সিন্ধু নদীর গিলগিট বালটিস্তানের অংশ
আন্তর্জাতিক
পাকিস্তানের নতুন বাঁধ

লাদাখ ও কাশ্মীর ভেসে যাওয়ার আশঙ্কা

ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক:

পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরের গিলগিট বালটিস্তানে ইসলামাবাদ সরকার একটি মেগা জলবিদ্যুৎ ও জলাধার প্রকল্পের উদ্বোধন করার পর ভারত তাতে তীব্র আপত্তি জানিয়েছে।

পাকিস্তান বলছে সেদেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য এই দিয়ামির-ভাশা বাঁধ অপরিহার্য, কিন্তু সিন্ধু নদীর ওপর নির্মীয়মান ওই বাঁধটির কারণে কাশ্মীর ও লাদাখের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হতে পারে বলে ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ করেছে।

বিশেষজ্ঞরাও অনেকে মনে করছেন, চীনের অর্থায়নে পাকিস্তান এই প্রকল্প নিয়ে অগ্রসর হলে ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে ৭০ বছরের পুরনো 'সিন্ধু জলচুক্তি' থেকেও সরে আসতে পারে।

বস্তুত গিলগিট বালটিস্তানে সিন্ধু নদীর ওপর দিয়ামির-ভাশা বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা বহু বছরের পুরনো হলেও পাকিস্তান সরকার এতদিন তার বাস্তবায়ন নিয়ে এগোতে পারেনি।

অবশেষে গত মে মাসে চীনের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার সঙ্গে এই বাঁধ নির্মাণে ২৬৪ কোটি ডলারের চুক্তি করে ইসলামাবাদ, আর তারপর গত বুধবার গিলগিট বালটিস্তানের চিলাস শহরে গিয়ে এই প্রকল্পের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বাঁধের উদ্বোধন করছেন

সেখানে এক জনসভায় ভাষণ দিতে গিয়ে ইমরান খান বলেন, "দিয়ামির-ভাশা বাঁধ হবে পাকিস্তানের তৃতীয় বৃহত্তম। চীনে যেখানে পাঁচ হাজার বড় বাঁধ আছে, সেখানে এইটা নিয়ে আমাদের হবে মাত্র তিনটে।"

"এতদিন আমরা বিদেশ থেকে তেল এনে তা দিয়ে দামী বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছি – কিন্তু এখন আমরা নিজেদের সম্পদ দিয়েই বিদ্যুৎ তৈরি করব। এটা খুবই আক্ষেপের যে ৪০ বছর আগে সিদ্ধান্ত হলেও আজ পর্যন্ত আমরা দিয়ামির-ভাশা ড্যামের নির্মাণ শুরু করতে পারিনি!"

পাকিস্তানের এই ঘোষণার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই এই প্রকল্প নিয়ে নতুন করে প্রতিবাদ জানায় ভারত।

দিল্লির প্রতিবাদের ভিত্তি ছিল দুটো – এক, তারা গিলগিট বালটিস্তানকে ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ বলে মনে করে আর দুই, এই বাঁধের কারণে কাশ্মীর ও লাদাখ ভেসে যেতে পারে বলে ভারতের আশঙ্কা।

দিল্লিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অনুরাগ শ্রীবাস্তব বলেন, "আমরা পাকিস্তান সরকারের কাছে এই নির্মাণের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছি। এই ড্যামের কারণে ভারতের জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখ ভূখন্ডের বিস্তীর্ণ এলাকা পানির নিচে চলে যাবে। তা ছাড়া ভারতের যে সব এলাকা পাকিস্তান অবৈধভাবে অধিকার করে রেখেছে, সেখানে তাদের এই ধরনের কোনও প্রকল্প তৈরিরই এক্তিয়ার নেই।"

সিন্ধু নদীর ক্ষেত্রে ভারত হল উজানের দেশ, আর গিলগিট বালটিস্তান ভাঁটিতে। সে ক্ষেত্রে ভাঁটিতে তৈরি একটি বাঁধ উজানে কতটা বিপদের কারণ হতে পারে, এ ব্যাপারে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে সেন্টার ফর হিমালয়ান স্টাডিজের অধ্যাপক ও ভূতত্ত্ববিদ মৈত্রেয়ী চৌধুরী বলেন, "টোপোগ্রাফির কারণে এখানে ভারতের দিকটা যদি তুলনামূলকভাবে নিচু হয়, আর অন্য দিকটার এলিভেশন বেশি হয় – তাহলে কিন্তু জলাধারের পানি উপচে নিচু দিকে চলে আসার সম্ভাবনা থাকেই!"

ভারতে উত্তরাখন্ডের গাড়োয়ালে তেহরি বাঁধ নির্মাণের সময়ও ঠিক একই জিনিস ঘটেছিল বলে জানান তিনি।

"তেহরিতে বাঁধ নির্মাণের ফলে যেটা হয়েছে – বাঁধটা ওখানে অনেক ভাঁটিতে হওয়া সত্ত্বেও নিচু ভ্যালিগুলো কিন্তু অনেকটাই পানিতে তলিয়ে গেছে। এটা টোপোগ্রাফির কারণেই হয় – যে উপত্যকা বা ভ্যালিগুলো তুলনায় নিচু কিংবা যেখানে বেসিন মতো কিছু আছে সেটা পানির নিচে তলিয়ে যেতেই পারে।"

তবে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে এই বিরোধ কূটনৈতিক পথে না-মিটলে ভারত ৭০ বছরের পুরনো সিন্ধু জলচুক্তি থেকে বেরিয়েও আসতে পারে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন। এই হুমকি দিল্লি আগেও একাধিকবার দিয়েছে।

বিশ্ব ব্যাংকের মধ্যস্থতায় করা ওই চুক্তি অনুসারে সিন্ধু অববাহিকায় সিন্ধু, চেনাব ও ঝিলমের পানির ওপর মূল অধিকার পাকিস্তানের – আর বিয়াস, রাভি ও শতদ্রুর ওপর অধিকার ভারতের।

মৈত্রেয়ী চৌধুরীর কথায়, "দেখুন ১৯৬০ সালে সই হওয়া এই সিন্ধুর পানি ভাগাভাগি চুক্তিকে বেশ ভাল চুক্তিই বলতে হবে – কারণ এটা বেশ সফল, এবং এই চুক্তি নিয়ে তেমন বড় কোন বিতর্কও কখনও হয়নি। চুক্তিতে যে নদীগুলো পাকিস্তানের দিকে পড়েছে ওরা তো সেগুলোর সুবিধা নেবেই, ওই নদীগুলোর ওপর পাকিস্তান কিছু বানালে ভারত খুব কিছু সুবিধা করতে পারবে না – যদি না তাতে বিরাট কোনও পরিবেশগত ক্ষতি হয়! তবে আন্ত:সীমান্ত নদীগুলোর ওপর একটা দেশ কতদূর কী তৈরি করতে পারে, তার কিছু বিধিনিষেধ সব সময়ই থাকে। আমি নিশ্চিত দিয়ামার-ভাশা বাঁধের ক্ষেত্রেও বিশ্ব ব্যাংক বা অন্য তৃতীয় পক্ষগুলো এর সম্ভাব্য ক্ষতির মাত্রা মূল্যায়ণ করবে, কিংবা হয়তো ইতিমধ্যেই করছে", বলছিলেন ড: চৌধুরী। ফলে চুক্তি অনুসারে সিন্ধুর ওপর বাঁধ নির্মাণের অধিকার পাকিস্তানের অবশ্যই আছে।

কিন্তু দিয়ামির-ভাশা প্রকল্প সিন্ধু অববাহিকায় বন্যা ডেকে আনবে ও পরিবেশের অপূরণীয় ক্ষতি করবে, এই যুক্তি দেখিয়েই ভারত সেটি বানচাল করার চেষ্টা চালাচ্ছে।

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফেরাতে ৯ম দিনের আপিল শুনানি চলছে

নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফেরানোর জন্য শুরু হওয়া আপি...

নদীর পাড়ে চলছে মাটিখেকোদের দৌরাত্ম্য, ভাঙন আতঙ্কে গ্রামবাসী

মাদারীপুরের প্রধান দুটি নদী—আড়িয়াল খাঁ ও কুমার নদীর পাড়ের মাটি কেটে নিচ...

জোহরান মামদানির জয়ে ট্রাম্পের হুশিয়ারি

নব-নির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানি যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক সিটির মেয়র নির্ব...

খালেদা জিয়ার সিদ্ধান্তে মনোনয়ন পেলেন সিলেটের আরিফুল

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সিলেটের বহুল আলোচিত বিএনপি নেতা ও সাবেক মেয়র আর...

লিবিয়ায় বাংলাদেশী যুবক অপহরণ, ২০ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ আদায় করা চক্রের সদস্য গ্রেপ্তার

লিবিয়ায় অপহরণ করে বাংলাদেশী প্রবাসীর কাছ থেকে ২০ লক্ষ টাকা আদায়ের অপরাধে মানব...

২৪ ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগের আলটিমেটাম বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরকে

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরকে আগামী ২...

বিএনপি ভেসে আসা দল নয়, বিএনপিকে খাটো করে দেখবেন না

বিএনপিকে খাটো করে দেখবেন না, উপদেষ্টা পরিষদ পক্ষপা...

গুম প্রতিরোধ আইনে চূড়ান্ত অনুমোদন, সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড

গুম প্রতিরোধ অধ্যাদেশে চূড়ান্ত অনুমোদন, সর্বোচ্চ স...

সৌদি আরবে ১৭ হাজার নারী শিক্ষকে দেয়া হবে সংগীত প্রশিক্ষণ

সৌদি আরব সরকার বিদ্যালয় পর্যায়ে সংগীত শিক্ষা চালুর বড় পদক্ষেপ নিয়েছে। দেশের শ...

‘ঘি আমাদের লাগবেই, সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে বাঁকা করব’ — নো হাংকি পাংকি

জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে গণভোটের দাবিতে সরকারকে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছে জামা...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা