মোঃ আব্দুল লতিফ : সম্প্রতি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (Artificial Intelligence) ‘গডফাদার’খ্যাত ড. জেফ্রি হিনটনের গুগল ছেড়ে যাওয়া নিয়ে বিশ্বব্যাপী নানা আলোচনা চলছে। এই আলোচনার অন্যতম কারন হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে তার বিশেষ সতর্ক বাণী। তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যদি দিন দিন আরো উন্নত হতে থাকে তাহলে তা মানবজাতির বহুমুখী বিপদের কারন হতে পারে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা উন্নয়নে অসামান্য অবদানে যেখানে তার গর্বিত হওয়ার কথা, তিনি সেখানে কিছুটা অনুশোচনায় ভুগছেন বলে উল্লেখ করেছেন।
আরও পড়ুন : বিনিয়োগ বান্ধব বাজেট চাই
চিন্তার বিষয় হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে আশঙ্কা এই প্রথম নয়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যে মানবজাতির অস্তিত্বের প্রতি হুমকি হয়ে উঠতে পারে বিশ্বখ্যাত পদার্থ বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং এই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন ২০১৪ সালে বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকার। তার সর্বশেষ গ্রন্থ - ‘ব্রিফ এন্সারস টু দা বিগ কোয়েশ্চেন’- এ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে একই ধরনের শঙ্কা ব্যক্ত করেন।
বিশ্বব্যাপী দারুন জনপ্রিয় মানব ইতিহাস বিষয়ক বই ‘সেপিয়েন্স’ এর লেখক ও ইসরায়েলি দার্শনিক ইডভাল নোয়াহ হারারি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিষয়ে সতর্ক করে বলেছেন - “কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে লড়াইয়ে মানুষ টিকে থাকতে পারবে কিনা জানি না”।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিষয়ে এই সতর্ককারীদের তালিকায় আরও আছেন টেক- জায়ান্ট টেসলার কর্নধার ইলন মাস্ক ও অ্যাপেলের সহ প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ ওজনিয়াক ছাড়াও অনেক বড় মাপের বিজ্ঞানী ও দার্শনিকগণ।
ঠিক কোন ধরনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কে তারা সতর্ক করেছেন; আসুন তাহলে দেখে নেই কোন ধরনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্ষমতা কেমন।
আরও পড়ুন : অনিয়ন্ত্রিত রাগ ক্ষতি করছে
সক্ষমতা বিবেচনায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে সাধারণত: তিনটি ভাগে বিভক্ত করা যেতে পারে :
(ক) সীমিত ক্ষমতার বিশেষায়িত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা,
(খ) উন্নত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং
(গ) অতি উন্নত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।
(ক) সীমিত ক্ষমতার বিশেষায়িত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা: এই ধরনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তৈরি করা হয় কোন একটি বিশেষ কাজ সম্পাদনের লক্ষ্যে। পূর্ব নির্ধারিত প্রোগ্রাম অনুযায়ী এই ধরনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, আপনার লিখিত বর্ণনা অনুযায়ী ছবি তৈরীর করে দিবে OpenAI এর DALL-E ও
মিডজার্নি ইনকর্পোরেশনের Midourney AI, আপনাকে যেকোন বিষয়ে আস্ত একটা রচনা বা গল্প লিখে দিবে ChatGPT ও Notion AI। টেসলার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন ড্রাইভারবিহীন স্বয়ংক্রিয় গাড়ী আপনাকে আপনার গন্তব্যে পৌঁছে দিবে নিরাপদে।
বর্তমানে আমরা যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কে জানি বা দেখছি তা আসলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা উন্নয়নের প্রাথমিক পর্যায়ের সীমিত ক্ষমতার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা । কিন্ত এই প্রাথমিক পর্যায়ের কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা ইতোমধ্যেই যথেষ্ঠ শক্তিশালী হিসেবে প্রমানিত হয়েছে। আজ থেকে ২৬ বছর আগে ১৯৯৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক শহরে একটি দাবা খেলার প্রতিযোগিতায় বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দাবাড়ু গ্যারি ক্যাসপারভ পরাজিত হয়েছিলেন আইবিএম এর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ডিপব্লু (Deepblue) কাছে। অন্যদিকে ২০১৬ সালে বিশ্ব GO চ্যাম্পিয়ন Lee Sedol গুগলের তৈরি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা AlphaGo এর কাছে পরাজিত হয়েছিল ।
(খ) উন্নত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা : এই ধরনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানব মস্তিষ্কের মতই চিন্তাভাবনা করে নিজে নিজে সিদ্ধান্ত নেবে এবং সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে।
(গ) অতি উন্নত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এই নিবন্ধের শুরুতে বড় বড় বিজ্ঞানী ও সফল প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞগণ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কে যে সতর্কতা বা সাবধানতার বাণী দিয়েছেন তা মূলত এই অতি উন্নত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কথা চিন্তা করেই।
আরও পড়ুন : মায়েদের অর্জন শুধুই একাকিত্ব
এটি এমন ধরনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যা সম্পূর্ণ নিজে নিজে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে, ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করবে, আবেগ অনভুতি থাকবে এবং সেই সাথে মানুষের মতোই অভিযোজন ক্ষমতা থাকবে। এ ধরনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা একবার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার পরে তার লক্ষ্যে পৌঁছাতে যত বাধা-বিপত্তি আসুক না কেন সে সকল বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করবে।
এই পৃথিবীতে মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের সাথে টিকে থাকার অন্যতম কারণ হলো মানুষের অভিযোজন ক্ষমতা, ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে অভিজ্ঞতার আলোকে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা এবং মানুষের জানার ও উদ্ভাবনের তীব্র আকাঙ্ক্ষা। যদি একটি রোবটের মধ্যে মানুষের মতোই স্বাভাবিক ক্ষমতাগুলো থাকে তাহলে মেশিন ও মানুষের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই অবশ্যম্ভাবী।
এ কথা অনস্বীকার্য যে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার লোভনীয় কিছু সুবিধা আছে। আমরা সেই সুবিধাগুলোকে ব্যবহার করে অনেক অল্প সময়ে, অনেক অল্প খরচে, অনেক কঠিন কাজও সহজ করে সম্পাদন করতে পারি।
আমাদের স্বাস্থ্য সেবা ও চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করা যেতে পারে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে রোগ নির্ণয় ও জটিল অপারেশন খুব সহজে করা যেতে পারে। সম্প্রতি দি গার্ডিয়ান পত্রিকা জানিয়েছে যে, নির্ভুলভাবে ক্যান্সার নির্ণয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বড় ধরনের সাফল্য দেখিয়েছে।
আরও পড়ুন : স্মার্ট জনশক্তি স্মার্ট বাংলাদেশের প্রধান ভিত্তি
লেখাপড়া ও জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আমাদের অনেক বড় শিক্ষক হিসেবেও কাজ করতে পারে। আধুনিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার চ্যাটবট গুলো খুব অনায়াসেই আপনাকে আপনার চাহিদা অনুসারে যে কোন তথ্য, রচনা, কবিতা বা গল্পও লিখে দিতে পারে।
অনেক ঝুঁকিপূর্ণ কাজ আছে যেগুলো মানুষের জন্য প্রায়ই দুর্ঘটনার কারণ হয়ে থাকে, যেমন খনি থেকে খনিজ পদার্থ আহরণ, সমদ্রেু র নিচে সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন বা তেল-গ্যাসের পাইপলাইন নির্মাণ ও মেরামত করা, যুদ্ধের ময়দানে বোমা নিষ্ক্রিয় করা ইত্যাদি। মানুষ এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার রোবট ব্যবহার করে উপর্যুক্ত কাজগুলো অনায়াসে করতে পারে। কল-কারখানায় যেখানে মানুষ একটি নির্দিষ্ট সময় এ পর্যন্ত কাজ করে এবং তারপরে বিশ্রামে যায় কিন্তু সেখানে রোবট অনায়াসের ২৪/৭ কাজ করতে পারবে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে আপনি খুব সহজেই একটি গানে ব্যবহৃত বাদ্যযন্ত্রের শব্দ আলাদা করতে পারবেন অথবা রিমুভ করে দিতে পারবেন। যেকোনো একটি ছবি থেকে আপনি ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড মুছে দিতে পারবেন এবং ইচ্ছা মতো এডিট করতে পারবেন। আপনি চাইলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আপনার নির্দেশ মত ছবি বা ভিডিও তৈরি করে দেবে এবং সেই সাথে কন্ঠ যোগ করে দিবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এত সব সুবিধার সাথে কিছু অসুবিধা রয়েছে। অসুবিধা গুলো এতই তাৎপর্যপূর্ণ যে এগুলোকে কোনভাবেই অবহেলা করা যায় না।
এবার আসুন কিছু অসুবিধাও দেখে নেওয়া যাক:
বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের প্রতিবেদন অনুযায়ী আগামী পাঁচ বছরে সারা পৃথিবীতে প্রায় দেড় কোটি মানুষ তাদের চাকরি হারাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কাছে। যদি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অনায়াসেই আমাদের বেশিরভাগ কাজ করে দেয় তাহলে আমাদের কর্মসংস্থানের কি হবে?
আরও পড়ুন : শ্রমিকের নিরাপদ কর্মপরিবেশ চাই
প্রত্যেকটি সেক্টর থেকে বিপুল পরিমাণ জনশক্তি কর্মহীন হয়ে পড়বে। এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সফটওয়্যার তৈরি করার জন্য মুহূর্তেই যে কোন প্রোগ্রামিং ভাষা লিখে দিচ্ছে, বড় বড় আর্কিটেকচারাল ডিজাইন ও কনস্ট্রাকশনাল ডিজাইন তৈরী করে দিচ্ছে, এমনকি মহাকাশ গবেষণায়ও খুব সহজেই অবদান রাখছে। প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো তাদের গতানুগতিক ব্যবসায়িক পোর্টফোলিও সংকোচন করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উপর বেশি বিনিয়োগ করছে। কারণ তারা বাজার গবেষণায় দেখতে পাচ্ছে, আগামীতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ছাড়া কোনভাবেই তীব্র প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকা সম্ভব না। এজন্য তারা প্রচুর পরিমাণ কর্মী ছাঁটাই করছে। শুধুমাত্র প্রযুক্তি খাত থেকে ২০২৩ সালের প্রথম পাঁচ মাসে এই ছাটাই হওয়া কর্মীর সংখ্যা ছিল ১,৮৫,০০০ যা গত বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে ছিল ১,৬৪,৪১১।
এশিয়া ও আফ্রিকার অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলো ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট কাজে লাগিয়ে তাদের বিপুল জনসাধারণ ও দেশের ভাগ্য বদলের দ্বারপ্রান্তে আছে। কিন্তু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রভাবে কর্মসংস্থানের পরিধি সম্পসারিত হওয়ার পরিবর্তে যদি সংকুচিত হয়, সেক্ষেত্রে ব্যাপকসংখ্যক কর্মরত জনশক্তি কর্মহীন হবে। সেই সাথে কর্মপ্রত্যাশী তরুণ জনশক্তি যারা প্রতিবছর চাকুরীর বাজারে প্রবেশ করছে তারাও নতুন কর্মের সন্ধান পাবে না।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উপর অতি নির্ভরতা সৃজনশীলতার বিনাশ করবে। সৃজনশীলতা অনেক সাধনা ও সময় সাপেক্ষ বিষয়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যদি চাহিদামত চিত্রকর্ম, সংগীত বা কোন বিষয়ে গল্প উপন্যাস মহুর্তেই লিখে দিতে পারে তাহলে মানুষ সৃজনশীলতা চর্চা বাদ দিবে এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে।
মানুষ যদি জটিল ও গবেষণার বিষয়গুলো সব কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দ্বারা সম্পাদন করে নেয় তাহলে মানুষ অভিজ্ঞতা শূন্য হয়ে পড়বে, সে ক্ষেত্রে মানবজাতি পুরোপুরি মেশিনের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে পারমাণবিক বোমা বা জীবানু অস্ত্রের মত মারাত্মক মানববিধ্বংসী অস্ত্র তৈরি খুব সহজ হয়ে যাবে। যদি কোন দেশ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহার করে এধরনের অস্ত্র তৈরি করে, তাহলে মানবজাতির অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়তে পারে।
আরও পড়ুন : ঈদের অর্থনীতিতে নারীর অবদান
ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপ্রয়োগ হলে মানুষের গোপনীয়তা নিঃসন্দেহে হুমকির মুখে পড়বে। মানুষের ব্যাংক তথ্য, ঋণের তথ্য, ডেবিট কার্ড ও ক্রেডিট কার্ড এর গোপন পিন নাম্বার থেকে শুরু করে তার সমস্ত গোপনীয়তা মহুূর্তেই প্রকাশ হয়ে যেতে পারে, এমনকি তার বিভিন্ন আইডি পাসওয়ার্ড হ্যাক হয়ে যেতে পারে মুহুর্তেই।
উপরোক্ত অসুবিধার কথা চিন্তা করে, বড় বড় বিজ্ঞানী ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা OPEN AI এর GPT-4 এর চেয়ে বেশি শক্তিশালী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এর উপর গবেষণা করতে নিরুৎসাহিত করেছেন। কিন্তু অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে কেউ এই নিষেধ কানে তুলবে না, কারণ জ্ঞান-বিজ্ঞানে অগ্রসর দেশগুলো একে অপরের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। এখন কর্পোরেট জগতে ক্ষমতার লড়াই চলছে, কে কার চেয়ে শ্রেষ্ঠ সেই প্রতিযোগিতা চলছে, চলছে বাজার দখলের প্রতিযোগিতা।
ইলন মাস্ক ও স্যাম অল্টম্যানের OpenAI -তে ৪ বছর আগে তো সব এক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছিল। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উপর গবেষণার জন্য একই প্রতিষ্ঠানে মাইক্রোসফট আরো কয়েক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করার জন্য চুক্তি সম্পাদন করেছে। অন্যদিকে মাইক্রোসফট এর প্রতিদ্বন্দি গুগলও বসে নেই। অতি অল্প সময়ের মধ্যে গুগল ‘Google Bard’ নামে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা টুল বাজারে নিয়ে আসবে। চীনা প্রযুক্তি কোম্পানি বাইদু তার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা টুল ‘Ernie Bot’ বাজারে আনছে।
বিশ্বের বড় বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো এখন বাজার দখল আর শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে লিপ্ত তাই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উন্নয়ন সীমিত করার কোন পদক্ষেপ আপাতত দৃষ্টিৃ গোচর হচ্ছে না। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে এই প্রতিযোগিতা যদি চলতেই থাকে তাহলে এই পৃথিবী পরিচালনার মূল ক্ষমতা মানুষের কাছ থেকে একদিন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নিকট হস্তান্তরিত হবে, সেদিন হয়তো বেশি দুরে নয়।
যদি আমরা আমাদের গতানুগতিক কাজের পাশাপাশি আমাদের সৃষ্টিশীল কাজের ক্ষেত্রেও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উপর নির্ভরশীল হয়ে যাই, তাহলে একদিন এমন একটি মানব সমাজ দেখতে হবে, যেখানে বেশিরভাগ গল্প, উপন্যাস, সাহিত্য, শিল্প-সংস্কৃতি, চিত্রকর্ম, সংগীত বেশির ভাগই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দ্বারা তৈরি। একবার চোখ বন্ধ করে চিন্তা করে ভাবনু তো, তেমন একটি মানব সমাজে আপনি কেমন অনুভব করবেন যেখানে যন্ত্রের অবদানের তুলনায় মানষেু র অবদান খুবই সামান্য!
যদিও গবেষণা ইঙ্গিত করছে যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানুষের আবেগ বুঝতে পারবে। যদি মানুষের আবেগ সত্যি বুঝতে পারেও তাহলে কি মেশিনেরও আবেগ থাকবে? মানষুকে প্রাণী থেকে আলাদা করেছে তার বিবেক। মেশিনকে শুধু‘Code of Ethics’ শিখিয়েই কি বিবেকবান বানানো যাবে? এই প্রশ্নের উত্তর হয়ত সময়ই একদিন বলে দিবে।
আরও পড়ুন : তাপ প্রবাহে হিট স্ট্রোক ও করণীয়
লেখক : প্রাক্তন শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
ইমেইলঃ [email protected]
 
                                     
                                 
                                         
                     
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                        
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                     
                             
                             
                     
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
             
                     
                             
                             
                     
                            