া, গান শোনা, সিনেমা দেখা অথবা ওপরের নিয়মগুলোর পরিপন্থী নয়, এমন যেকোনো বিনোদনমূলক কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করুন বা ব্যস্ত রাখুন।

পরিবারের সদস্যদের জন্য নির্দেশাবলী:
বর্তমানে সুস্থ আছেন এবং যারা দীর্ঘমেয়াদী রোগে (যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ক্যানসার, অ্যাজমা প্রভৃতি) ভুগছেন না, এমন একজন ব্যক্তি পরিচর্যাকারী হিসেবে নিয়োজিত হতে পারেন। তিনি ওই ঘরে বা পাশের ঘরে থাকবেন, অবস্থান বদল করবেন না। কোয়ারেন্টিনে আছেন—এমন ব্যক্তির সঙ্গে কোনো অতিথিকে দেখা করতে দেবেন না।

পরিবারের মানুষ যে কাজগুলো করবেন:
১. কোয়ারেন্টিনে থাকা ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে বা তার ঘরে ঢুকলে সাবান–পানি দিয়ে হাত পরিষ্কার করবেন।
২. খাবার তৈরির আগে ও পরে, খাওয়ার আগে, টয়লেট ব্যবহারের পরে হাত পরিষ্কার করবেন।
৩. গ্লাভস পরার আগে ও খোলার পরে হাত পরিষ্কার করবেন।
৪. যখনই হাত দেখে নোংরা মনে হবে, তখনই হাত পরিষ্কার করবেন।
৫. খালি হাতে কোয়ারেন্টিনে থাকা ব্যক্তির ঘরের কোনো কিছু স্পর্শ করবেন না।
৬. কোয়ারেন্টিনে থাকা ব্যক্তির ব্যবহৃত বা তাঁর পরিচর্যায় ব্যবহৃত মাস্ক, গ্লাভস, টিস্যু ইত্যাদি অথবা অন্য আবর্জনা ওই রুমে রাখা ঢাকনাযুক্ত ময়লার পাত্রে রাখুন। এসব আবর্জনা উন্মুক্ত স্থানে না ফেলে পুড়িয়ে ফেলুন।
৭. ঘরের মেঝে, আসবাবের সব পৃষ্ঠতল, টয়লেট ও বাথরুম প্রতিদিন অন্তত একবার পরিষ্কার করুন। পরিষ্কারের জন্য ১ লিটার পানির মধ্যে ২০ গ্রাম (২ টেবিল চামচ পরিমাণ) ব্লিচিং পাউডার মিশিয়ে দ্রবণ তৈরি করুন ও ওই দ্রবণ দিয়ে সব স্থান ভালোভাবে মুছে ফেলুন। তৈরিকৃত দ্রবণ সর্বোচ্চ ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত ব্যবহার করা যাবে।
৮. কোয়ারেন্টিনে থাকা ব্যক্তিকে নিজের কাপড়, বিছানার চাদর, তোয়ালে ইত্যাদি গুঁড়া সাবান বা কাপড় কাচা সাবান ও পানি দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করতে বলুন এবং ভালোভাবে রোদে শুকিয়ে ফেলুন। নোংরা কাপড় একটি লন্ড্রি ব্যাগে আলাদা রাখুন। মল-মূত্র বা নোংরা লাগা কাপড় ঝাঁকাবেন না এবং নিজের শরীর বা কাপড়ে যেন না লাগে, তা খেয়াল রাখবেন।
৯. যদি কোয়ারেন্টিনে থাকাকালে করোনাভাইরাসের কোনো উপসর্গ দেখা দেয় (জ্বর, কাশি, সর্দি, গলা ব্যথা, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি), তবে দ্রুত আইইডিসিআরের হটলাইন নম্বরে যোগাযোগ করুন।

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

দাবি আদায়ের লক্ষে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি

বাড়িভাড়া ভাতা বাড়ানোর দাবি এবং শিক্ষক আন্দোলনে পুল...

গাজায় যুদ্ধবিরতি, শান্তির বার্তা ট্রাম্পের

প্রায় দুই বছর ধরে চলা গাজায় যুদ্ধ শেষ হয়েছে বলে মন...

এনসিপির দাবিকৃত ‘শাপলা’ প্রতীক নিতে চায় বাংলাদেশ কংগ্রেস

দলীয় প্রতীক হিসেবে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ‘শাপলা’র দাবি করে...

কুমিল্লা সীমান্তে ভারতীয় শাড়ি জব্দ

কুমিল্লার সীমান্ত এলাকায় পিকআপে থাকা প্রায় ৩ কোটি টাকা মূল্যের ভারতীয় শাড়ি ও...

রিজভী-মির্জা আব্বাসসহ নাশকতা মামলায় অব্যাহতি পেলেন ১৬৭ জন

রাজধানীর পল্টন মডেল থানায় দায়ের করা নাশকতা মামলায় আদালত দায়মুক্তি দিয়েছে বিএন...

আন্দোলনরত শিক্ষকরা রাতে মাজারগেটেই অবস্থান করবেন 

বাড়িভাড়া ভাতা ২০ শতাংশ বৃদ্ধিসহ তিন দফা দাবিতে বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের...

গণযোগাযোগ অধিদপ্তরের নবনিযুক্ত ডিজি আবদুল জলিল

গণযোগাযোগ অধিদপ্তরের নবনিযুক্ত মহাপরিচালক (ডিজি) মো. আবদুল জলিল বলেছেন, গণযোগ...

যুদ্ধবিরতি মধ্যেই গাজায় ৫ জনকে গুলি করে হত্যা করলো ইসরায়েল

যুদ্ধবিরতি চলার মধ্যেই ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের পাঁচজ...

নভেম্বরে গণভোটের দাবি একটি ‘মাস্টারপ্ল্যান’: রিজভী

যারা নভেম্বরে গণভোটের কথা বলছেন, তাদের একটি মাস্টারপ্ল্যান আছে। তারা শর্ত দিয়...

গণযোগাযোগ অধিদপ্তরের নবনিযুক্ত ডিজি আবদুল জলিল

গণযোগাযোগ অধিদপ্তরের নবনিযুক্ত মহাপরিচালক (ডিজি) মো. আবদুল জলিল বলেছেন, গণযোগ...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা