নিজস্ব প্রতিবেদক : সরকার দেশে গণটিকা কর্মসূচি শুরু করলেও নিম্নবিত্ত, স্বল্পশিক্ষিত, সুবিধাবঞ্চিত ও দরিদ্র শ্রেণির মানুষ করোনার ভ্যাকসিন নেয়ার ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছেন।
বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের টিকা নেয়ার ক্ষেত্রে মানুষের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। তবে বেশিরভাগ কেন্দ্রগুলোয় যারা টিকা নিতে আসছেন তাদের অধিকাংশই মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত, শিক্ষিত শ্রেণির। কোন কেন্দ্রেই স্বল্প শিক্ষিত, সুবিধা বঞ্চিত, পিছিয়ে দরিদ্র শ্রেণির দেখা পাওয়া যায়নি।
বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে বলেছেন, বাংলাদেশে এই কেন্দ্রেই স্বল্পশিক্ষিত, সুবিধাবঞ্চিত, পিছিয়ে দরিদ্র শ্রেণির মানুষদের সংখ্যাই অনেক বেশি। তাই তাদেরকে টিকা কর্মসূচির আওতায় আনা না গেলে এর সুফল পাওয়া যাবে না।
পিছিয়ে পড়া এই বিশাল জনগোষ্ঠীর করোনা টিকা নেয়ার ক্ষেত্রে টিকাদান প্রক্রিয়ার জটিলতা ও প্রযুক্তি নির্ভরতাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। কিভাবে টিকা নেবেন, কোথায় যাবেন, টিকা দিতে যে নিবন্ধনের প্রয়োজন হয় সেটা কিভাবে করবেন সে সংক্রান্ত কোন ধারণাই নেই এই শ্রেণির মানুষের মধ্যে। তাদের বেশিরভাগেরই নেই কোন স্মার্টফোন। পড়াশোনা না থাকায় অন্যের মোবাইল থেকেও নিবন্ধন করতে পারছেন না।
বাংলাদেশে গত জানুয়ারি মাসে কোভিড-১৯ এর টিকা আসার পর মানুষের মনে টিকার কার্যকারিতা ও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নিয়ে নানা সন্দেহ ছিল। তবে ৭ই ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী টিকা কর্মসূচি শুরুর দিন দেশের শীর্ষ রাজনীতিকরা টিকা দেয়ায় মানুষের মনে অনেকটাই আস্থা ফিরতে থাকে। গত দুই সপ্তাহে সাড়ে ১৮ লাখ মানুষ টিকা দিয়েছে এবং এ পর্যন্ত ৩১ লাখ ৩৭ হাজার মানুষ টিকার জন্য নিবন্ধন করেছে বলে স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে।
কিন্তু কেন্দ্রগুলোয় যারা ভিড় করছেন তাদের একটি বড় অংশই শিক্ষিত মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত শ্রেণির। স্বল্পশিক্ষিত, সুবিধাবঞ্চিত দরিদ্র শ্রেণির কাউকেই তেমন দেখা যায়নি। এই শ্রেণিকে মানুষদের টিকা সূচির আওতায় আনা একা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষে সম্ভব না।
এজন্য বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও স্বেচ্ছাসেবকদের এগিয়ে আসতে হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিমা সুলতানা। তিনি বলেন, ‘টিকা দিতে আমরা কোন শ্রেণি বৈষম্য তৈরি করছি না। তবে একটাই বিষয় যে টিকা দিতে হলে নিবন্ধন করতেই হবে। সেক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর নিবন্ধনে সহায়তা করতে স্বেচ্ছাসেবক, দাতাসংস্থাগুলোর কর্মী, জন প্রতিনিধি এগিয়ে আসতে পারে। এক স্বাস্থ্যবিভাগের পক্ষে তো সব সম্ভব না।’
প্রান্তিক মানুষ এই টিকাদান কর্মসূচির আওতায় না আসে তাহলে এর সফলতা পাওয়া যাবে না বলে জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মোস্তাক আহমেদ। তিনি বলেন, আমাদের দেশে নিম্নআয়ের মানুষের সংখ্যাই বেশি, আমরা যদি দেশের ভাসমান মানুষদের, দুর্গম চরাঞ্চল, পাহাড়ি অঞ্চলের মানুষদের টিকা কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত করতে না পারি, তাহলে আমাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না।
এক্ষেত্রে কিছু পরামর্শ দিয়ে মোস্তাক আহমেদ বলেন, মানুষ যেন ঘরের কাছেই টিকা দিতে পারে সেই ব্যবস্থা করতে হবে। এজন্য প্রতিটি শহর এবং গ্রামের ওয়ার্ড কাউন্সিলে একটা করে নিবন্ধন বুথ খোলার প্রয়োজন। যেখানে স্বেচ্ছাসেবকরা নিবন্ধন করতে সাধারণ মানুষকে সাহায্য করতে পারে।
তিনি আরও বলেন, টিকার ব্যাপারে ভ্রান্ত ধারণা দূর করতে এবং মানুষকে আগ্রহী করে তুলতে সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন। এজন্য বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করে, মসজিদের মাধ্যমে, জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে প্রচারণা চালাতে হবে যেন তৃণমূল পর্যায়ের প্রতিটি মানুষ টিকা কর্মসূচির আওতায় আসতে পারে।
সান নিউজ/এসএ