বিএনপির ১০ দফা ঘোষণা
রাজনীতি

১০ দফা ঘোষণা দিল বিএনপি

সান নিউজ ডেস্ক : রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে আয়োজিত বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ থেকে ১০ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়েছে।

আরও পড়ুন : বিএনপির ৭ এমপির পদত্যাগের ঘোষণা

শনিবার (১০ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় সমাবেশের সময় নির্ধারিত থাকলেও এর ৪০ মিনিট আগে সকাল ১০টা ২০ মিনিটেই কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে সমাবেশ শুরু হয়। সমাবেশের মঞ্চে একে একে কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত হতে শুরু করে।

গণসমাবেশে বিএনপির পক্ষ থেকে যেসব দাবি জানানো হয়েছে সেগুলো হল :

১. বর্তমান জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করে ক্ষমতাসীন সরকারের পদত্যাগ।

২. ১৯৯৬ সালে সংবিধানে সংযোজিত ধারা ৫৮-খ, গ ও ঘ-এর আলোকে একটি দল নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার বা অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন।

৩. নির্বাচনকালীন দল নিরপেক্ষ সরকার বা অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্ববধায়ক সরকার, বর্তমান নির্বাচন কমিশন বাতিল করে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন। উক্ত নির্বাচন কমিশন অবাধ নির্বাচনের অনিবার্য পূর্বশর্ত হিসেবে 'লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড' নিশ্চিত করতে আরপিও সংশোধন, ইভিএম পদ্ধতি বাতিল ও পেপার ব্যালটের মাধ্যমে ভোটের ব্যবস্থা এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার বাতিল।

আরও পড়ুন : বিএনপির অর্ধেক পরাজয় হয়ে গেছে

৪. খালেদা জিয়াসহ বিরোধীদলীয় সব নেতা-কর্মী, সাংবাদিক এবং আলেমদের সাজা বাতিল। সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও রাজনৈতিক কারাবন্দিদের অনতিবিলম্বে মুক্তি। দেশে সভা, সমাবেশ ও মত প্রকাশে কোনো বাধা সৃষ্টি না করা। সব দলকে স্বাধীনভাবে গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনে প্রশাসন ও সরকারি দলের কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ বা বাধা সৃষ্টি না করা। স্বৈরাচারী কায়দায় বিরোধী কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করার লক্ষ্যে নতুন কোনো মামলা ও বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার না করা।

৫. ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ এবং বিশেষ ক্ষমতা আইন-১৯৭৪সহ মৌলিক মানবাধিকার হরণকারী আইন বাতিল করা।

৬. বিদ্যুৎ, জ্বালানি, গ্যাস ও পানিসহ জনসেবা খাতের মূল্যবৃদ্ধির গণবিরোধী সিদ্ধান্ত বাতিল।

৭. নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আনা এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারকে সিন্ডিকেট মুক্ত করা।

৮. গত ১৫ বছর ধরে বিদেশে অর্থ পাচার, ব্যাংকিং ও আর্থিক খাত, বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাত ও শেয়ার বাজারসহ রাষ্ট্রীয় সব ক্ষেত্রে সংঘটিত দুর্নীতি চিহ্নিত করতে একটি কমিশন গঠন। দুর্নীতি চিহ্নিত করে অতি দ্রুত যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ।

৯. গত ১৫ বছরে গুমের শিকার সব নাগরিককে উদ্ধার এবং বিচারবহির্ভূত হত্যা ও রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের প্রতিটি ঘটনার দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করে যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করার পাশাপাশি ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর, উপাসনালয় ভাঙচুর এবং সম্পত্তি দখলের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ।

১০. আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন ও বিচার বিভাগকে সরকারি হস্তক্ষেপ পরিহার করে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ করে দেওয়া।

আরও পড়ুন : মির্জা ফখরুল-আব্বাস কারাগারে

এর আগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবেদীন ফারুক, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিবুন নবী খান সোহেল, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, রাজশাহীর সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু উপস্থিত হন।

ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আজিজুল বারী হেলালের পরিচালনায় ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনুকুল হাসান শ্রাবণ সহ আরও অনেকে মঞ্চে অবস্থান করে।

শনিবার গোলাপবাগ মাঠে ভোর থেকেই বিএনপি নেতাকর্মীদের স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে।

এদিকে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশগুলোতে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। তবে এবার ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশে মির্জা ফখরুলের জায়গায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

গণসমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান।

রাজধানীর গোলাপবাগে ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশে সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা ঘোষণার বিষয়টি গত বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) রাতে স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে এই দফা চূড়ান্ত করা হয়। যার ভিত্তিতেই আগামী দিনে যুগপৎ আন্দোলন হবে।

আরও পড়ুন : সমাবেশের অনুমতি পেল বিএনপি

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই ১০দফা ও নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করার কথা ছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবার গভীর রাতে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

পরে হাইকমান্ডের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন আজ গণসমাবেশে কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

তবে হরতাল বা অবরোধের মতো কোনো কর্মসূচি দেওয়া হবে না বলে জানা যায়। লংমার্চ, রোডমার্চ, মানবঢাল, অবস্থান, ইস্যুভিত্তিক প্রতিবাদ বা বিক্ষোভের মতো কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে। দলটির একাধিক নীতিনির্ধারকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এসব তথ্য।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন এবিষয়ে বলেন, আগামী দিনে এই সরকারের বিদায়ের জন্য কতগুলো চাটার অব ডিমান্ড বা দফা আমরা ঘোষণা করব। যারা যুগপৎ আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত ইতোমধ্যে তাদের সঙ্গে বিএনপির আলোচনা হয়েছে।

আরও পড়ুন : ফখরুল-আব্বাসকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনা হয়েছে

তিনি আরও বলেন, আমরা আশা করি, যুগপৎভাবে আমরা যে ১০ দফা প্রণয়ন করেছি, তারা নিজ নিজ অবস্থান থেকে ঘোষণা করবেন। যার যার অবস্থান থেকে তারা ভবিষ্যতে এই দফাগুলোর দাবিতে আন্দোলনকে শাণিত করে যুগপৎভাবে আন্দোলনে আসবেন।

অপরদিকে দেশের বিভিন্ন জেলা ও রাজধানীর বিভিন্ন ইউনিট থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে প্রবেশ করতে দেখা যাচ্ছে নেতাকর্মীদের। এরই মধ্যে গোলাপবাগ মাঠ বিএনপি নেতাকর্মীদের পদচারণায় কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেছে।

বিভাগীয় এই সমাবেশে আসা নেতাকর্মীদের চাঙ্গা রাখতে মাইকে বিভিন্ন রকম স্লোগান দেওয়া হচ্ছে এবং দলীয় ও দেশাত্মাবধক গান পরিবেশন করা হচ্ছে।

সমাবেশ মঞ্চের ঠিক সামনে ঢাকা মহানগর যুবদলের নেতাকর্মীদের অবস্থান নিতে দেখা যায়। তারা একের পর এক স্লোগান দিয়ে সবাইকে চঙ্গা রাখার চেষ্টা করেন। মাঝে মধ্যে মঞ্চ থেকে নেতারা কর্মীদের উদ্দেশে বিভিন্নরকম নির্দেশনাও দেন।

আরও পড়ুন : রিজভীসহ ৪৩৪ জন কারাগারে

অন্যান্য বিভাগীয় সমাবেশগুলোতে মঞ্চে দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের চেয়ার ছবি দিয়ে আলাদা করে রাখতে দেখা গিয়েছিল। কিন্তু ঢাকার সমাবেশ মঞ্চে সে চিত্র চোখে পড়েনি।

মূল মঞ্চের ব্যানারের সামনে একটা এলইিডি স্ক্রিন বসানো হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, সমাবেশ শুরুর পর তারেক রহমান নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে ভিডিও কনফারেন্সে বক্তব্য রাখবেন। তবে এ বিষয়ে বিএনপির দায়িত্বশীল কোনো নেতা কথা বলতে রাজি হয়নি।

রংপুর থেকে আসা বিএনপি কর্মী আয়নাল হক বলেন, অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে এ সমাবেশে এসেছি। আমরা আমাদের লক্ষ্য পূরণ না করে ঘরে ফিরবো না। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে দেশের গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনাই আমাদের লক্ষ্য।

তিনি আরও বলেন, এই আওয়ামী লীগ সরকার আত্যাচারের সব সীমা ছাড়িয়ে গেছে, জনগণ তাদের আর এক মুহূর্তও ক্ষমতায় দেখতে চায় না। এ জন্য সরকারের পদত্যাগ ছাড়া আমরা ঘরে ফিরবো না।

সাভার থেকে আসা যুবদল নেতা শিপন মিয়া বলেন, নানা রকম পুলিশি তল্লাশি, হয়রানির শিকার হয়ে আমাদের সামবেশে যোগ দিতে হয়েছে। দেশে আজ গণতন্ত্র নেই বলে এতো অন্যায় নির্যাতন সহ্য করতে হচ্ছে সাধারণ মানুষজনকে।

সকালে সমাবেশস্থলে মিছিল নিয়ে আসা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের সাবেক সদস্য সচিব আমান উল্লাহ আমান বলেন, সরকার আমাদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করেছে। সমাবেশ বানচালের চেষ্টা করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের মহাসচিবসহ হাজারও নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। তার প্রতিবাদে আমরা এখানে এসেছি। এ সরকারের পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরব না।

আরও পড়ুন : পুলিশ ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়েছিল

প্রসঙ্গত, নানা নাটকীয়তা, সহিংসতা, গ্রেপ্তার শেষে শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) সমাবেশের অনুমতি পায় বিএনপি। এরপর থেকেই দলে দলে বিএনপি নেতাকর্মীরা গোলাপবাগ মাঠে আসতে শুরু করেন।

এমনকি সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত নামতেই রাজধানীর এই মাঠটি কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে উঠে। পরে ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা নেতাকর্মীরাও তাদের ব্যানার-ফেস্টুন সেটে দেন।

দেশের বিভিন্ন জেলা শহর থেকে সমাবেশে আসা নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সমাবেশে যোগ দিতে কয়েকদিন আগে থেকেই তারা ঢাকায় প্রবেশ করেছেন তারা। নানা চড়াই-উতরাই পার করার পরেও সমাবেশস্থল নির্ধারিত হওয়াতে উচ্ছ্বসিত তারা। তবে অনেকে আবার এটাকে মন্দের ভালো হিসেবেও দেখছেন।

সান নিউজ/এইচএন

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

ফেনসিডিলসহ ২ মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার

মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি: মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার বৈ...

কেশবপুরে ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত 

আব্দুর রাজ্জাক সরদার, কেশবপুর প্রতিনিধ:

ত্রিশালে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৩

মোঃ মনির হোসেন স্টাফ রিপোর্টার :...

জাহাজ উদ্ধারে সরকার অনেক দূর এগিয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ মন্তব্য ক...

আইসিসির এলিট প্যানেলে সৈকত

স্পোর্টস ডেস্ক : বাংলাদেশের প্রথম আম্পায়ার হিসেবে আইসিসির এল...

গণপিটুনিতে ২ জনের মৃত্যু

জেলা প্রতিনিধি: গাজীপুর জেলার কাপ...

মাংসের বাজারে মিলছে না স্বস্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক: রোজার শুরু থেকেই গরু, মুরগি, খাসিসহ সব ধরন...

কুকুরের কামড়ে শিশুসহ আহত ৮

জেলা প্রতিনিধি: নাটোর জেলার লালপু...

লরি-কাভার্ডভ্যানের সংঘর্ষ, নিহত ১

জেলা প্রতিনিধি: টাঙ্গাইলে লরি ও কাভার্ডভ্যানের মুখোমুখি সংঘর...

ইসরায়েলি বিমান হামলায়, নিহত ৩৬

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইসরায়েল সিরিয়ার আলেপ্পো প্রদেশে বিমান হাম...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা