জেলা প্রতিনিধি, মুন্সীগঞ্জ: মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের কলমা গ্রাম হতে পালিয়ে বিয়ের ২৬ দিনের মাথায় নববধূর মৃত্যূ নিয়ে ধূম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। মৃত্যূর পর পরেই স্বামীর গৃহের সকল লোক পালিয়ে যাওয়ায় এটা হত্যা না আত্মহত্যা এ নিয়ে চলছে জল্পনা কল্পনা।
আরও পড়ুন: প্রবাসীর স্ত্রীর মরদেহ উদ্ধার
ময়নাতদন্ত শেষে আজ রোববার (২৭ আগস্ট) বিকেলে আনুমানিক সাড়ে ৫টার দিকে উত্তর কলমা সামাজিক কবরস্থানে নিহত ছোঁয়ামনিকে দাফন করা হয়েছে। এর আগে শুক্রবার বিকেলে ফ্যানের সাথে রশি দিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
নিহতের পারিবারিক সুত্রে জানা গেছে, গত ১ আগস্ট কলেজে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি হতে বের হয়ে প্রেমিক মুন্না শেখের হাত ধরে পালিয়ে যায় ছোঁয়ামনি। পালিয়ে যাওয়ার ৬ দিন পরে এলাকায় ফিরে একই গ্রামের মধ্য কলমা এলাকার স্বামী মুন্না শেখের ভাড়াটিয়া বাড়িতে এসে বসবাস শুরু করে সে। কিন্তু মুন্না শেখ কোন কাজ না করায় শুরু হয় সংসারে অশান্তি।
এদিকে, প্রথমে মেয়ের পক্ষ মেয়ে জামাইকে মেনে না নিলেও এলাকাবাসীর অনুরোধে দু’পক্ষের মধ্যে একটি আপস মিমাংসার চেষ্টা চলছিল। কিন্তু মুন্নার বাবা মনির হোসেন আপসে বসার পূর্বেই সালিশগণকে বলে আসছিলো। মুন্না বেকার ওকে বাড়িতে মেয়ের বাবাকে ঘর তুলে দিতে বলেন এবং মুন্নার কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও শ্বশুরকে করে দিতে বলে আসছিলো মুন্নার বাবা মনির। এ নিয়ে শুরু হয় দুই পরিবারে টানাপোড়েন।
আরও পড়ুন: পাহাড়ে মিলল পর্যটকের মরদেহ
পরে শনিবার (২৬ আগস্ট) উপজেলার মধ্য কলমা গ্রামের স্বামীগৃহ হতে বিকেলে গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় সন্ধ্যায় জান্নাতুল ফেরদৌস ছোঁয়ামনি (১৮) নামের ওই তরুণী নববধূর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
নিহত ছোঁয়ামনি উত্তর কলমা গ্রামের ডংকুর কান্দি এলাকার রতন খানের মেয়ে। গৃহবধূকে হত্যা করে টাঙ্গিয়ে রাখা হয়েছে বলে নিহতের পরিবারের অভিযোগ।
নিহতের বাবা রতন খান বলেন, আমার মেয়েটা কলেজে পড়তো, ওরে ওরা নিয়া গেছে। ওরা নিয়া খুন করে ফেলেছে আমি বিচার চাই। মুন্না নামের ছেলেটা ওর বাপ হইলো মনির। ওরা মিইলা আমার মেয়েরে মাইরা ফেলছে আমি ওদের ফাঁসি চাই।
আরও পড়ুন: পুলিশ জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হয়েছে
নিহতের বড় ভাই মারুফ খান জানান, চলতি মাসের ১ তারিখে আমার বোন কলেজে যাওয়ার জন্য বাড়ি হতে বের হয়। পরে আমরা জানতে পারি ওই ছেলে ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে ওকে ওর বোনের বাড়িতে নিয়ে যায়। পরে ওর বোন ওর বোন জামাই জোর করে আমার বোনের বিয়ে পড়ায়।
বিয়ের ব্যাপারটি আমার বাবাকে যখন ও ফোন করে বলছে আমার বাবা জিদ্দে রাগে ক্ষোভে ওর সাথে আর কথাই বলে নাই এমনকি আমার আম্মুও কথা বলে নাই। তবে আমার ওয়াইফ আমার দাদি আমার ছোটভাই প্রতিদিন নিয়মিত আমার বোনের সাথে কথা বলতো।
গত সপ্তাহে লোকমুখে জানতে পারি শ্বশুরবাড়িতে ছোঁয়ামনিকে নির্যাতন করা হচ্ছে। পরে আমাদের এ বিষয় নিয়ে সমঝোতা করার জন্য গেছিলাম। কিন্তু ওরা সমঝোতা করে নাই। ওই ছেলের বাবা বিভিন্ন মানুষকে বলছে, আমার ছেলে বেকার, থাকার মতো ঘর নাই মেয়ের বাবাকে ঘর তুলে দিতে বলেন, একটা চাকুরি দিয়ে দিতে বলেন নাহয় বিদেশে পাঠাইয়া দিতে বলেন, এমন প্রস্তাব আমাদের দিতেছিলো।
আরও পড়ুন: মাদারীপুর আদালত প্রাঙ্গনে বিচারপতির বৃক্ষরোপণ
এর মধ্যে ২৬ আগস্ট দুপুরে আমরা খবর পাই আমার বোন গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। পরে আমরা ওই বাড়িতে গিয়ে দেখি ওই বাড়িতে কেউ নাই। আমার বোন ফ্যানের সিলিংয়ের সাথে ঝুলছে।
ছেলের পাশের বাড়ির বাসিন্দা সম্পা বেগম বলেন, গতকাল সকাল ১০ টায় আমার ঘরের ফ্রিজ থেকে মাছ নিতে এসেছিলো ছোঁয়ামনি। দুপুরে কি ঘটছিল আমাদের জানা নেই। তিনি জানান, ছেলেটা বেকার বাবা ফেরি করে সিলভারের হাঁড়ি পাতিল বিক্রি করে।
লৌহজং থানার (ওসি) খোন্দকার ইমাম হোসেন বলেন, এ ঘটনায় নিহতের বাবা বাদী হয়ে লৌহজং থানায় আত্মহত্যায় প্ররোচনা মামলা দায়ের করেছে। মামলায় ৩ জনকে এজাহার নামীয় আসামি সহ অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। লাশ ময়নাতদন্ত শেষে স্বজনদের কাছ হস্তান্তর করা হয়েছে।
সান নিউজ/এইচএন