আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনের রোডম্যাপের খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। গণঅভ্যুত্থানের পর গঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জন্য এটি হবে প্রথম নির্বাচন। বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করলেও এনসিপির কার্যক্রম জুলাই সনদে আটকে আছে। দলটির মধ্যে নির্বাচনের জন্য দৃশ্যমান কোনো প্রস্তুতি নিতে এখনো দেখা যায়নি। তবে, প্রাথমিকভাবে দলটি নিবন্ধন বাছাইয়ে টিকে গেছে।
এনসিপি ৩০০ আসনে এককভাবে নির্বাচন করবে নাকি জোটবদ্ধভাবে করবে— তাও অস্পষ্ট। কাকে, কোন আসনে মনোনয়ন দেওয়া হবে, সেই কাজও প্রায় নিষ্ক্রিয়। তবে, যারা আগ্রহ দেখাচ্ছেন তাদের নাম তালিকাবদ্ধ করলেও ‘গণপরিষদ নির্বাচন’ না হলে তারা আসন্ন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না বলে দলটির একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, “সরকার কি গণপরিষদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে? যদি না নেয়, তাহলে এটাকে নির্বাচনের প্রস্তুতি বলা যায় না। সরকার আসলে বুঝতে পারছে না যে গণপরিষদ নির্বাচন না হলে বাংলাদেশের কোনো নির্বাচনই গ্রহণযোগ্য হবে না। জুলাই সনদের বাস্তবায়ন গণপরিষদের মাধ্যমে করতে হবে। সরকারকে অবশ্যই গণপরিষদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া উচিত। সেজন্য যদি অতিরিক্ত কোনো নিরাপত্তা, অতিরিক্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়, সেটির দিকেই এগোনো উচিত, এটিই ভালো হবে।”
জামায়াত ও ছোট ছোট রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আসনভিত্তিক প্রার্থীর নাম ঘোষণা করলেও এনসিপি এই বিষয়ে প্রায় নিশ্চুপ। কোন আসনে কাকে প্রার্থী দেওয়া হবে, সেই কাজও শুরু করেনি দলটি। তবে, সারাদেশ থেকে অনেকেই দলটির কার্যালয়ে যোগাযোগ করছেন। অনেকে দলটির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে দেখা করে তাদের প্রার্থীর প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছেন। ৩০০ আসনে নিজেরাই প্রার্থী দেবে নাকি অন্য কোনো দলের সঙ্গে জোটবদ্ধভাবে নির্বাচনে অংশ নেবে, সেটিও এখনো স্পষ্ট করেনি দলটি। তবে এরই মধ্যে গণমাধ্যমে খবর এসেছে, বিএনপির সঙ্গে আসন বণ্টনের সমঝোতা হয়েছে
প্রচলিত পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে আপনারা অংশ নেবেন কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “গণপরিষদ নির্বাচন না হলে এনসিপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না বরং আন্দোলনে যাবে।”
দলীয় সূত্র মতে, গত দুই মাস আগে জাতীয় নাগরিক পার্টির একটি সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত ছিল, এনসিপি নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনীতি না করে অভ্যুত্থানের যে রাজনীতি সেই রাজনীতিতে ব্যস্ত থাকবে। সেটিই ছিল দলটির মূল কাজ। এরই মধ্যে জুলাই মাসে দেশব্যাপী পদযাত্রা করেছে দলটি। জুলাই মাসজুড়ে পদযাত্রা নিয়ে ব্যস্ত ছিল তারা। পদযাত্রার মাধ্যমে সাংগঠনিকভাবে দলকে পরিচিত ও শক্তিশালী করার লক্ষ্য ছিল বলে মনে করছেন দলটির নেতারা।
তবে, দলটির সার্বিক নির্বাচন কার্যক্রম মূলত জুলাই সনদের ওপর নির্ভর করছে। মৌলিক সংস্কারের ভিত্তিতে জুলাই সনদ করা এবং আইনি ভিত্তি দেওয়া হলে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করছে দলটি। এরই মধ্যে দলটির পক্ষ থেকে ‘গণপরিষদ’ নির্বাচনের ওপর জোর দাবি জানানো হয়েছে।
এদিকে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামকে আহ্বায়ক করে চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি রাজনৈতিক দল এনসিপি প্রতিষ্ঠিত হয়। দল গঠনের ছয় মাস পার হলেও এখনো নিবন্ধন পায়নি তারা। তবে, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)সহ ১৫টি রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রাথমিক বাছাইয়ে টিকেছে। এখন এনসিপি’র মাঠপর্যায়ের তদন্ত চলছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর এ বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য কী কী প্রস্তুতি নিচ্ছে? আপনারা কি ৩০০ আসনে প্রার্থী দিতে পারবেন— এমন প্রশ্নের জবাবে দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব ঢাকা পোস্টকে বলেন, “আমাদের রাজনৈতিক দলের যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য, সেই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সঙ্গে নির্বাচনও অন্যতম একটি অংশ। তবে, প্রাথমিকভাবে আমাদের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে মৌলিক সংস্কারের ভিত্তিতে আমাদের আইনি ও সাংবিধানিক ভিত্তি নিশ্চিত করার জন্য সংগ্রাম করা। সেই জায়গা থেকে এখন পর্যন্ত আমাদের নির্বাচনমুখী কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়নি। দেশের প্রায় প্রত্যেকটি উপজেলায় আমাদের সাংগঠনিক কাজ চলছে। সেখানে সংগঠনকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে শহীদ পরিবার, আহত এবং ওই এলাকার যারা সুশীল সমাজের মানুষ ও সাধারণ মানুষ আছেন, দলের বার্তা নিয়ে তাদের কাছে যাচ্ছেন।”