নিজস্ব প্রতিবেদক : পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, আমাদের দেশে যারা দুর্নীতি করে টাকা নিয়ে যান, তাদের সম্পদ যদি জব্দ (যুক্তরাষ্ট্র) করা হয় আমরা খুশি হবো। আমরা স্বাগত জানাচ্ছি।
আরও পড়ুন : রফতানিতে সর্বোচ্চ আয় তৈরি পোশাকে
বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর বেইলি রোডে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে মতবিনিময়ের পর সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, দুর্নীতি দমনে তারা নিষেধাজ্ঞাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকে যেসব দুর্নীতির অর্থ রক্ষিত আছে, তা জব্দ করা হবে বলে তারা জানিয়েছে। এ সম্পর্কে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘তারা যদি দুর্নীতি বন্ধে সাহায্য করেন, আমরা খুবই খুশি হবো।’
“কারণ, তাদের দেশে একটি আইন আছে, বেশি টাকা নিয়ে গেলে কাজের অনুমোদন পাওয়া যায়, তাদের নাগরিক হওয়া যায়। শুধু তাদের দেশে না, অন্য দেশেও এই নিয়ম আছে। আর আমাদের দেশে যারা দুর্নীতি করে টাকা নিয়ে যান, তাদের সম্পদ যদি জব্দ করা হয় আমরা খুশি হবো। আমরা স্বাগত জানাচ্ছি,” যোগ করেন মন্ত্রী।
আরও পড়ুন : বাংলাদেশের উন্নয়ন মডেল অনুসরণযোগ্য
মতবিনিময়ে বিশিষ্ট ব্যক্তিরা কী নির্দেশনা দিয়েছেন, জানতে চাইলে ড. মোমেন বলেন, ‘একটা হচ্ছে আগামী দিনে আমরা কীভাবে কূটনীতিকদের ম্যানেজ করবো, তারা বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছেন। তারা বলেছেন, ১৪ জন কংগ্রেসম্যান চিঠি লিখেছেন। সেখানে তারা বলেছেন, বাংলাদেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা এত বেশি নির্যাতিত হয়েছেন যে গত ১০ বছরে তাদের সংখ্যা অর্ধেক কমে গেছে। এর ওপর একটি সেমিনার করতে বলেছেন। সেই সেমিনারে আসল তথ্য তুলে ধরা উচিত।’
কূটনীতিকদের কীভাবে ম্যানেজ করতে বলেছেন- প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে বিদেশি কূটনীতিকরা একটু আগ বাড়িয়ে কথা বলেন। অন্য কোনো দেশে এভাবে বলেন না। আলোচনায় যেসব কূটনীতিক ছিলেন, তারা বলেছেন যে আমরা তো বহু বছর বিদেশে চাকরি করেছি, কিন্তু বাংলাদেশের মতো এমন অবস্থা কোথাও দেখিনি।’
ড. মোমেন আরও বলেন, ‘আমাদের দেশে ঐতিহাসিকভাবে এটা হয়ে আসছে, এ জন্য বিভিন্ন মহল দায়ী। তবে এই সংস্কৃতি একদিনে পরিবর্তন করা হয়তো সম্ভব হবে না। কিন্তু আমি মনে করি, এখন সময় হয়েছে। এরপর একটা সেমিনার করবো।’
আরও পড়ুন : ঢাকায় আসছেন দুই মার্কিন কংগ্রেসম্যান
আগামী সপ্তাহে দুই মার্কিন কংগ্রেসম্যানের বাংলাদেশ সফর নিয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের ৫০ বছর পূর্তি উৎসবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন খুব আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যে বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক, খুবই শক্তিশালী সম্পর্ক করতে চান তিনি। তখন তিনি বলেছেন যে বাংলাদেশ একটি উদীয়মান অর্থনীতি। এশিয়ান টাইগার। তারই পরিপ্রেক্ষিতে একের পর এক সিনিয়র কর্মকর্তারা এসেছেন, আমরা তাদের স্বাগত জানিয়েছি। তারা স্বেচ্ছায় এসেছেন, আমরাও খুব খুশি।’
‘কারণ, করোনা মহামারির সময় দুই বছরের বেশি সময় এই এনগেজমেন্ট (যোগাযোগ) কম ছিল। আর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের বহুমাত্রিক সম্পর্ক। কাজেই তারা এসেছেন।’ যোগ করেন তিনি।
ড. মোমেন আরো জানান, ‘এছাড়াও বাংলাদেশে একটি বড় ইস্যু রোহিঙ্গা। ওই দুজন আসছেন মূলত রোহিঙ্গাদের বিষয়টি দেখার জন্য। রোহিঙ্গাদের আগে ১২ ডলার সহায়তা দেওয়া হতো, এখন কমিয়ে আট ডলার করা হয়েছে।’
‘আর রোহিঙ্গা ইস্যুতে সবচেয়ে বড় দাতা যুক্তরাষ্ট্র। তারা (দুই কংগ্রেসম্যান) একটি অনুমোদন কমিটির সদস্য, তারাই টাকা অনুমোদন করেন। এখন এসে দেখবেন, আরও অর্থের দরকার আছে কি না, বাড়ানোর প্রয়োজন কি না। কেন কমলো? আর যে টাকা দেন, সেটির কতটা ব্যবহার হচ্ছে। এসব যাচাই-বাছাই করবেন। তারা তো আমাদের টাকা দেন না, দেন ইউনিসেফকে’, যোগ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
আরও পড়ুন : আ’লীগ ভোটাধিকার সুরক্ষিত করেছে
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে জিসোমিয়া ও আকসা চুক্তি কবে নাগাদ হতে পারে। সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, নির্বাচনের আগে এ সংক্রান্ত কোনো চুক্তি হবে না।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত আকসা ও জিসোমিয়া নামের দুটি চুক্তি সই করতে আগ্রহী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আকসার (অ্যাকুজিশান অ্যান্ড ক্রস-সার্ভিসিং অ্যাগ্রিমেন্ট) অধীনে মার্কিন বাহিনী খাদ্য, জ্বালানি, গোলাবারুদ ও সরঞ্জামাদি বিনিময় করে থাকে। জিসোমিয়া (জেনারেল সিকিউরিটি অব মিলিটারি ইনফরমেশন অ্যাগ্রিমেন্ট) চুক্তির অধীনে সামরিক গোয়েন্দা তথ্যের বিনিময় হয়।
সান নিউজ/জেএইচ