থামছে না অবৈধপথে ইউরোপ যাত্রা 
জাতীয়
সক্রিয় মানবপাচার চক্র

থামছে না অবৈধপথে ইউরোপ যাত্রা 

শফিক স্বপন, মাদারীপুর প্রতিনিধি : দালালচক্রের খপ্পরে পড়ে লাখ-লাখ টাকা দিয়ে জীবন বাজি রেখে অবৈধভাবে ইউরোপ যাত্রা থামছেই না। মাদারীপুরের বহু যুবক ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাঠানোর কথা বলে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। দালালরা লিবিয়ায় নিয়ে আরো টাকা আদায় করতে তাদের উপর চালাচ্ছে অমানবিক নির্যাতন।

আরও পড়ুন : দেশ এখন জঙ্গিমুক্ত

নির্যাতনের ভিডিও পাঠিয়ে পরিবারে কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। তাতেও নিস্তার নেই। সেখানে হাত বদল হচ্ছে একাধিক মাফিয়া চক্রের হাতে। সেখান থেকে ইউরোপের ইতালীসহ বিভিন্ন দেশে যাওয়ার পথে কথিত গেম এর যাত্রায় ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছে বহু কিশোর যুবক। ট্রলার ডুবিতে অনেকের সলীল সমাধি হয়েছে ভূমধ্যসাগরে।

তিউনিশিয়ার উপকূল ও ভূমধ্যসাগর থেকে বাংলাদেশীসহ বহু অভিবাসন প্রত্যাশী কিশোর-যুবককে উদ্ধার করছে ওই দেশের কোস্টগার্ড ও নৌ-পুলিশ। প্রাণে বেঁচে যাওয়াদের স্থান হচ্ছে জেলখানায়। অনেকে রয়েছে বছরের পর বছর নিখোঁজ। তাদের কোন সন্ধান পায়নি তাদের পরিবার। এদের বেশিরভাগই মাদারীপুর জেলার দরিদ্র পরিবারের সন্তান।

মানবপাচারকারীরা বারবার রুট বদল করায় এবং পূর্ণাঙ্গ তালিকা না থাকায় ব্যবস্থা নিতে পারছে না প্রশাসন। শক্তিশালী সিন্ডিকেট লিবিয়ায় বসে দালালদের মাধ্যমে লিয়াজোঁ করে অভিবাসন প্রত্যাশী কিশোর-যুবকদের সংগ্রহ করছে।

আরও পড়ুন : পা ধরে ভোট চাইছেন ছাত্রনেতারা!

এই দালাল চক্রের দলে রয়েছে অনেক নারী সদস্য। তবে ভূক্তভোগী পরিবারগুলোর কেউ এ ব্যাপারে কথা বলতে নারাজ। র‌্যাব ও পুলিশ বেশ কিছু নারী-পুরুষ দালালকে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করেছে। তবুও থেমে নেই অবৈধপথে মানবপাচার। সিন্ডিকেটের গডফাদাররা থাকছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।

সরেজমিন অনুসন্ধানে গিয়ে ভূক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, অবৈধভাবে সমুদ্রপথে বিদেশ যাত্রাকালে নৌকাডুবিতে মারা গেছে মাদারীপুরের ৪ উপজেলার প্রায় অর্ধশত কিশোর-যুবক। এখনো নিখোঁজ রয়েছে অনেকে। তাদের পরিবারের সাথে কোনো যোগাযোগ নেই। তারা জীবিত না মৃত তাও জানে না পরিবার।

অজ্ঞাত কারণে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে যেতে অনীহা প্রকাশ করছে। যে কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না। লোভে পড়ে গ্রামের সহজ-সরল পরিবারগুলো তাদের সন্তানদের তুলে দিচ্ছেন মানবপাচারকারী দালাল চক্রের হাতে। খোঁজ নিতে গেলে ওইসব ছেলেদের বাবা-মা আত্মীয়-স্বজন সাংবাদিকদের সাথে কথাও বলতে চায় না।

আরও পড়ুন : শিগগির এমপিওভুক্তির তালিকা প্রকাশ

বিদেশে কোনো দুর্ঘটনা ঘটার পর ভূক্তভোগী কিছু পরিবার মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করলেও নিরাপত্তার অজুহাতে অনেক তথ্য গোপন রাখছে। তথ্য ফাঁস করে দিলে মাফিয়ারা তাদের সন্তানদের মেরে ফেলতে পাওে এমন আশঙ্কায় সত্য গোপন রাখছে তারা। দালালদের চাহিদা মতো টাকা দিতে না পারলে লিবিয়ার বেনগাজীসহ বিভিন্ন টর্চার সেলে শারীরিক নির্যাতন করে তুলে দেয় লিবিয়ান মাফিয়াদের হাতে। মাফিয়ারা নির্যাতনের ভিডিও পাঠিয়ে এবং হত্যার ভয়ভীতি দেখিয়ে এদেশে দালালদের মাধ্যমে এসব পরিবারের কাছ থেকে আদায় করছে লাখ লাখ টাকা।

মাদারীপুরে দালালচক্রের কয়েকজন সক্রিয় সদস্যের নাম ঠিকানা পাওয়া গেছে। তারা হলো, মাদারীপুর সদর উপজেলার বড়াইলবাড়ির জামাল খাঁ, শ্রীনাথদি বাজিতপুর গ্রামের জাহাঙ্গীর হাওলাদার, ধুরাইল ইউনিয়নের চাছার গ্রামের ইউসুফ খান জাহিদ, গাছবাড়িয়া গ্রামের নাসির শিকদার, রাজৈর উপজেলার বদরপাশা গ্রামের জুলহাস তালুকদার, হোসেনপুর এলাকার জাকির হোসেন, টেকেরহাটের লিয়াকত মেম্বার, কদমবাড়ির রবিউল ওরফে রবি, শাখারপাড় গ্রামের কামরুল মোল্লা, এমরান মোল্লা, আমগ্রাম ইউনিয়নের কৃষ্ণারমোড় এলাকার শামীম ফকির, সম্রাট ফকির, শিবচর উপজেলার দত্তপাড়া ইউনিয়নের শহিদুল মাতুব্বর ও সিরাজ মাতুব্বর।

এই চক্রের সাথে রয়েছে বেশকিছু নারী দালাল। তারা কমিশনে গ্রামে গ্রামে ঘুরে কিশোর-যুবকদের সংগ্রহ করে। ইতোমধ্যে র‌্যাব ও পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছে সুমি বেগম, দিনা বেগম, নার্গিস বেগম, জুলহাস, হানিফ, সেন্টু শিকদার, নাসির, আল-আমিনসহ অন্তত ১৬জন। এ ছাড়াও অনেক নারী-পুরুষ দালাল রয়েছে। তথ্য প্রমাণ ও অভিযোগ না পাওয়ায় পুলিশ তাদের ধরতে পারছে না।

আরও পড়ুন : পাকিস্তানে ত্রাণ পাঠাল তুরস্ক

গত তিন মাস ধরে সদর উপজেলার এক ইউনিয়নের ২১ যুবক লিবিয়ার বন্দিশালায় আটক রয়েছে। দালালদের লাখ লাখ টাকা দিলেও মিলছে না মুক্তি। নির্যাতনের ভিডিও পরিবারের কাছে মোবাইলে পাঠিয়ে বার বার মুক্তিপনের টাকা আদায় করছে বলে অভিযোগ পরিবারে। এঘটনার পর বসতঘরে তালা দিয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে অভিযুক্তরা।

পুলিশ বলছে, অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। লিবিয়ার মাফিয়াদের হাতে বন্দি যুবকরা হলেন, সদর উপজেলার দুধখালী ইউনিয়নের দুর্গাবর্দী গ্রামের লুৎফর বেপারীর ছেলে আল-আমিন বেপারী, মোতালেব খানের ছেলে ইয়াসিন খান, লুৎফর বেপারীর ছেলে আল আমিন বেপারী, মনির হাওলাদারের ছেলে তমাল হাওলাদার, আলী হোসেন ব্যাপারীর ছেলে ইমন ব্যাপারী, তাজমুল চোকিদারের ছেলে শান্ত চোকিদার, কালাম ফকিরের ছেলে মেহেদী ফকির, দুধখালী ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য হুমায়ন বেপারীর ছেলে সৌরভ বেপারী, ফারুক হাওলাদারের ছেলে ফারদিন হাওলাদার, এসকান বেপারীর ছেলে হাসান বেপারী, হাবিব খানের ছেলে আল আমিন খান, মোস্তফা মাতুব্বরের ছেলে সাব্বির মাতুব্বর, মনির খানের ছেলে নাঈম খান, শাহ্আলম মুন্সির ছেলে হৃদয় মুন্সি, ওহাব আলি বেপারীর ছেলে হারুণ বেপারী, এহসাক হাওলাদারের ছেলে রুবেল হাওলাদার। বাকিদের নাম পরিচয় পাওয়া যায়নি। বন্দিশালায় আটক থাকা প্রত্যেকের বয়স ১৮ থেকে ২৫-৩০ বছরের মধ্যে।

আরও পড়ুন : থানা থেকে পালিয়ে গেল আসামি

তমাল হাওদারের মা মুরশিদা বেগম ও ইমনের বেপারীর মা নাহার বেগম, তারা জানেন না আদরের সন্তান কোথায়, কেমন আছে। প্রতিটি মুহুর্ত কাটছে কষ্টে আর দুঃচিন্তায়। সন্তানদের ফিরে পেতে সরকারের কাছে আকুতি জানাচ্ছেন বার বার।

একই অবস্থা আল আমিন, মেহেদী ফকির, ইয়াসিন খান, শান্ত চৌকিদার, সৌরভ বেপারী, হৃদয় মুন্সীসহ সদর উপজেলার দুধখালী ইউনিয়নের দুর্গাবর্দী গ্রামের ১৭জন ইউনিয়নের মোট ২১ জন যুবকের পরিবারের।

ভূক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ, দুর্গাবর্দী গ্রামের মানবপাচার চক্রের সদস্য নুরুল আমিন ও তার স্ত্রী নাজমিন লিবিয়া হয়ে ইতালী নেয়ার কথা বলে প্রত্যেক পরিবারের কাছ থেকে ৯ লাখ টাকা করে নেয়। পরে লিবিয়ান মাফিয়াদের হাতে তিনমাস আগে বিক্রি করে দিয়ে আবারো প্রত্যেক পরিবারের কাছ থেকে আদায় করে মুক্তিপনের ৬ লাখ টাকা করে। তবুও যুবকদের মুক্তি মিলছে না।

আরও পড়ুন : আর সিনেমা বানাব না

ইমনের মা নাহার বেগম বলেন, আমার একটি মাত্র ছেলে। বড় আশা করে ইতালী পাঠানোর ইচ্ছা করেছি। দালালরা এমন করবে তা কিছুতেই মানতে পারছি না। এখন বড়ই অসহায়। সরকার ও প্রশাসনের কাছে আমার ছেলেসহ যারা আটকা পড়ছে তাদের উদ্বারের দাবী জানাচ্ছি। পাশাপাশি এই ঘটনার সাথে জড়িতদের আইনতের আওতায় এনে সর্ব্বোচ্চ শাস্তির দাবীও জানাচ্ছি।

মাদারীপুর সদর উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়নের দক্ষিন দুধখালী গ্রামের শামীম হাওলাদারের মা হাসি বেগম কাঁন্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, মায়ের মন কি মানে বাজান। প্রায় দুই বছর ধরে আমার ছেলে শামীম নিখোঁজ। দুই বছর আগে আমার কথা হয়েছে। এরপর আর কথা হয় নাই। আমার মন বলছে আমার শামীম মরে নাই। দিনা নামের এক দালাল শামীমকে লিবিয়ায় তার স্বামীর কাছে পাঠায়ে দেয়।

অহিদুজ্জামানের বোন সাবিনা আক্তার বলেন, গত ১০ বছর ধরে আমার ভাই নিখোঁজ। অনেকের মাধ্যমে খোঁজ নিয়েছি। কিন্তু আজো তার কোনো সন্ধান করতে পারিনি। একই গ্রামের আবদুল মান্নান হাওলাদারের ছেলে আতিকুর রহমান পিন্টু হাওলাদারও প্রায় ১০-১২ বছর ধরে নিখোঁজ রয়েছে। তার ভাই মনিরুজ্জামান বলেন, দালালের মাধ্যমে আমার ভাই পিন্টু ইতালীর উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে নিখোঁজ হয়। আজ পর্যন্ত তার কোন খোঁজ-খবর পাইনি। সদর উপজেলার পূর্ব ছিলারচর গ্রামের এরফান আকনের ছেলে কবির আকন প্রায় ৮মাস ধরে নিখোঁজ। শক্তিশালী দালালচক্রের ভয়ে পরিবারের কেউ কথা বলতে রাজি হয়নি।

আরও পড়ুন : শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মভিত্তিক ছাত্র রাজনীতি বন্ধ

রাজৈর উপজেলার বদরপাশা ইউনিয়নের শাখারপাড় এলাকার পারভীন বেগম অভিযোগ করে বলেন, আমার ছেলে সুমন মোল্লাকে হাসানকান্দি এলাকায় দালাল হানিফের মাধ্যমে ইতালী পাঠানোর কথা হয়। সেই মোতাবেক সাড়ে ৭ লাখ টাকা হানিফের হাতে তুলে দেয়া হয়। পরে লিবিয়া গিয়ে আমার ছেলেকে কয়েক দফা বিক্রি করে দেয় দালালচক্র। আমার ছেলে সুমনসহ রাজৈর উপজেলার অন্তত ৪৫জন দীর্ঘদিন ধরে নিখোঁজ রয়েছে। এই দালাল হানিফ শ্রীনদীতে তিন তলা বাড়ি করেছে।

একই এলাকার কেরামত আলী ফকির বলেন, দালাল কামরুল মোল্লা আমার ছেলেকে লোভ দেখিয়ে ইতালীর কথা বলে লিবিয়ায় পাঠায়। লিবিয়া গিয়ে আমার ছেলে নিখোঁজ হয়। এখন আমার ছেলের কোন খোঁজ পাচ্ছিনা। এ ব্যাপারে রাজৈর থানায় একটি মানবপাচার আইনে মামলা করেছি।

মাদারীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনোয়ার হোসেন চৌধুরী জানান, এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী পরিবার থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে। অপরাধীরা যেখানেই থাকুক না কেন, তাদের ধরতে তৎপরতা চালানো হবে।

সান নিউজ/এইচএন

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

ব্রাজিলে মাদকচক্রবিরোধী অভিযানে ৪ পুলিশসহ ১১৯ জন নিহত

ব্রাজিলে মাদকচক্রের বিরুদ্ধে এক বড় পুলিশি অভিযানে...

২০৩৪ সালের ট্রিলিয়ন ডলারের লক্ষ্য অর্জনে নারীই চালিকাশক্তি: তারেক রহমান

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, “আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি স...

নির্বাচনের আগে গণভোট অযৌক্তিক ও অপ্রয়োজনীয়

আগামী এয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গণভোট অপ্রয়োজনীয় ও অযৌক্তিক বলে মন্তব্য...

‘হ্যাঁ’ ভোটে বিএনপির জন্ম, ‘না’ ভোটে মৃত্যু

জামায়াত ও বিএনপি কুতর্ক বাদ দিয়ে নির্বাচনী পরিবেশ তৈরিতে এগিয়ে আসার আহ্বান জা...

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জবাবদিহির আওতায় আনছে সরকার

জবাবদিহির আওতায় আনা হচ্ছে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের, এ কথা জানিয়েছেন শিক্ষা উপদেষ্...

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জবাবদিহির আওতায় আনছে সরকার

জবাবদিহির আওতায় আনা হচ্ছে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের, এ কথা জানিয়েছেন শিক্ষা উপদেষ্...

বোয়ালমারীতে দুর্ধর্ষ ডাকাতি, স্বর্ণালঙ্কারসহ কোটি টাকার মালামাল লুট

ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে নারায়ণ চন্দ্র নামে এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে দুর্ধর্ষ ডাকাতির...

জনগণের সিদ্ধান্ত নাকি রাজনীতির সাজানো সম্মতি?

গণভোট হলো জনগণের সরাসরি অংশগ্রহণের একটি পদ্ধতি, যে...

এবার ইসির প্রতীক তালিকায় যুক্ত হলো ‘শাপলা কলি’ 

নির্বাচন বিধিমালা ২০০৮ সংশোধন করে সংরক্ষিত প্রতীকের তালিকায় নির্বাচন কমিশন যু...

সুন্দরবনে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বনদস্যু, তিন শতাধিক জেলে অপহরণ

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল ও মৎস্যভান্ডার নামে...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা