ছবি: সংগৃহীত
ফিচার

দুঃখের চরে মিষ্টি আলু, কৃষকের মুখে হাসি

জেলা প্রতিনিধি, গাইবান্ধা: এক সময় চরের বালুময় পরিত্যক্ত জমিতে যেখানে অন্য ফসল ফলানো প্রায় অসম্ভব ছিল, সেই সব জমিতে শাকালু অর্থাৎ মিষ্টি আলুর চাষ করে ভাগ্য বদল করেন কৃষকরা।

আরও পড়ুন: টেকনাফ সীমান্তে ফের গোলাগুলির শব্দ

মাত্র এক দশকের মধ্যেই নিজেদের প্রচেষ্টায় গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া বাঙালী নদীর রাখালবুরুজ, মহিমাগঞ্জ ও সাঘাটা উপজেলার কচুয়া ইউনিয়নের আংশিক এলাকায় এক সময়ের দুঃখের চর নামে বিস্তীর্ণ এলাকার জমিগুলো এখন সুখের চর।

দুঃখের চরে কৃষকের মুখে ফুটেছে সুখের হাসি। ৩ মাসে ফলন যোগ্য একটি ফসলই বদলে দিয়েছে তাদের ভাগ্য। একই মৌসুমে একই ক্ষেতে ও প্রায় একই খরচে ২ বার মিষ্টি আলু চাষ করে সাড়া ফেলেছেন চরের চাষিরা।

আরও পড়ুন: ব্রহ্মপুত্র নদ যেন মরা কঙ্কাল!

কৃষি জমির বহুমুখী ব্যবহার করে উপজেলার মহিমাগঞ্জ ইউনিয়নের চরবালুয়া, বালুয়া তালপট্টি, বোচাদহ, রাখালবুরুজ ইউনিয়নের পারসোনাইডাঙা ও পার্শ্ববর্তী সাঘাটা উপজেলার কচুয়া ইউনিয়নের রামনগর ও কচুয়ার চরে চলতি মৌসুমে নতুন পদ্ধতিতে মিষ্টি আলু চাষ হয়েছে ১৫০ বিঘার বেশি জমিতে। কোনো প্রকার সরকারি সহায়তা বা পরামর্শ ছাড়াই নিজেদের উদ্ভাবিত চাষ পদ্ধতি ব্যবহার করে মিষ্টি আলু চাষে দ্বিগুণ লাভের স্বপ্ন দেখছেন তারা।

ফলে এক সময়ের অবহেলিত চরটিতে এখন বছরে ৪টি ফসল চাষ শুরু হয়েছে। গোবিন্দগঞ্জের দুই ইউনিয়ন ও সাঘাটা উপজেলার একটি ইউনিয়নের ত্রিমোহনায় বাঙালী নদীর ৫০০ বিঘা জমি নিয়ে চর বালুয়া। চরের জমি যেন সোনা ফলানোর এক উর্বর ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। নদী ভাঙ্গনের অভিশাপ এখন আশীর্বাদ হয়ে দেখা দিয়েছে।

আরও পড়ুন: অস্তিত্ব সংকটে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভাষা-সংস্কৃতি

বন্যা আর ভাঙ্গনে দুঃখের চর এখন সুখের চর হয়েছে মানুষের কাছে। উপজেলার মহিমাগঞ্জ ইউনিয়নের চরবালুয়া এখন সুখের চর হিসেবে পরিচিত। মিষ্টি আলু চাষই বদলে দিয়েছে তাদের দিন। জাপানে রফতানির পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রয়ের বাজার সৃষ্টি হয়েছে এখানে উৎপাদিত মিষ্টি আলুর। চলতি মৌসুমে এ চরে প্রথম দফা উৎপাদিত আলু বিক্রয় হয়েছে ২ কোটি টাকারও বেশি।

গত বছর এলাকায় আলেছ উদ্দিন নামে এক চাষির উদ্যোগে জমি থেকে আলু তোলার সাথে সাথেই ফেলে দেয়া আলুর লতা রোপণ করে নতুন পদ্ধতির আলুর চাষ শুরু হয়।

আরও পড়ুন: ধলেশ্বরীর তীরে কোটি টাকার তরমুজের হাট

এক বিঘা জমিতে নতুন পদ্ধতির চাষে তিনি দ্বিগুণ ফসল ঘরে তোলেন। এই পদ্ধতি অনুসরণ করে চলতি মৌসুমে চরে প্রায় দেড়শত বিঘা জমিতে দ্বিতীয়বার আলু রোপণ করেন চাষিরা।

চাষিরা বলেন, কার্তিক মাসের শুরুতেই মিষ্টি আলুর চারা রোপণ করে ৯০ দিন পর অর্থাৎ পৌষ-মাঘ মাসের মধ্যে আলু আহরণ ও বিক্রয় করা হয়। এরপর ওই জমিতে আলু সংগ্রহের সাথে সাথেই আলগা মাটি সমান করে আলুর লতা রোপণ করা হয়। কোন আয়াস ছাড়াই এ আলু বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে সংগ্রহ করা হবে।

আরও পড়ুন: নবরূপে ভালুকার গ্রীণ অরণ্য পার্ক

ফলে প্রায় বিনা খরচে প্রথম দফার কাছাকাছি পরিমাণ বাড়তি আলু পাওয়ার আশা করছেন তারা। দ্বিতীয় দফার এ আলু ঘরে তোলার পর ওই জমিতে তারা রোপণ করবেন বর্ষালি নামে একটি হাইব্রিড জাতের ধান বা ভুট্টা। আশ্বিন-কার্তিক মাসে ধান কাটার পর আবার চাষ করবেন আলু, পেঁয়াজ, মরিচ ও ভুট্টাসহ বিভিন্ন রবি
শস্য।

চলতি মৌসুমে ওই চরে খায়রুল আলম রাজা, আলেছ উদ্দিন, হবিবর রহমান, মোনারুল ইসলাম, মজিবর রহমান, ফেরদৌস, আলম মিয়া ও ছাইদুর রহমানসহ প্রায় ৫০ জন চাষি একই জমিতে দ্বিতীয় দফায় মিষ্টি আলু চাষ করেছেন। বর্তমানে মিষ্টি আলুর সবুজ পাতায় ঢেকে গেছে চরের বিস্তীর্ণ এলাকা।

আরও পড়ুন: পুকুরে মিলল ৬০০ গ্রামের ইলিশ

আর সারা বছর ধরে কৃষিকাজ থাকায় কৃষি শ্রমিকের ব্যাপক চাহিদার কারণে শ্রমিকরাও পেয়েছেন সুখের নাগাল। প্রথম দফায় ১৪ বিঘা আর দ্বিতীয় দফায় ১০ বিঘা জমিতে মিষ্টি আলুর চাষ করেন চর বালুয়া গ্রামের খায়রুল আলম রাজা।

তিনি বলেন, আগাম চাষ করা জমিতে উৎপাদিত আলু তুলেই নতুন করে দ্বিতীয় দফায় আলু লাগাতে হয়। আগামী বছর আমার অধিকাংশ জমিতেই আগাম আলুর চাষ করবো। প্রথম দফায় প্রতি শতাংশ জমির উৎপাদিত মিষ্টি আলু বিক্রয় হয়েছে গড়ে ২ হাজার টাকা। দ্বিতীয় দফায় গড়ে দেড় হাজার টাকার আলু বিক্রয় হলেও তা দাঁড়াবে সাড়ে ৩ হাজার বা তারও বেশি। এতে বিঘা প্রতি মিষ্টি আলু বিক্রয় দাঁড়াচ্ছে কমপক্ষে সোয়া লক্ষ টাকা।

আরও পড়ুন: রংপুরে আলো ছড়াচ্ছে বেসরকারি গ্রন্থাগার

বালুয়া গ্রামের মিষ্টি আলুর ব্যবসায়ী আলম মিয়া বলেন, চরে উৎপাদিত মিষ্টি আলু চাষিদের কাছ থেকে ক্রয় করে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরহ করা হয়। এতে আমার মতো আরও অনেকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। চরের উৎপাদিত মিষ্টি আলু দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছে। কৃষি বিভাগের সহায়তা ও পরামর্শ পেলে বেশি ফসল উৎপাদন করা সম্ভব।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, বাঙালী নদীর চরের চাষিরা কৃষিক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছেন। জমি পতিত অবস্থায় পড়ে থাকে না। তাদের কৃষি বিষয়ক সার্বিক সহায়তা দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।

সান নিউজ/এনজে

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

বিপ্লবী হাদির জানাজা সম্পন্ন

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শহীদ শরিফ ওসমান হাদির জানাজা জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় সম্...

কাজী নজরুল ইসলামের সমাধির পাশে বিপ্লবী হাদির দাফন সম্পন্ন

ওসমান হাদির দাফন সম্পন্ন হয় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধি প্রাঙ্গণে।...

ঝালকাঠিতে শোকে স্তব্ধ ওসমান হাদির গ্রামের বাড়ি

দক্ষিনের জেলা ঝালকাঠিতে শোকে স্তব্ধ ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শহীদ শরিফ ওসমান হ...

কাজী নজরুল ইসলামের সমাধির পাশেই হাদির কবর খনন

হাদির কবর খননের কাজ প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। এ সময় আশপাশে অনেক মানুষের ভিড় লক্ষ্য...

কুষ্টিয়ায় ওসমান হাদীর গায়েবানা জানাজা

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও জুলাই যোদ্ধা শহীদ শরীফ ওসমান হাদীর গায়েবানা জানাজা...

সাড়ে ৩ ঘণ্টা পর ঝালকাঠিতে সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার

ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার সন্তান সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সংগঠন ‘ইনকিলাব ম...

বাজারে কৃত্রিম সার সংকট সৃষ্টির অপরাধে ব্যবসায়ীকে জরিমানা

বাজারে কৃত্রিম সার সংকট সৃষ্টির অপরাধে কুষ্টিয়ার মিরপুরে এক ব্যবসায়ীকে জরিমান...

মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের ১১০ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন

মফস্বল ও প্রান্তিক পর্যায়ে কর্মরত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, হামলা, হ...

কেশবপুর দলিল লেখক সমিতির নির্বাচন সম্পন্ন

কেশবপুর দলিল লেখক সমিতির ত্রি-বার্ষিক নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। এতে সভাপতি নির্...

নাসার চাঁদে অভিযানের দায়িত্বে স্পেসএক্স না ব্লু অরিজিন?

পরবর্তী চাঁদ অভিযান কর্মসূচিতে কোন প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করা হবে নাসার নতুন প্রশ...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা