শিক্ষা
মতামত

সুইডেনের 'শিক্ষা' থেকে আমাদের শেখার আছে

রহমান মৃধা

সুইডেনে দশম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত উচ্চ মাধ্যমিক স্তরকে বলা হয় জিমনেশিয়াম বা হাইস্কুল। হাইস্কুলে লেখাপড়া করা সুইডেনের শিক্ষার্থীদের জন্য বাধ্যতামূলক নয়। তবে শতকরা ৯৮ ভাগ সুইডিশ শিক্ষার্থী প্রাথমিক পর্যায় শেষ করে হাইস্কুলে ভর্তি হয়ে থাকে। এখানে হাইস্কুল স্তরে দুটি শাখা রয়েছে। ১ম শাখাটি কারিগরি শিক্ষার উপর নজর দেয় এবং অন্যটি উচ্চ শিক্ষার উপর। তবে উভয় শাখার শিক্ষার্থীরাই ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করার সুযোগ পায়। কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে একই ধারার বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করে।

আমি কখনও তাদের লেখাপড়া নিয়ে ঘাটাঘাটি করিনি। তবে খেলাধুলার ব্যাপারে বরং বেশি সময় দিয়েছি। তারা জীবনের শুরু থেকে এ পর্যন্ত তেমন কিছু মিস করেছে বলে আমার জানা নেই। এটা আমার ছেলে-মেয়েদের সৌভাগ্য হয়েছে বলে আমি মনে করি। যখন যা প্রয়োজন এবং যখন যা করার সময়, তা করতে পারার মাঝেই কিন্তু রয়েছে আসল আনন্দ।

যদি ফিরে যাই আমার জীবনের শুরুতে, আমাদের ছোটবেলার সময়ের সঙ্গে কিছুটা মিল এখানে আছে। যেমন আমরা স্কুলের পরে খেলাধুলা করেছি, দুষ্টুমি করেছি, নদীতে গিয়ে সাঁতার কেটেছি।

তবে বাংলাদেশে বর্তমান শিশু শিক্ষার ধরণ যা শুনেছি বা দেখেছি সেটা বেশ আলাদা। যেমন পিঠে উটের মতো করে বইয়ের বোঝা তুলে দেয়া। স্কুল থেকে ফিরে বন্ধ ঘরে গৃহশিক্ষকের কাছে দীর্ঘসময় পড়াশোনায় মনোযোগ দেয়া। তারপর বাবা মার কাছে পড়া, পড়া আর পড়া।

এখানে একটি বিষয় এড়িয়ে গেলে চলবে না, আর তা হলো যারা world class খেলোয়াড় হতে চায় তাদের activities সাধারণ শিক্ষার্থীদের থেকে ভিন্ন। কারণ এলিট স্পোর্টসে দরকার প্রচুর মোটিভেশন, ডেডিকেশন, সাফার এবং অফার। যেহেতু কথায় রয়েছে Winner takes it all so one must work harder than others. এ ক্ষেত্রে এলিট ক্রীড়াবিদদের জীবনের কিছু মজার সময় তারা মিস করে বিশ্ব সেরা খেলোয়াড় হওয়ার জন্য। ঠিক তেমনিভাবে যদি কেও এলিট শিক্ষার জন্য পুরো সময় ইনভেস্ট করতে চায়, যেমন শুধু ডাক্তার বা প্রকৌশলী হওয়ার কারনে জীবনের দুই তৃতীয়াংশ সময় ব্যয় করে, তখন দেখা যায় তারা শৈশব এবং কৈশোরের অনেক কিছু মিস করেছে, যা পরে হাজার চেষ্টা করলেও সেটা পূরণ করা সম্ভব হয় না। এ ধরনের চ্যালেঞ্জের মোকাবেলায় দরকার সুন্দর পরিকাঠামোর। সে ক্ষেত্রে শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণের পুরো সময়ের ওপর সুন্দর ব্যবস্থাপনা থাকতে হবে। কারণ মানব জীবনের শৈশব, কৈশোর, যৌবন একবারই আসে বারবার নয়, এ বিষয়টি ভুলে গেলে চলবে না। একদিন শিশুর শৈশব, কৈশোর শেষ হয়ে যাবে, জীবনের অনেক কাজ অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। শিক্ষা জীবন শেষে কর্মজীবন শুরু হবে। তখন টাকা পয়সা, গাড়ি, বাড়ি সবই হবে তবে জীবনের পরিপূর্ণতা হয়ত আসবে না।

ভাবার ব্যাপার হলো পুরো প্রাইমারী এবং হাইস্কুলের সময়টি শিশুরা ডাইনিং হলে শিক্ষকদের সঙ্গে লাঞ্চ সহ কোয়লিটি সময় কাটায়। স্কুলের এই ফ্রি লাঞ্চ একসঙ্গে উপভোগ করার সুযোগ বিশ্বের কয়েকটি দেশে রয়েছে। অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা যুক্তরাজ্যের মতো অনেকদেশ রয়েছে, যারা ভিয়েতনাম বা আফগানিস্তানের নিরীহ মানুষ হত্যার জন্য কোটি কোটি টাকা খরচ করে চলছে যেখানে সেই অর্থে তাদের শিশুদের জন্য বিনামূল্যে স্কুলের খাবার দিতে পারত! যাইহোক বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার ক্ষেত্রে এদেশে স্নাতক, স্নাতকোত্তর এবং ডক্টরাল লেভেল রয়েছে। সকল ক্ষেত্রেই লেখাপড়ার জন্য এদেশে বিশ্ববিদ্যালয় বা ইউনিভার্সিটেট এবং বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ এই দুটি শাখা রয়েছে। ডক্টরাল ডিগ্রি অর্জনের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি রিসার্চ ওরিয়েন্টেড বিশ্ববিদ্যালয় কলেজও রয়েছে এদেশে। সুইডেনে ৩ বছরের স্নাতক, ১ বা ২ বছরের স্নাতকোত্তর এবং ২-৪ বছরের ডক্টরাল ডিগ্রি অর্জনের সুযোগ রয়েছে।

বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে শিক্ষার্থীরা সুইডেনের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসে। শিক্ষা ও গবেষণা খাতে সুইডিস সরকারের বিশেষ দৃষ্টি ও অর্থায়ন উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে সুইডেনকে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ আকর্ষণ হিসেবে গড়ে তুলেছে। বিশেষত ডক্টরাল পর্যায়ের গবেষণার জন্য সুইডিস বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আলাদা সুনাম রয়েছে।

ইউরোপের শিক্ষায় রয়েছে সুশিক্ষা, সুচিন্তা, সুভাবনা। যেখানে কোন কিছুই বাদ দেয়া হয়না। সব কিছুই রয়েছে এখানকার শিক্ষা ব্যবস্থায়। আমি আমার অভিজ্ঞতা থেকে এতটুকু বলতে চাই সেটা হলো ইউরোপের শিক্ষা পদ্ধতি সুস্থ এবং সমৃদ্ধ জীবন গড়ার এক চাবিকাঠি। সুইডেনের সাথে বাংলাদেশের আর্থিক কাঠামোর ভিন্নতা থাকার সত্ত্বেও শিক্ষা কাঠামো, কারিকুলাম ও সিলেবাস প্রণয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সুইডিশ মডেল অনুসরণ করতে পারে। বাংলাদেশ ও সুইডিশ সরকারের পারস্পারিক সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে বাংলাদেশের শিক্ষা ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন সম্ভব। -Well and all round education is the global passport to the future, for tomorrow belongs to those who prepare for it today.

লেখক: সাবেক পরিচালক (প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট), ফাইজার, সুইডেন [email protected]

সূত্রঃ বিডি জার্নাল

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনে স্বতন্ত্রসহ চারজনের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ

মুন্সীগঞ্জে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থীসহ চারজন প্রা...

মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের ১১০ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন

মফস্বল ও প্রান্তিক পর্যায়ে কর্মরত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, হামলা, হ...

নাসার চাঁদে অভিযানের দায়িত্বে স্পেসএক্স না ব্লু অরিজিন?

পরবর্তী চাঁদ অভিযান কর্মসূচিতে কোন প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করা হবে নাসার নতুন প্রশ...

নোয়াখালীতে বিএনপির কার্যালয়ে আ. লীগের হামলা, আহত ৪

নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়াতে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিএনপির কার্যাল...

বাজারে কৃত্রিম সার সংকট সৃষ্টির অপরাধে ব্যবসায়ীকে জরিমানা

বাজারে কৃত্রিম সার সংকট সৃষ্টির অপরাধে কুষ্টিয়ার মিরপুরে এক ব্যবসায়ীকে জরিমান...

গুলিবিদ্ধ এনসিপি নেতা: কুষ্টিয়া সীমান্ত সিল, চেকপোস্ট ও টহল জোরদার

খুলনায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শ্রমিক সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতা মো. মোতাল...

গজারিয়াতে হোটেলে অনৈতিক কার্যক্রমের অভিযোগে নারীসহ তিনজন আটক

মুন্সীগঞ্জের গজারিয়াতে একটি আবাসিক হোটেলে অনৈতিক কার্যক্রমের অভিযোগে ২ নারীসহ...

ঢাকা-১০ আসনের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করলেন আসিফ মাহমুদ

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১০ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন ফর...

মুন্সীগঞ্জে খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনা: শীতবস্ত্র বিতরণ

বিএনপির চেয়ারপার্সন, সাবেক তিন বারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্ত...

খালাস চেয়ে রাজসাক্ষী সাবেক আইজিপি মামুনের আপিল

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন জুলাই গণ-অভ্যুত্...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা