কামরুল সিকদার, বোয়ালমারী (ফরিদপুর) : ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে ১১ বছর বয়সী দুই শিশুকে চুরির অভিযোগে অমানুষিক নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এক ইউপি মেম্বারের চালকলের উত্তপ্ত চাতালে ওই দুই শিশুকে শুইয়ে পায়ে লোহার শিকল বেঁধে এই নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে মেম্বারের ভাইয়ের বিরুদ্ধে।
আরও পড়ুন : সম্পর্ক বৃদ্ধি করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র
জানা গেছে, উপজেলার গুনবহা ইউনিয়নের চাপলডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা এবং ওই ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড মেম্বার নাজমুল শেখের বড় ভাই নজরুল শেখের একটি নলকূপের হাতল সম্প্রতি চুরি হয়। হাতলটি ওই গ্রামের মিন্টু শেখের ছেলে সুমন (১১) এবং ৬নং ওয়ার্ডের মোক্তারপুর গ্রামের কৃষক আলীবার শেখের ছেলে সৌরভ (১১) চুরি করে বিক্রি করে বলে অভিযোগ উঠে। সুমন চার ভাইবোনের মধ্যে ছোট। বাবা মিন্টু শেখ ঢাকায় রিকশা চালান। বাবা-মা ঢাকায় থাকায় সুমন পার্শ্ববর্তী সিরাজ শেখের বাড়ি থেকে ওই বাড়ির কাজকর্ম করে দেন। একই বয়সী হওয়ায় পাশের গ্রামের সৌরভ তার (সুমন) বন্ধু। সৌরভ (১১) ছয় ভাইবোনের মধ্যে চতুর্থ।
হাতল চুরির ওই ঘটনায় নজরুল শেখ (৪০) এবং তার সহযোগী একই গ্রামের আইউব খন্দকারের ছেলে হাসান (৩৫) মঙ্গলবার দুপুরে সুমন ও সৌরভকে নির্যাতন করেন বলে অভিযোগ উঠে। তারা ওয়ার্ড মেম্বার নাজমুল শেখের চাপলডাঙ্গাস্থ চালকলের চাতালে তীব্র রোদের মধ্যে শিশু দুটিকে কয়েক ঘন্টা চিৎ করে শুইয়ে পায়ে লোহার শিকল বেঁধে মেহেগনির বাঠাম ও বাঁশ দিয়ে পিটায়। পায়ে লোহার শিকল বেঁধে পেটানোর এ ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়।
আরও পড়ুন : আফগানিস্তানে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২৪
এদিকে নির্যাতনের বিষয়টি বোয়ালমারী থানা পুলিশ জানতে পেরে নির্যাতনের মূল হোতা নজরুল শেখ ও হাসানকে আটক করে ওই দিনই থানায় নিয়ে আসে। দুই দিন থানায় আটক রাখার পর নির্যাতনকারী শিশুর অভিভাবকদের কোন অভিযোগ না থাকার অজুহাতে বৃহস্পতিবার ধর্তব্য অপরাধ সংঘটনের দায়ে আটককৃত দুই জনকে ফরিদপুর বিজ্ঞ আদালতে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে সৌরভের বাবা আলীবার শেখ আক্ষেপ করে বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, তার কোন অভিযোগ নেই। নজরুল শেখ তার শাস্তি পেয়ে গেছেন। তার খামারের গরুগুলো দুইদিন ধরে না খেয়ে আছে, নিজে মশার কামড় খাচ্ছে।
আরও পড়ুন : সংলাপ নিয়ে ভাবছি না
চাতালের গরম মেঝের উপর শুইয়ে রাখায় এবং পিটানোয় জ্বর হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সৌরভের দাদি জরিনা বেগম। তিনি জানান, নজরুল এবং হাসান দুই জনে মিলে দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত সুমন ও সৌরভকে চড় থাপ্পড় মারেন, ফাঁড়া বাঁশ গলায় চেপে ধরেন এবং মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করেন।
এ ব্যাপারে নির্যাতনের শিকার সুমনের দাদা সিরাজুল শেখ জানান, মেম্বারের ভাই প্রভাবশালী। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়ে কিছু করা যাবে না। তাই অভিযোগ দেয়নি।
এ ব্যাপারে শিশু নির্যাতনের দায়ে অভিযুক্ত নজরুল শেখ থানায় আটক থাকায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। তার ভাই এবং ওই ইউনিয়নের ইউপি সদস্য নাজমুল শেখের বক্তব্যের জন্য তার বাড়িতে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। তার ব্যবহৃত মোবাইল (০১৯৫০৫৭৫৮৫০) ফোনে বারবার ফোন দিলেও দুপুর পর্যন্ত ফোন বন্ধ থাকায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন : মা-ছেলের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার
জানতে চাইলে বোয়ালমারী থানার অফিসার ইন চার্জ মোহাম্মদ আব্দুল ওহাব বলেন, 'এ ঘটনায় দুইজনকে আটক করা হয়েছিল । কিন্তু কারো কোন অভিযোগ না থাকায় মামলা হয়নি। শিশুদের অভিভাবকদের কোন অভিযোগ না থাকায় ধর্তব্য অপরাধ সংঘটনের দায়ে আটককৃত দুই জনকে বৃহস্পতিবার ফরিদপুর বিজ্ঞ আদালতে পাঠানো হয়েছে।
সান নিউজ/এমআর