ফয়সল চৌধুর, হবিগঞ্জ: হবিগঞ্জের আদালতে একটি হত্যা মামলার আসামীপক্ষের বিরুদ্ধে সাক্ষী জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে। দীর্ঘ ১৮ বছর আগে দায়েরকৃত হত্যা মামলার আসামি মহিবুর মেম্বারদের বিরুদ্ধে জালিয়াতি করে আদালতে ভুয়া স্বাক্ষী দিয়ে মামলাটি মিথ্যা প্রমাণ করার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। মামলার ভিকটিম, স্বাক্ষী ও আসামীরা সবাই হবিগঞ্জ জেলার লাখাই উপজেলার রুহিতনশী গ্রামের বাসিন্দা।
আরও পড়ুন: শ্রীলঙ্কায় সব মন্ত্রীর পদত্যাগ
এ ঘটনায় নিহত মফিজুল এর স্ত্রী ঊষা বেগম বাদী হয়ে ২৮ মার্চ হবিগঞ্জের অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতে একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, গত বছরের ৪ নভেম্বর প্রসিকিউশন স্বাক্ষী হিসাবে নিহতের স্ত্রী হালিমা বেগম ঊষা, মাতা লাল বানু , চাচা আলম মিয়া, আব্দুল মজিদ, জাহির মিয়া এবং প্রসিকিউশন স্বাক্ষী ৮ হিসাবে জামাল মিয়ার নাম ব্যবহার করে আসামী মহিবুর মেম্বার গং জাল বা প্রক্সি হিসেবে অন্য লোকজনকে ব্যবহার করে যেনতেন ভাবে ভূয়া সাক্ষ্য প্রদান করান।
এছাড়া মামলার বাদীর জাতীয় পরিচয় পত্রে শুধুমাত্র ঊষা বেগম নাম উল্লেখ থাকায় তিনি সব স্থানে তার নাম ও দস্তখত ঊষা বেগম হিসেবেই লিখে থাকেন। অথচ প্রক্সি হিসাবে হালিমা বেগম ওসা নামে যে সাক্ষী দস্তখত প্রদান করেন তা কোনভাবেই আসল উষা বেগমের সাথে মিলে না। তেমনি ভাবে অন্যান্য সাক্ষীরাও ওই দিন আদালতে এসে কোনো সাক্ষী প্রদান করেননি।
মামলা সুত্রে জানা যায়, ২০০৪ সালে লাখাই উপজেলার রুহিতুনশী গ্রামের মফিজুল ইসলাম ও মামলার আসামি মুহিবুর মেম্বার, জামিরুল মাস্টার সহ আরো কয়েকজন স্থানীয় চাঁন্দাবিলে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে মাছ চাষ করতেন। মফিজুল ইসলাম তাঁর লাভের অংশ আসামের নিকট চাইলে এ নিয়ে বিরোধ তৈরি হয়। এ নিয়ে হওয়া কথা-কাটাকাটির জের ধরে ২০০৪ সালের ৯ মে রাতে পূর্বপরিকল্পিতভাবে জামিরুল মাস্টারের নেতৃত্বে মহিবুর মেম্বারসহ অন্য আসামিরা চান্দা বিলে রাতের বেলা মাছ ধরতে যান। এ সময় মফিজুল মাছ ধরতে বাধা দেয়ায় জামিরুল মাস্টার ও মহিবুর মেম্বার সহ অন্য আসামিরা তাকে হত্যা করেন।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে গণমাধ্যম আইন সংশোধনের দাবি
জানা যায়, ২০০৪ সালের ১১ মে এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় একই গ্রামের বাসিন্দা জামিরুল মাষ্টার, মহিবুর মেম্বার, রজব আলী, রফিকুল সহ ১০ জনকে আসামী করে লাখাই থানায় মামলা দায়ের করেন নিহত মফিজুল ইসলামের স্ত্রী হালিমা বেগম ঊষা। এরপর আদালতে মামলাটি চলমান অবস্থায় পেরিয়ে যায় দীর্ঘ ১৮ টি বছর। এর মধ্যেই হালিমা বেগমের অন্যত্র বিয়ে হয়ে যায়।
মফিজুল ইসলামের স্ত্রী-পুত্র ও বৃদ্ধা মা জীবন-জীবিকার তাগিদে সেভাবে মামলার খোঁজখবর রাখতে পারেননি। এ সুযোগে মামলার আসামীরা গত বছরের ৪ নভেম্বর মামলার প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী নিহতের স্ত্রী ও মামলার এজাহারী হালিমা বেগম ঊষা, নিহতের মা লাল বানু সহ মোট ৬ জনের জায়গায় অন্য লোককে জালিয়াতির মাধ্যমে আদালতে উপস্থাপন করে মিথ্যা সাক্ষী প্রদান করেন।
এ ব্যাপারে নিহত মফিজুল ইসলামের পুত্র শফিকুল ইসলাম জানান, আমার পিতা হত্যাকান্ডের ঘটনার সময় আমরা নাবালক ছিলাম। বিভিন্ন ঝামেলার কারণে মামলার খোঁজ খবর রাখা সম্ভব হয়নি। এরইমধ্যে প্রভাবশালী মূল আসামি মহিবুর মেম্বার জালিয়াতি করে এ ঘটনা ঘটায়। এ ব্যাপারে বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে সরকার পক্ষের আইনজীবি সালেহ উদ্দিন আহমেদ জানান, বিজ্ঞ আদালত বিষয়টি তদন্তের জন্য লাখাই থানা অফিসার ইনচার্জ কে আদেশ দিয়েছেন।
সান নিউজ/এনকে