প্রতীকী ছবি
সারাদেশ
সৈয়দপুরে গৃহবধূর আত্মহত্যা

আভিজাত্যের আড়ালে লোমহর্ষক নির্যাতনের কাহিনি

আমিরুল হক, সৈয়দপুর (নীলফামারী): নীলফামারীর সৈয়দপুরে স্বামী-শাশুড়ি, দেবর ও জায়ের নির্যাতনের শিকার জ্যোতি আগারওয়াল (৩৫) নামে এক গৃহবধূ ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যা করেছেন।

আরও পড়ুন: হারাম খেলে দেশের উন্নয়ন হবে না

রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকালে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এ খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে স্বামীসহ পরিবারের লোকজন গা ঢাকা দিয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) ঘুমের ওষুধ খেয়ে গুরুত্বর অসুস্থ হয়ে তিনদিন ধরে হাসপাতালের বিছানায় মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছিলেন দুই সন্তানের জননী ওই অসহায় নারী। তার নিজের হাতে লেখা সুইসাইড নোটে উঠে এসেছে আভিজাত্যের আড়ালে লুকিয়ে থাকা নির্যাতনের লোমহর্ষক অভিযোগ। মৃত গৃহবধূ জ্যোতি মুক্তিযুদ্ধে শহীদ পরিবারের সন্তান ও শহরের সুপরিচিত ব্যবসায়ী সুমিত কুমার আগারওয়াল নিক্কির স্ত্রী।

আরও পড়ুন: ফের মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব

স্থানীয়রা জানান, এক সপ্তাহ আগে দুই পৃষ্ঠার একটি চিঠি লিখে তা ছবি তুলে সৈয়দপুর হিন্দু কমিউনিটির নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের কাছে ম্যাসেঞ্জারসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন জ্যোতি আগারওয়াল। কিন্তু কেউই তার উপর পারিবারিক অত্যাচারের বিষয়ে সুরাহা করতে এগিয়ে না আসায় গত বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে অস্বাভাবিক পরিমাণে ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।

শহীদ বদিউজ্জামান সড়ক এলাকায় ভাড়া বাড়িতে এই ঘটনায় গুরুত্বর অসুস্থ অবস্থায় পরিবারের সদস্যরা টের পায়। কিন্তু তাৎক্ষণিক হাসপাতালে না নিয়ে পারিবারিকভাবে চিকিৎসা করতে থাকে নিক্কির ছোট ভাই অমিত কুমার আগারওয়ালার স্ত্রী ডা. অমৃতা কুমারী আগারওয়াল। কিন্তু অবস্থার অবনতি হলেও গুরুত্ব দেয়া হয়নি।

আরও পড়ুন: যুদ্ধের ফাঁদে ফেলতেই উস্কানি

শুক্রবার পরিস্থিতি বেগতিক হওয়ায় বাধ্য হয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। গত তিনদিন থেকে সেখানে নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছিলেন।

ঘুমের ওষুধ খাওয়ার আগে ডায়েরির পাতায় লেখা দুই পৃষ্ঠার ওই সুইসাইড নোটে জ্যোতি তার মৃত্যুর জন্য চারজনকে দায়ী করে তাদের নাম উল্লেখ করেছেন। তারা হলেন, স্বামী সুমিত কুমার, শ্বাশুড়ি উমা দেবী, দেবর অমিত কুমার ও জা ডা. অমৃতা কুমারী। এক্ষেত্রে তার দুই সন্তান একেবারে নির্দোষ বলেও তুলে ধরেছেন।

আরও পড়ুন: খালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ বাড়ল

সুইসাইড নোটে তিনি লিখেছেন, আমার বিয়ে হয়েছে ২০০১ সালের ১২ ডিসেম্বর। বিয়ের পর থেকেই শ্বাশুড়ি ও স্বামী-দেবর মানসিক নির্যাতন করছে। দেবরের বিয়ের পর জা অমৃতাও তাদের সাথে যোগ দিয়ে অত্যাচার চালিয়ে আসছে। এরা আমাকে চার বার মেরে ফেলার চেষ্টাও করেছে। বেঁচে আছি সেটা আমার ভাগ্য।

আমাকে সাজিয়ে মিথ্যে বলে আমার গয়না ও জমানো টাকা নিয়েছে তারা। ফেরত দিবে বলে আজও দেয়নি। বরং টাকা ও গয়নার কথা বললেই অত্যাচারের মাত্রা বাড়ায়। গায়েও হাত তুলেছে সবাই মিলে। আমার মা বাবা নেই। ভাই বোনদের জন্য বেঁচে ছিলাম। কে জানতো ওরা আমাকে মেরে ফেলবে? তাহলে তো ভাই-বোনরা ছেড়ে দিত না।

আরও পড়ুন: পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার না করার অনুরোধ

শ্বাশুড়ি উমা দেবী আমাকে কখনো দেখতে পারেনি, ভালও বাসেনি। আমার সংসার ভাঙার পেছনেও তার হাত রয়েছে। তিনি উল্টাপাল্টা বলে তার ছেলে সুমিতের কান ভরতো। এমনকি আমার বাচ্চা দুটোকেও এরা ভয় দেখিয়ে রাখে। এ কারণে তারা কিছু বলতে পারেনা। বাচ্চাদের রক্ষার জন্যও আকুতি জানিয়েছেন জ্যোতি।

জ্যোতি আরও লিখেছেন, মানুষ মৃত্যুর সময় কখনও মিথ্যে বলে না। বিশ্বাস না হলে কাজের লোক ও পাড়া প্রতিবেশীদের জিজ্ঞেস করে দেখবেন। আমার শ্বাশুড়ি অনেক অত্যাচার করেছে। ২১ বছর ধরে আমি শুধু কাঁদছি। এরা কখনই সুখের দিন দেখতে দেয়নি। আমার মৃত্যুর বিচার চাই।

আরও পড়ুন: ধেয়ে আসছে ভয়ংকর ঘূর্ণিঝড় ‘নানমাডল’

জ্যোতি আগারওয়ালের বাবার বাড়ি নারায়ণগঞ্জ। তার স্বামী সুমিত কুমার আগারওয়াল নিক্কি সৈয়দপুর উপজেলা হিন্দু কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের সিনিয়র সহ-সভাপতি। তিনি সৈয়দপুরের সুনামধন্য দানবীর ও মুক্তিযুদ্ধের শহীদ তুলশীরাম আগারওয়ালার নাতি ও প্রখ্যাত শিল্পপতি সুশীল কুমার আগারওয়ালার বড় ছেলে।

এই ঘটনায় শহরজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে এবং সুইসাইড নোটের কথাগুলো ছড়িয়ে পড়ায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। মারোয়াড়ী ব্যবসায়ী মহলসহ শিল্পপতি ও রাজনৈতিক অঙ্গন এবং সাধারণ মানুষের মাঝেও সমালোচনার ঝড় তুলেছে পারিবারিক নির্যাতন ও আত্মহননের বিষয়টি। তবে সকলে আশা করেছিলেন জ্যোতি সুস্থ হয়ে তার সন্তানদের কাছে ফিরে আসবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর কাছে হেরে গেলেন তিনি।

আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর প্রতি রাজার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ

শনিবার জ্যোতির স্বামী সুমিত কুমার আগারওয়াল নিক্কি মোবাইলে বলেন, সুইসাইড নোট বলে যে উড়ো চিঠির কথা প্রচার করা হচ্ছে তা সঠিক নয়। কারণ এটি আমার স্ত্রীর লেখা নয়। তার হাতের লেখার সাথে কোন মিল নেই। কিভাবে প্রমাণ করবেন যে চিঠিটা জ্যোতি লিখেছে।

এদিকে, জ্যোতির মৃত্যুর খবর পেয়ে পরিবারের সবাই গা ঢাকা দিয়েছে। গতকালকেও স্বামী সুমিত কুমার ও জা ডা. অমৃতা কুমারীর মোবাইল চালু ছিল। এখন সবার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। তাদের বাড়িতে গিয়েও কাউকে পাওয়া যায়নি। পুলিশও বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, চেম্বারে ঢু মারলেও সব বন্ধ ছিল। একটি সূত্র মতে অমৃতার বাবার বাসায় তারা লুকিয়ে আছে নয় তো ভারতে চলে গেছে।

আরও পড়ুন: পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার না করার অনুরোধ

এ ব্যাপারে সৈয়দপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, মৃত্যুর খবর শুনেছি। তবে এখনও কোন অভিযোগ পাইনি। মৃত জ্যোতির ভাই মোবাইল জানিয়েছেন লাশসহ সৈয়দপুরে আসছেন। তিনি অভিযোগ দিলে আসামীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান ওসি।

সান নিউজ/কেএমএল

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

আড়িয়ল ইউপিতে উপ-নির্বাচন

মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি:

খাগড়াছড়িতে গৃহকর্মীকে জিম্মির অভিযোগ 

আবু রাসেল সুমন, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধিঃ

রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি দিবস

সান নিউজ ডেস্ক: আজকের ঘটনা কাল অতীত। প্রত্যেকটি অতীত সময়ের স...

কার্বণ মিল ও সীসা কারখানা বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন

কামরুল সিকদার, বোয়ালমারী প্রতিনিধি:

বঙ্গোপসাগরে কার্গো জাহাজ ডুবি

জেলা প্রতিনিধি : নোয়াখালী জেলার হ...

যেকোনো উপায়ে ক্ষমতায় আসতে মরিয়া বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিএনপি যেকোনো উ...

মাটি খোঁড়ার সময় উদ্ধার মাইন-মর্টারশেল

জেলা প্রতিনিধি: নীলফামারীতে পুকুর খননের সময় উদ্ধার দুইটি মাই...

ভুমি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিঃ ঠাকুরগাঁওয়ের...

আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের এক সদস্য গ্রেফতার

জেলা প্রতিনিধি: নরসিংদীর বেলাব থানার নারায়ণপুর ইউপির দুলালকা...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা