কামরুজ্জামান স্বাধীন, উলিপুর (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি : কুড়িগ্রামের উলিপুরে দীর্ঘ সময় থেকে তৎকালীন বিধি মোতাবেক লাইসেন্স বিহীন অবৈধ সংযোগে চলে আসছে সেচ কার্যক্রম। ঘটনাটি উপজেলার পূর্ব কালুডাঙ্গা গ্রামের। ১৯৮৭ সালে কৃষি কাজে ভূ-গর্ভস্থ পানি ব্যবস্থাপনা বিধিমালা চালু হয় এবং ২০১০ সালে সেচ লাইসেন্স কার্যক্রম চালু হলেও উপজেলা সেচ কমিটির নথিপত্রে এন আনছারী (আঙ্গুর) নামে কোনো ধরনের তথ্য পাওয়া যায়নি। এমন লাইসেন্স বিহীন সেচ সংযোগটির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ করেছেন আতাউর রহমান সবুজ।
আরও পড়ুন : যুবলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ২০০৩ সালে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কর্তৃক সার্ভিস ড্রোপের আওতায় এন আনছারী বৈদ্যুতিক খুঁটি নং টখ - ৫ঊ -২৬-২৭-১৮ থেকে প্রায় ৭শত ফুট দুরে একটি বোরিং করে সেচ কার্য পরিচালনা করে আসছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন জানান, এন আনছারী সেচ সংযোগ চালালেও উপযুক্ত গ্রাহক সেবা দিতে পারেনি, এমনকি দীর্ঘ সময় তাঁর সেচ বন্ধ ছিলো। এরই সুবাদে সরকারি বিধি মোতাবেক টখও-৫৩-২৬-২৭-১৫-২-২-১ বৈদ্যুতিক খুঁটি থেকে ২০১৭ সালে ১০১৪ নং সেচ লাইসেন্স গ্রহণ করে আতাউর রহমান সবুজ সেচ কাজ পরিচালনা করে আসছেন।
অভিযোগকারি সবুজ জানান, আমার সেচ সংযোগ থেকে মাত্র ২শত ৭ফুট দুরে আনছারীর লাইসেন্স বিহীন সেচ সংযোগ হলেও তাঁর সংযোগটি টখও-৫ঊ-২৬-২৭-১৮ বৈদ্যুতিক খুঁটি থেকে প্রায় ১৩শ ফুট দুরে । এন আনছারী (আঙ্গুর) যে তারের মাধ্যমে সংযোগ টেনে সেচ কাজ চালাচ্ছেন সেই তারে অসংখ্য জোড়া-তালি রয়েছে এবং দুর্বল বাঁশের খুঁটি ব্যবহার করা হয়েছে এমনকি বিভিন্ন মানুষের বাঁশঝাড় ও বাড়ির উপর দিয়ে সংযোগটি টানা হয়েছে। এই টানা তারের সংযোগের কারনে স্থানীয় স্বপনের সুপারির গাছ পুড়ে গেছে মর্মে ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩ সালে উলিপুর জোনাল অফিসে লিখিত অভিযোগ করেন স্বপন। কিন্তু উলিপুর জোনাল অফিস এ বিষয়ে তদন্ত করেননি কিংবা কোনো ব্যবস্থা নেননি বলে মুঠোফোনে অভিযোগ করেন স্বপন। বর্তমানে বিষয়টি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের আশংকা রয়েছে এবং এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে এবং অনেকেই খারাপ কিছু হওয়ার আশংকা করছেন।
আরও পড়ুন : ট্রাকের ধাক্কায় বাইক আরোহী নিহত
আতাউর রহমান সবুজের লিখিত অভিযোগের উপর ভিত্তি করে সেচ কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ১১ জানুয়ারি ১৯ নং স্মারক মূলে উলিপুর ইউনিটের বিএডিসি ক্ষুদ্র সেচ এর কার্যালয়ে একটি লিখিত প্রতিবেদন পেশ করেন। ওই প্রতিবেদনের আলোকে উলিপুর ইউনিটের বিএডিসি কর্মকর্তা ১৭ জানুয়ারি সরেজমিন পরিদর্শন করেন এবং ১১নং স্মারক মূলে ১৮ জানুয়ারি উপ-সহকারী প্রকৌশলী (ক্ষুদ্রসেচ) আব্দুল্লাহ আল রওশন আলী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে একটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈদ্যুতিক সংযোগটি ঝুকিপূর্ণ এবং এন আনছারী নামে উপজেলা সেচ কমিটিতে কোনো ধরনের তথ্য নেই।
বিএডিসির কর্মকর্তার প্রতিবেদনের আলোকে উপজেলা সেচ কমিটির সভাপতি ও নির্বাহী কর্মকর্তা আতাউর রহমান ৫৬ নং স্মারক মূলে ২৩ জানুয়ারি উলিপুর জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার বরাবর একটি লিখিত প্রতিবেদন প্রেরণ করেন এবং ২৯ জানুয়ারির মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের কথা বলেন।
অভিযুক্ত এন আনছারী মুঠোফোনে জানান, আমি নিয়মনীতি মেনেই দীর্ঘদিন থেকে সেচ চালাচ্ছি, সবুজ যা করছে তা মোটেই ঠিক করছে না।
আরও পড়ুন : বায়ুদূষণে শীর্ষে ঢাকা
বিএডিসি'র উপ-সহকারী প্রকৌশলী (ক্ষুদ্র সেচ) আব্দুল্লাহ আল রওশন রুবেল জানান, সেচ লাইসেন্স সংক্রান্ত কোনো ঝামেলা হলে আমরা সেটি নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারি। আনছারী সাহেবের সেচ সংযোগ কি হবে এটি পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ ভালো জানবেন। তিনি আরো জানান, আতাউর রহমানের সাহেবের অভিযোগের ভিত্তিতে উপজেলা সেচ কমিটির সভাপতি বরাবর একটি পূর্নাঙ্গ রিপোর্ট জমা দিয়েছি।
সেচ কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আতাউর রহমান জানান, আগামী বর্ধিত মিটিংয়ে এরকম ঝামেলাযুক্ত বিষয়গুলো তুলে ধরে সমাধানের ব্যবস্থা করা হবে।
ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার সোহানুর রহমান জানান, এই উপজেলায় সেচ লাইসেন্স বিহীন প্রায় ১২শ সংযোগ আছে, আমি সামগ্রিকভাবে ইউএনও মহোদয়কে অবগত করেছি তারপর কি ব্যবস্থা নেয়া যায় আলোচনা সাপেক্ষে সে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সান নিউজ/এমআর