অপরাধ

যে কারণে জেকেজিকে কাজ দেন সাবেক ডিজি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

'স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক ডিজি আবুল কালাম আজাদ অবৈধ সুবিধা পাওয়ার শর্তে জেকেজি হেলথ কেয়ারকে কাজ পাওয়া থেকে শুরু করে প্রতিটি বিষয়ে সহায়তা দিয়েছেন।

জেকেজি হেলথ কেয়ার ছিল একটি নামস্বর্বস্ব প্রতিষ্ঠান। জেকেজি হেলথ কেয়ার সিটি করপোরেশন থেকে ট্রেড লাইসেন্স (নম্বর-১৬২১৯১) নিয়েছিলো চলতি বছরের ১৬ জুন। অথচ এর দুই মাস আগে থেকেই অর্থাৎ ১৬ এপ্রিলে স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে অনুমতি নিয়ে ঢাকাসহ নারায়ণগঞ্জ এলাকায় আটটি বুথ স্থাপন করে করোনা উপসর্গ রোগীদের নমুনা সংগ্রহ শুরু করে। যা স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক ডিজি আবুল কালাম আজাদের চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয় প্রকাশ করে।'

করোনাভাইরাস পরীক্ষা নিয়ে জাল-জালিয়াতি ও প্রতারণার অভিযোগে দায়ের করা মামলার তদন্ত শেষে আদালতে দেওয়া অভিযোগপত্রে এসব তথ্য উল্লেখ করেছে তদন্ত সংস্থা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ-ডিবি। বুধবার (৫ আগস্ট) জেকেজি হেলথ কেয়ারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুল হক চৌধুরী ও ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরীসহ আট জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। আদালত সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

আদালত সূত্র জানায়, অভিযোগপত্রে মামলার তদন্ত সংস্থা উল্লেখ করেছে, জেকেজির জাল-জালিয়াতি ও প্রতারণার বিষয়টি সরেজমিন তদন্ত করতে তারা স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাখালী অফিসে গিয়ে এডিজি প্রশাসনকে (ডা. নাসিমা সুলাতানা) জিজ্ঞাসাবাদ করেন।

তবে ডা. নাসিমা সুলতানা তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে মৌখিক ও লিখিতভাবে জানান, জেকেজি হেলথ কেয়ার সংক্রান্ত সব কাগজ সাবেক ডিজি আবুল কালাম আজাদের নির্দেশে তিনি স্বাক্ষর করেছেন।

তদন্ত সংস্থা ডিবির দেওয়া অভিযোগপত্রে বলা হয়, মামলার তদন্তকালে তথ্য পাওয়া যায়, সাবেক ডিজি আবুল কালাম আজাদ অবৈধ ও বেআইনিভাবে নাম স্বর্বস্ব প্রতিষ্ঠান জেকেজিকে করোনার মতো একটি স্পর্শকাতর বিষয়ে (চিকিৎসা বিষয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও) নমুনা সংগ্রহের কাজ দেন। জেকেজি কোনোভাবেই করোনার নমুনা সংগ্রহ বাবদ টাকা গ্রহণ ও নমুনাদাতাদেরর রিপোর্ট ও সার্টিফিকেট দিতে পারবে না শর্ত ছিল। তবে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে তারা প্রতারণা ও জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ-আত্মসাৎ করেছে। এমনকি জেকেজির জাল-জালিয়াতি ও প্রতারণার বিষয়টি স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক ডিজি জানার পরও, প্রয়োজনীয় কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ নেননি।

মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার গোলাম মোস্তফা রাসেল গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা তদন্তে যা পেয়েছি তাই অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেছি। জেকেজি কীভাবে জাল-জালিয়াতি ও প্রতারণা করে আসছিলো এবং এসব ক্ষেত্রে কার কী দায় ছিল তার ভিত্তিতেই অভিযোগপত্র বা চার্জশিট তৈরি করা হয়েছে।’

জেকেজির বিরুদ্ধে দেওয়া অভিযোগপত্রে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক ডিজি আবুল কালাম আজাদের অবৈধ কর্মকাণ্ডের কথা উল্লেখ করা হলেও তাকে সরাসরি অভিযুক্ত করা হয়নি।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্বাস্থ্য অধিফতর থেকে করোনার নমুনা সংগ্রহের অনুমতি ও কর্মকাণ্ড পরিচালনা বাবদ দুই কোটি টাকা খরচ করেছিলেন জেকেজির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুল হক চৌধুরী। স্বাস্থ্যের ডিজির সঙ্গে ‘রফা’ করে খরচের বিপরীতে সরকারি কোষাগার থেকে কয়েকগুণ বেশি অর্থ আদায় করার পরিকল্পনা ছিল তাদের। এই অর্থেরও বড় একটি অংশ ভাগ পেতেন সাবেক ডিজি আবুল কালাম আজাদ, যিনি জেকেজি ও রিজেন্টে কেলেঙ্কারিসহ নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা নিয়ে সমালোচনার মুখে চলতি বছরের ২১ জুলাই স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) পদ থেকে পদত্যাগ করেন। ২৩ জুলাই সরকারের জনপ্রশাসন বিভাগ তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে।

অতিরিক্ত সচিব হিসেবে অবসরে যাওয়া আবুল কালাম আজাদ চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ডিজির দায়িত্ব পালন করছিলেন।

আইনজ্ঞরা বলছেন, জেকেজির মামলার তদন্তে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক ডিজির বিষয়ে যে তথ্য উঠে এসেছে, তার বিরুদ্ধেও তদন্ত হওয়া উচিত। যেহেতু তিনি সরকারি কর্মচারী থাকা অবস্থায় অবৈধ সুবিধা প্রাপ্ত হয়ে জালিয়াতি ও প্রতারণার সুযোগ করে দিয়েছেন, এখন উচিত হবে দুর্নীতি-দমন কমিশনের অনুসন্ধান শুরু করা। এছাড়া স্বাস্থ্য অধিদফতরের ঘুষ-দুর্নীতিতো এখন মানুষের মুখে মুখে। কেন তাকে তদন্তের মুখোমুখি দাঁড় করানো হচ্ছে না, তা এখনও রহস্যের বিষয়।

প্রসঙ্গত, করোনা পরীক্ষা নিয়ে জাল-জালিয়াতি ও প্রতারণার অভিযোগে গত ২৩ জুন জেকেজি হেলথ কেয়ারের সিইও আরিফসহ পাঁচ জনকে গ্রেফতার করে তেজগাঁও থানা পুলিশ। এই ঘটনায় কামাল নামে এক ব্যক্তি তেজগাঁও থানায় প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করে।

মামলার তদন্তে জেকেজির চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনার নাম এলে গত ১২ জুলাই তাকেও গ্রেফতার করে পুলিশ। মামলাটি প্রথমে থানা পুলিশ তদন্ত করলেও পরে তা গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। প্রায় দেড় মাসের তদন্ত শেষে বুধবার পুলিশ আট জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। অভিযুক্তরা হলো- আরিফুল হক চৌধুরী, সাবরিনা আরিফ চৌধুরী, আবু সাঈদ চৌধুরী, হুমায়ুন কবির হিমু, তানজিলা পাটোয়ারী, শফিকুল ইসলাম রোমিও, জেবুন্নেছা রিমা ও বিপ্লব দাস ওরফে বিপুল।

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের ১১০ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন

মফস্বল ও প্রান্তিক পর্যায়ে কর্মরত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, হামলা, হ...

মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনে স্বতন্ত্রসহ চারজনের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ

মুন্সীগঞ্জে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থীসহ চারজন প্রা...

নাসার চাঁদে অভিযানের দায়িত্বে স্পেসএক্স না ব্লু অরিজিন?

পরবর্তী চাঁদ অভিযান কর্মসূচিতে কোন প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করা হবে নাসার নতুন প্রশ...

নোয়াখালীতে বিএনপির কার্যালয়ে আ. লীগের হামলা, আহত ৪

নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়াতে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিএনপির কার্যাল...

বাজারে কৃত্রিম সার সংকট সৃষ্টির অপরাধে ব্যবসায়ীকে জরিমানা

বাজারে কৃত্রিম সার সংকট সৃষ্টির অপরাধে কুষ্টিয়ার মিরপুরে এক ব্যবসায়ীকে জরিমান...

আলফাডাঙ্গা কলেজে পরীক্ষা চলাকালে অস্ত্র হাতে মহড়া, গ্রেপ্তার যুবক

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা আদর্শ কলেজে স্নাতক সম্মান (ডিগ্রি) পরীক্ষা চলাকালে দেশীয়...

মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনে স্বতন্ত্রসহ চারজনের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ

মুন্সীগঞ্জে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থীসহ চারজন প্রা...

চাকসুর উদ্যোগে ইসলামী ব্যাংক–চবি’র কর্পোরেট চুক্তি

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে একটি কর্পোরেট...

সাড়ে ৩ ঘণ্টা পর ঝালকাঠিতে সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার

ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার সন্তান সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সংগঠন ‘ইনকিলাব ম...

বাজারে কৃত্রিম সার সংকট সৃষ্টির অপরাধে ব্যবসায়ীকে জরিমানা

বাজারে কৃত্রিম সার সংকট সৃষ্টির অপরাধে কুষ্টিয়ার মিরপুরে এক ব্যবসায়ীকে জরিমান...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা