কামরুজ্জামান স্বাধীন, উলিপুর (কুড়িগ্রাম) : বাবা নেয়না খোঁজ। অসুস্থ মা নিজেও অসহায়। অভাবের সংসার ঠিকভাবে খেতেও পারেন না, দুধ জুটবে কোথা থেকে! তাই বাধ্য হয় ১৫ মাস বয়সী কন্যা শিশুকে দত্তক দিয়েছেন অসহায় মা। একদিকে ছোট মেয়েকে দত্তক, অন্যদিকে আট বছরের মেয়ের ভরণ-পোষণ সব মিলিয়ে মা এখন মানসিক বিপর্যস্থ্য।
এ পরিস্থিতে দুই বছরেও খোঁজ নেয়নি পাষন্ড পিতা। স্বজনরা জানান, ঢাকায় দ্বিতীয় বিয়ে করে সংসার পেতেছেন শেফালীর স্বামী। এমনই ঘটনা ঘটেছে কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার করতোয়ার পাড় গ্রামে।
স্থানীয়রা জানান, ২০১১ সালে থেতরাই ইউনিয়নের গোড়াই পিয়ার গ্রামের সৈয়দ আলীর পুত্র আনিছুর রহমানের সঙ্গে একই উপজলার দলদলিয়া ইউনিয়নের করতোয়ার পাড় গ্রামের গফ্ফার আলীর মেয়ে শেফালী বেগমের বিয়ে হয়। বিয়ের এক বছরের মাথায় একটি কন্যা সন্তান আসে তাদের সংসারে। আনিছুর বিয়ের আগ থেকেই ছিলেন মাদকাসক্ত। বিয়ের পর থেকে সামান্য বিষয় নিয়েই স্ত্রী শেফালীকে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করতো। এরই মধ্যে তাদের ঘরে আরও একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হলে মাদকাসক্ত আনিছুর স্ত্রীকে জোড় পূর্বক বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। এর কিছুদিন পরই দুই মেয়েকে নিয়ে স্বামীর বাড়িতে গেলে নির্যাতনের মাত্রা বাড়ায় আনিছুর। একপর্যায় বেধড়ক মারপিট করে হাতের হাড় ভেঙ্গে দেয় শেফালীর। পরে আনিছুর তাদের ছেড়ে চলে যায় ঢাকায়।
এদিকে দুই মেয়েকে নিয়ে শ্বশুর বাড়ির লোকজনও বাড়িতে থাকতে না দিলে নিরুপায় হয়ে বৃদ্ধা মায়ের বাড়িতে আশ্রয় নেয় শেফালী। স্বামীর নির্যাতনের শিকার হয়ে সেখানেও অসুস্থ শেফালীর দিন কাটে অনাহারে অর্ধাহারে।
১৫ মাসের কন্যা শিশু খাবারের অভাবে কেঁদেই থাকতো সারাদিন। এ পরিস্থিতে ১৫ মাসের শিশুকে বাধ্য হয়ে একই ইউনিয়নের দলবাড়ি গ্রামের নিঃসন্তান আনিছুর রহমান দম্পতির কাছে দত্তক দেন তিনি।
অসহায় শেফালী বেগম বলেন, আমার স্বামী নেশাগ্রস্ত প্রায়ই আমাকে মারপিট করত, আমাকে বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে গোপনে বিয়ে করেছে। স্বামী সন্তানকে ফিরে পেয়ে স্বাভাবিক জীবনে আসার আঁকুতি অসহায় শেফালীর।
শেফালীর মা রমিছা খাতুন বলেন, অভাবের সংসার নিজেই খাবার পাই না, ছাওয়া-পায়াক কি খাওয়াই, তাই বাধ্য হয়ে দত্তক দিয়েছি। দলদলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আতিয়ার রহমান মুন্সি বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই, এ ইউনিয়নে অভাবী মানুষের সংখ্যা বেশি। এরকম ঘটনা ঘটতেই পারে।
উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা নূর-এ-জান্নাত রুমি বলেন, বিষয়টি আপনার কাছেই প্রথম শুনলাম। সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযাগ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সান নিউজ/কেএস/এনকে