মো. নাজির হোসেন, (মুন্সীগঞ্জ) : মুন্সীগঞ্জে তাপদাহে জনজীবনে দুর্বিষহ নেমে এসেছে। এরমধ্যে যখন-তখন লোডশেডিংয়ে প্রাণ যায় যায় অবস্থা। সকাল, দুপুর, সন্ধ্যা, রাত বিদ্যুতের যাওয়া আসায় পার হচ্ছে। প্রচণ্ড গরমে সীমাহীন কষ্টের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে এ জেলার মানুষ। এছাড়াও নানা রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধরা। চলছে স্বরণকালের রেকর্ড তাপদাহ।
আরও পড়ুন : মানিকগঞ্জে বাস চাপায় নিহত ১
মুন্সিগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির দেওয়া তথ্য মতে, জেলায় সর্বোচ্চ ১৬৮ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদার বিপরীতে ১০০ থেকে ১৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। ফলে চাহিদা তুলনায় ২০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বিদ্যুতের ঘাটতি দেখা দেয় । এরমধ্যে ভিআইপি জোন লোডশেডিং কমাতে গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিং বেড়েছে কয়েকগুণ। এতে এলাকা বেঁধে প্রতি তিন ঘণ্টা এবং পাঁচ ঘণ্টা পর পর এক ঘণ্টা লোডশেডিং করা হচ্ছে।
সদরের মাঝিকান্দি গ্রামের ইউছুফ ছৈয়াল (১৬) বলেন, রোববার দিবাগত রাতে লোডশেডিংয়ের কারণে ঘুমাতে পারিনি। দিনে সাত-আট ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। সন্ধ্যা পর পড়তে বসা থেকে ভোর রাত পর্যন্ত ৪ থেকে ৫ বার লোডশেডিং হয়েছে। বিদ্যুৎ আসার পর ঘুমাতে চেষ্টা করতে করতে পুনরায় বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। এভাবেই সারারাত পার করতে হয়েছে। নির্ঘুম থাকায় সকাল থেকে শরীর ও লেখাপড়া খারাপ করেছে।
দিঘীরপাড় বাজারের ব্যবসায়ী মারুফ হোসেন (৩০) বলেন, অতিরিক্ত লোডশেডিংয়ের কারণে এখন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সচল রাখাই কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। একদিকে তীব্র গরম, অন্যদিকে বিদ্যুৎ না থাকায় মানুষ কষ্টে ভোগেন। গত শনিবার থেকে সোমবার পর্যন্ত বিদ্যুৎ যাওয়া-আসার মধ্যে রয়েছে। মধ্যরাতেও এই এলাকায় বিদ্যুৎ ছিল না। সেহরির সময় বিদ্যুৎ এসেছিল, আযানের পর আবার চলে যায়।
আরও পড়ুন : জামালপুরে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল জব্দ
আধারা ইউনিয়নের জেসমিন আক্তার (৩৮) বলেন, রোজার মধ্যে বিদ্যুৎ নয়-ছয় শুরু করেছে। সেহরি, ইফতার, তারাবি কোথাও শান্তি পাচ্ছি না। সারাদিনের রোজা রেখে ক্লান্তি শেষে রাতে শিশু সন্তান নিয়ে শান্তিতে ঘুমাবো সেই উপায় নেই। শিশুরা গরমে সারারাত হাঁসফাঁস করে।
মাকহাটি গ্রামের জসিম মোল্লা বলেন, ’দেশে এমন তাপদাহে বৃদ্ধি। রেকর্ড ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা চলছে। বাড়িতে বৃদ্ধ সহ শিশুরা বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এরমধ্যে বিদ্যুতের ভেলকিতে জনজীবনে বিপর্যয় নেমে এসেছে। দৈনিক পাঁচ থেকে আট ঘণ্টা বিদ্যুতে দেখা মিলছে না। তাপদাহ চলাকালীন সময়ে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করার জোর দাবি জানাই।
মুন্সীগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, গত শুক্রবার থেকে লোডশেডিং বেড়েছে। চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ কম পাচ্ছি আমরা। সে অনুযায়ী প্রতিটি এলাকায় লোডশেডিং দিয়ে দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। তবে শহর এলাকায় জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, হাসপাতাল, কারাগার সহ গুরুত্বপূর্ণ এরিয়ায় লোডশেডিং কম দেওয়া হয়। এতে অন্য সব এলাকার ওপর চাপ পড়ে। তখন দেখা যায় কিছু কিছু এলাকায় প্রতি তিন ও পাঁচ ঘণ্টা পর পর এক ঘণ্টা লোডশেডিং হয়।
আরও পড়ুন : ঈশ্বরগঞ্জে উদ্বোধন হলো দৃষ্টিনন্দন মডেল মসজিদ
তিনি আরও বলেন, আমাদের কয়েকটি পাওয়ার প্ল্যান্টে সমস্যা দেখা দিয়েছে। তাই বিদ্যুতের কিছুটা ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। আগামী দুই-তিনদিনের মধ্যে সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। সে সাথে ইদের ছুটিতে অফিস-কলকারখানা বন্ধ হয়ে গেলে চাহিদাও কমে যাবে।
এদিকে, রমজান ও পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যস্ততায় তাপদাহ ও লোডশেডিংয়ের প্রভাব পড়েছে ব্যাপকভাবে। প্রচণ্ড গরমে মধ্যে লোডশেডিংয়ের বেশি ভোগান্তিতে পড়েছে শিশু-বৃদ্ধ ও অসুস্থ রোগীরা। অতিরিক্ত গরমের কারণে ডায়রিয়া, মাথাব্যথা, পানি শূন্যতা, হিটস্ট্রোক সহ জ্বর, সর্দি ও কাশির রোগিরা মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানান চিকিৎসকরা।
মুন্সীগঞ্জ সিভিল সার্জন মঞ্জুরুল আলম বলেন, গত কয়েক দিন ধরে শিশুরা ডায়রিয়া ও পাতলা পায়খানা বেশি বেশি আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আসছে। রবিবার হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে বেশ কয়েকজন মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। তবে তারা সবাই সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরেছেন।
আরও পড়ুন : সাংবাদিকের ওপর হামলা, বিচারের দাবিতে সমাবেশ
তিনি আরও বলেন, ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রা বিরাজ করছে এ বছর। এ তাপদাহ থেকে নিরাপদে থাকতে হবে। ছায়াযুক্ত স্থানে থাকতে হবে। প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। বাহিরে গেলে ছাতা ব্যবহার করতে হবে। নয়তো হিটস্ট্রোক সহ জ্বর, সর্দি, কাশি ও ডায়রিয়া হতে পারে।
সান নিউজ/এসআই