সান নিউজ ডেস্ক: ফেসবুকে ধর্মীয় উস্কানিমূলক স্ট্যাটাস দিয়ে ফের গ্রেফতার হয়েছেন সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার ঝুমন দাশ আপন। ফের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলাও হয়েছে।
আরও পড়ুন: ঢাকাবাসী পরিবারকে সময় দিতে পারে না
মঙ্গলবার (৩১ আগস্ট) দুপুরে পুলিশ ঝুমনকে বাড়ি থেকে আটক করে। পরে রাতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হলে ওই মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। ঝুমন দাশের বাড়ি শাল্লা উপজেলার হবিবপুর ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামে।
এর আগে গত বছরের মার্চে ঝুমন দাশ আপনের ফেসবুকে দেয়া একটি পোস্টকে ঘিরে শাল্লার নোয়াগাঁওয়ে ‘সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা’র ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে পুলিশের মামলায় দীর্ঘ কারাবরণ শেষে শর্তযুক্ত জামিনে মুক্ত হন ঝুমন।
আরও পড়ুন: চৌমুহনীতে ১৪৪ ধারা জারি
তবে ঝুমন পুলিশকে জানিয়েছেন, কেউ ক্ষুব্ধ হওয়ার মতো কিছু তিনি লেখেননি। তবে সম্প্রতি নারীদের পোশাক নিয়ে বিতর্কের বিষয়ে ঝুমন দু-একটি পোস্ট দিয়েছেন।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ২৮ আগস্ট বেলা ৩টার দিকে ঝুমন দাশের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ‘মসজিদ-মন্দির নিয়ে একটি পোস্ট’কে ঘিরে এলাকায় উত্তেজনা দেখা দেয়। ওই পোস্টের পর মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে নোয়াগাঁও গ্রামের বাড়ি থেকে ঝুমনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে উস্কানিমূলক ওই স্ট্যাটাস ঝুমন দাশ নিজেই দিয়েছে পুলিশের কাছে স্বীকার করলে তার বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা রুজু করে গ্রেফতার দেখায়।
আরও পড়ুন: বুদ্ধির খেলায় হেরেছে বাংলাদেশ
ঝুমন দাশের স্ত্রী সুইটি রানী দাশ জানান, চার দিন ধরে তাদের গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পুলিশ অবস্থান করছে। গতকাল (মঙ্গলবার) দুপুরে কয়েক পুলিশ সদস্য তাদের বাড়িতে যান। তারা ঝুমনকে বলেন, এলাকার নোয়াগাঁও বাজারে পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ঝুমনের সঙ্গে কথা বলবেন। এরপর ঝুমন ও তিনি (সুইটি) নৌকায় ওঠেন। কিন্তু পরে নোয়াগাঁও বাজার না গিয়ে তাদের শাল্লা থানায় নেওয়া হয়। সারা দিন তিনি ঝুমনের সঙ্গে থানায় ছিলেন। পরে রাত নয়টার দিকে তিনি ঝুমনকে থানায় রেখে বাড়িতে ফিরে আসেন। আজ (বুধবার) সকালে থানায় ফোন দিলে পুলিশ তাকে জানায়, ঝুমনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
মনের মা নিভা রানী দাশ বলেন, ‘পুলিশ বলছে, ঝুমন নাকি ফেসবুকে আবার কী লিখেছে! এ কারণে তাকে থানায় নেওয়া হয়েছে। গতকাল (মঙ্গলবার) দিনে ও রাতে বারবার পুলিশের সঙ্গে কথা বলেছি। আজ (বুধবার) সকালে পুলিশ জানিয়েছে, ঝুমনের বিরুদ্ধে আবার মামলা হয়েছে।’
আরও পড়ুন: নিউইয়র্ক পৌঁছেছেন আইজিপি
শাল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ফেসবুকে পোস্টের প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার দুপুরে ঝুমন দাসকে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি পোস্টটি তার করা বলে স্বীকার করেন। এরপরই তার বিরুদ্ধে শাল্লা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু সাঈদ বলেন, ঝুমন দাশের বিরুদ্ধে থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আরেকটি মামলা হয়েছে। এ মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। আজ তাঁকে আদালতে নেওয়া হবে।
আরও পড়ুন: অপচিকিৎসায় মাদ্রাসাছাত্রীর মৃত্যু
প্রসঙ্গত, গত বছরের ১৬ মার্চ ফেসবুকে আপত্তিকর পোস্ট দেয়ার অভিযোগ তুলে ১৭ মার্চ নোয়াগাঁও গ্রামে সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর ও পারিবারিক মন্দিরে হামলা চালানো হয়। তার আগে ১৬ মার্চ রাতে ঝুমনকে আটক করা হয়। তাকে ১৭ মার্চ ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে হাজির করা হয়। আদালত সেদিন তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
গত বছরের ২২ মার্চ হেফাজতে ইসলামের তৎকালীন নেতা মামুনুল হককে নিয়ে ফেসবুকে আপত্তিকর পোস্ট দেওয়ার অভিযোগে শাল্লা থানায় ঝুমন দাশের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলায় হয়। এই মামলায় ২৩ মার্চ ঝুমনকে গ্রেফতার দেখানো হয়। এই মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গত ৩০ মার্চ তাকে দুদিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। দীর্ঘ ৬ মাস ১২ দিন কারাবাসের পর গত বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর সুনামগঞ্জ কারাগার থেকে মুক্তি পান ঝুমন দাশ আপন।
সান নিউজ/কেএমএল